নামটা বক্সিং ডে। খ্রিস্টধর্মের সবচেয়ে বড় উৎসব ক্রিসমাসের পরেই বক্সিং বা কুস্তির লড়াই কেন, এমন একটা প্রশ্ন আসতেই পারে। তবে কুস্তিলড়াই না, বক্সিং ডে মূলত বড়দিনের ছুটি আরও বেশি ছড়িয়ে দেয়ার এক উদ্যোগ।  ক্রীড়াজগতে বেশ জনপ্রিয় এক শব্দযুগল এটি। মূলত ছুটির আমেজকে আরও রাঙিয়ে দিতেই বক্সিং ডেতে থাকে খেলাধুলার বড় এক আয়োজন। 

তাতে অবশ্য ক্রিকেট, ফুটবল, হ্যান্ডবল বা ঘোড়দৌড়ের সম্পর্কই বেশি। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে ক্রিকেট আর ফুটবলই বক্সিং ডে ফিক্সচার সবচেয়ে বেশি মাতিয়ে রাখছে। আর এর ইতিহাসটাও বেশ পুরাতন। আজ যেখানে ভারত-অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট ম্যাচ চলছে, সেই মেলবোর্নে ১৯৫০ সাল থেকেই চলছে বক্সিং ডে’র ম্যাচ আয়োজন। আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এর শুরু ১৯৬৮ সাল থেকে। 

বক্সিং ডে ঘিরে মানুষের আগ্রহটাও থাকে তুঙ্গে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে বড় দলগুলোর খেলা অন্তত এই দিনে রাখার চেষ্টা করে এফএ কর্তৃপক্ষ। আবার অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় ৫৪ বছর ধরে এই দিনে টেস্ট বা ওয়ানডে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকাও এদিন সেঞ্চুরিয়নে আয়োজন করে টেস্ট ম্যাচের। নিউজিল্যান্ডের পক্ষ থেকেও চেষ্টা করা হয় ম্যাচ আয়োজনের। 

বক্সিং ডে কী? 

প্রথাগতভাবে বক্সিং ডে বলতে বোঝানো হয় ক্রিসমাস বা বড়দিনের পরের দিনটিকে। ক্যালেন্ডারের তারিখ অনুযায়ী যা ২৬ ডিসেম্বর। মূলত এদিন সম্ভ্রান্ত এবং সামর্থ্যবান গৃহস্থরা বক্সে ভরে তাদের গৃহপরিচারকদের উপহার দিতেন। বক্সে ভরে দেওয়ার রীতি থেকেই নাম হয়ে যায় বক্সিং ডে। 

মূলত বক্সিং ডের এমন সূচনা করেন রাণী ভিক্টোরিয়া। এরপর থেকেই কমনওয়েলথভুক্ত দেশে, কালের বিবর্তনে  ধীরে ধীরে এর পরিধি বাড়তে থাকে। খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সামর্থ্যবানেরা বক্স করে নিজ পরিচারকের বাইরে আশপাশের গরিব-দুঃখীদের মাঝে বিভিন্ন উপহার ও টাকা-পয়সা বিতরণ শুরু করেন। এরপর চার্চের বাইরে রাখা বাক্সে দান বা অনুদান সংগ্রহ করা হয় গরিবদের মাঝে বিতরণের উদ্দেশ্যে। এভাবেই ২৬ ডিসেম্বর হয়ে যায় ‘বক্সিং ডে’।

বক্সিং ডে’র আয়োজন এবং মেলবোর্ন 

প্রতিবছর ২৬ ডিসেম্বর বক্সিং ডেতে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত হয় বিখ্যাত বক্সিং ডে টেস্ট। অস্ট্রেলিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া সফরে থাকা দলের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে এই বক্সিং ডে টেস্ট। ঐতিহাসিকভাবে বক্সিং ডেতে ভিক্টোরিয়া এবং নিউ সাউথ ওয়েলসের মধ্যে শেফিল্ড শিল্ডের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হতো। সেটাও হতো মেলবোর্নে। ১৯৬৮ সাল থেকে অনেকটাই জাতীয় দল নির্ভর হয়ে যায় এই আয়োজন। 

১৯৮০ সাল থেকে প্রতিবছর নিয়ম করে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই বক্সিং ডে টেস্ট ম্যাচ। সেবছরই মেলবোর্ন ক্রিকেট ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি করে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। এরপর থেকে বক্সিং ডের ম্যাচ আয়োজনের দায়িত্ব পায় মেলবোর্ন। মাঝে কেবল ১৯৮৯ সালে বক্সিং ডেতে টেস্ট ম্যাচের পরিবর্তে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে একটি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিল অস্ট্রেলিয়া। আর প্রতি চার বছর অন্তর অ্যাশেজের একটি ম্যাচ বক্সিং ডেতে হয়ে থাকে। যে ধারায় আজ ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামছে অস্ট্রেলিয়া। 

নিউজিল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় বক্সিং ডে

অস্ট্রেলিয়া ছাড়াও বক্সিং ডে পালন করে থাকে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নিউজিল্যান্ড। একসময় ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভে নিয়ম করে বক্সিং ডে টেস্ট আয়োজন করা হতো। তবে কিউইরা আপাতত সেই প্রথা থেকে অনেকটা সরে এসেছে। এখন ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি আয়োজন করা হয়। দক্ষিণ আফ্রিকাও বক্সিং ডে টেস্ট শুরু করে দিয়েছে। এবারে সেই ম্যাচে পাকিস্তান খেলবে সেঞ্চুরিয়ন টেস্ট। 

যদিও নিউজিল্যান্ডে এবারে কোনো ম্যাচ থাকছে এই দিনে। অস্ট্রেলিয়া নারী দলের বিপক্ষে সিরিজ শেষ হয়েছে ২৩ তারিখে। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচ ২৮ তারিখ। 

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ 

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগেও বেশ ঘটা করেই পালন করা হয় বক্সিং ডে ফিক্সচার। ইংলিশ লিগ কর্তৃপক্ষ এদিন অন্তত দুই থেকে তিনটি বড় ম্যাচের আয়োজন রাখে নিজেদের মাঝে। কখনো কখনো বিগ সিক্সের পারস্পরিক ম্যাচও রাখা হয় এদিন। যদিও এবারে খুব একটা বড় ম্যাচ রাখা হয়নি। 

অবশ্য বড় দলগুলো সবাই মাঠে নামছে। ম্যানচেস্টার সিটি খেলবে এভারটনের বিপক্ষে, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ম্যাচ উলভারহ্যাম্পটনের বিপক্ষে। মাঠে নামবে চেলসি ও টটেনহাম। সবচেয়ে বড় ম্যাচ বলা যেতে পারে লেস্টার সিটি এবং লিভারপুল। 

তবে শুধু প্রিমিয়ার লিগেই না, সব ক্লাবের সব সমর্থকের কথা মাথায় রেখে, এদিন সব স্তরের লিগই চালু রাখে এফএ। আগামীকালের সূচিতে ইংল্যান্ডের সকল স্তরেই চলবে বেশ কিছু বড় ম্যাচ। মূলত ছুটিতে থাকা দর্শকদের আমেজ বাড়াতেই এমন আয়োজন। যদিও ইউরোপের অন্যান্য লিগে ছুটিই বহাল থাকছে। জার্মানি, স্পেন কিংবা ইতালিয়ান লিগে বক্সিং ডে এমন ঘটা করে পালন করা হয়না। 

জেএ