দেশের অন্যতম দুই জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী ক্লাব আবাহনী ও মোহামেডান। তিন শীর্ষ ফেডারেশন ফুটবল, ক্রিকেট ও হকিতে এই দুই ক্লাবের কর্মকর্তাদের প্রাধান্য-আধিপত্যই বেশি। গত এক যুগে শীর্ষ ফেডারেশনের নির্বাচনে অন্যতম প্রভাবক ছিল আবাহনী ক্লাব। প্যানেল নির্ধারণ, প্রার্থী জয়-পরাজয়ে রেখেছে বড় ভূমিকা। মোহামেডান খেলার মাঠের মতো ফেডারেশনের নির্বাচনেও আবাহনীর ছায়া হয়েই থেকেছে। আসন্ন বাফুফে নির্বাচনে অবশ্য ভিন্ন চিত্র। মোহামেডানের সাবেক খেলোয়াড় ও সংগঠক অনেকে প্রার্থী হয়েছেন। সেখানে আবাহনী থেকে সত্যজিৎ দাশ রুপু ছাড়া সেই অর্থে আর কেউ নেই।

বাফুফে নির্বাচন উপলক্ষ্যে মোহামেডান একটি অনুষ্ঠান করেছে। সেখানে সহ-সভাপতি দুই প্রার্থী সাবেক দুই তারকা ফুটবলার শফিকুল ইসলাম মানিক, সৈয়দ রুম্মন বিন ওয়ালী সাব্বিরের পাশাপাশি ছিলেন সদস্য প্রার্থী মঞ্জুরুল করিম, রিয়াজ, জাকির হোসেন চৌধুরি, ছাইদ হাসান কানন। সহ-সভাপতি প্রার্থী ফাহাদ করিম ও সদস্য প্রার্থী আমিরুল ইসলাম বাবুও মোহামেডানের স্থায়ী কমিটির সদস্য। 

মোহামেডানের সাবেক ফুটবলার ও কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক বলেন, বাফুফেতে সদস্যদের কাজ করার জন্য আলাদা কক্ষ নেই। আমরা যদি নির্বাচনে জিততে পারি, সদস্য এবং কাউন্সিলরদের জন্য বসার পরিবেশ থাকবে।

বাংলাদেশের ফুটবলে অন্যতম কিংবদন্তী ফুটবলার সৈয়দ রুম্মন বিন ওয়ালী সাব্বির বলেন, আমাকে বেছে নিলে তৃণমূল ও জেলা ফুটবল লিগ, স্কুল ফুটবল, শের-ই-বাংলা কাপ, সোহরাওয়ার্দী কাপ এসব চালু রাখার পরিকল্পনা আছে। প্রিমিয়ার লিগে ঢাকা থেকে বাইরে নেওয়া হয়েছে। দল সংখ্যা কমপক্ষে ১৬ করতে হবে যেখানে ৪৮০ ফুটবলার খেলবে। সেখান থেকে সেরা ৫০ জন কী খুঁজে পাব না? আমাদের ফুটবল র‍্যাংকিং ১৫০ এর নিচে নিয়ে আসা সম্ভব৷ আপনাদের কাছে দোয়া ও সমর্থন চাই।

মোহামেডানের প্রার্থীদের বক্তব্যদের পর মঞ্চে ডাকা হয় অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্য প্রার্থীদেরও। আজকের অনুষ্ঠানে ছিলেন আবাহনীর ম্যানজোর সত্যজিৎ দাশ রুপু। তার নেতৃত্বে অন্য প্রার্থীদের মঞ্চে ডেকে পরিচিত হয়ে ভোট চেয়েছেন। মোহামেডানের এই সৌহার্দ্যতায় বেশ অভিভূত রুপু বলেন, মোহামেডান ক্লাবের এমন আয়োজনে আমার ব্যক্তিগত ও আবাহনী ক্লাবের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই।

বাফুফে নির্বাচনে সিনিয়র সহ-সভাপতি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান। তিনি দেশের একটি শীর্ষ ক্লাবের সভাপতি হলেও পাড় মোহামেডানের সমর্থক। ফুটবলের অধপতেনর জন্য তিনি খানিকটা মোহামেডানকেও দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, আমি ছোটবেলা থেকে মোহামেডানের সমর্থক। স্কুল পালিয়ে খেলা দেখেছি। অনেকেই বলেছেন, জাতীয় দলের মান কমেছে, জনপ্রিয়তাও কমেছে। আমি মনে করি মোহামেডানকেই এর দায় নিতে হবে। মোহামেডান পিছিয়ে পড়ায় একতরফা হয়ে গেছে মোহামেডান-আবাহনী দ্বৈরথ। ফুটবলকে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব মোহামেডানকেই নিতে হবে। আরেকটা বিষয়, এখানে পরিচিত করে দেওয়া একজন যদি আমাকে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করেন, সেটা আমার জন্য ভীষণ বিব্রতকর।

ফুটবলের এই অনুষ্ঠানে এসেছিলেন মোহামেডান ও বিসিবির পরিচালক মাহবুব আনাম। তিনি বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবল। সেটা আমাদের এখানে নানা কারণে পিছিয়ে। সম্মিলিত চেষ্টায় দেশের সর্বত্র খেলা ছড়িয়ে দিতে পারলে এর উন্নয়ন সম্ভব।

ক্রিকেট বোর্ডের দুর দিন নিয়ে তিনি বলেন, একসময় ক্রিকেট বোর্ডের কোচের অর্থ দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না। বিজিএমইএ থেকে ক্রিকেট বোর্ডের কোচের বেতন দেওয়া হয়েছে। ক্রিকেট এখন মান উন্নয়ন হয়েছে, অনেক অর্থ। ক্রিকেটারদের অনেকেই এখন প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আসেন। ফুটবলকেও প্রত্যন্ত জায়গায় যেতে হবে।

অনুষ্ঠানের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন মোহামেডানের ফুটবল কমিটির প্রধান ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর। তিনি মোহামেডানের প্রার্থীদের জন্য ভোট ও দোয়া চেয়েছেন। যোগ্য প্রার্থীদের হাতে আগামী চার বছরের জন্য ফুটবল পরিচালনা করার দায়িত্ব অর্পণের অনুরোধ করেছেন। এর পাশাপাশি ফুটবল উন্নয়নের জন্য লিগে সঠিক রেফারিং দাবি করেছেন।

এই অনুষ্ঠানে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সভাপতি ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালামও ছিলেন। তিনি বলেন, ক্রীড়াঙ্গনে রাজনীতি করাটা ক্ষতিকর। এই রাজনীতিই ফুটবলকে ধ্বংস করেছে। আগে রাজনীতি ছিল না। গত ১৫ বছর সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখা যায়নি বলেই ক্ষতি হয়েছে। ফুটবলকে সামনে নিয়ে যেতে হলে প্রকৃত ক্রীড়াপ্রেমীদের দায়িত্ব দিতে হবে। মানসিকভাবে রাজনৈতিক চিন্তা চেতনা থাকতে পারে। কিন্তু খেলায় সেই পরিচয় মূখ্য নয়। মোহামেডান আমার প্রাণের ক্লাব। দল গঠনে রাজনীতি দেখিনি। দেখেছি আবাহনীতে কারা ভালো খেলেছে তাদের আনতে হবে।

এজেড/এফআরএস