ক্রীড়াঙ্গনে অঘোর মন্ডলকে স্মরণ
বিশিষ্ট ক্রীড়া সাংবাদিক অঘোর মন্ডল দুনিয়া ত্যাগ করেছেন গত ২৫ সেপ্টেম্বর। এক সপ্তাহ পর বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্টস এসোসিয়েশন প্রয়াত সদস্যের জন্য স্মরণসভার আয়োজন করে। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামস্থ বিএসজেএ কার্যালয়ে সাংবাদিক, সাবেক ক্রীড়াবিদ ও সংগঠকরা অঘোর মন্ডলকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন। তার দুই কন্যা অরুণিমা ও অর্পিতা মন্ডলও উপস্থিত ছিলেন সেই সভায়।
তিন দশকের পেশাগত জীবনে অঘোর মন্ডলের বেশ ঘনিষ্ঠজন ছিলেন বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের প্রথম অধিনায়ক ও জাতীয় দলের বর্তমান প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। অঘোর সম্পর্কে লিপু বলেন, ‘অঘোর অসাধারণ রিপোর্টার এটা আমাদের সবারই জানা। দেশে-বিদেশে তার নেওয়া অনেকের সাক্ষাৎকারে ক্রীড়াঙ্গন ঋদ্ধ হয়েছে। আমরা ক্রীড়াবিদরা নানা মাধ্যমে প্রশংসিত হই। কিন্তু সাংবাদিকরা হয় কি? আমাদের এমন কোন প্লাটফর্ম নেই যার মাধ্যমে আমরা সাংবাদিকদের সম্মান দিতে পারি।’
বিজ্ঞাপন
অঘোরের স্মরণসভায় এসেছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম কিংবদন্তি ফুটবলার শেখ মো. আসলাম। তার সঙ্গেও ছিল অঘোরের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। তিনি স্মৃতিচারণে বলেন, ‘সে বাংলাদেশে অন্যতম খ্যাতনামা ক্রীড়া সাংবাদিক। তার শূন্যতা আমরা অনুভব করি। তার আদর্শ ক্রীড়া সাংবাদিকদের ধারণ করা দরকার।’
অঘোর মন্ডলের সঙ্গেই ক্রীড়া সাংবাদিকতায় পেশাগত জীবন শুরু আরিফুর রহমান বাবুর। বন্ধুকে নিয়ে এত দ্রুত এভাবে বক্তব্য রাখতে হবে ভাবতেও পারেননি বাবু, ‘এত দ্রুত অঘোর দা আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। আমার সুদীর্ঘকালের বন্ধু সবসময় অনুভবে থাকবে।’ দৈনিক দেশ রূপান্তরের সম্পাদক মোস্তফা মামুনের পেশাগত জীবন শুরু হয়েছিল ক্রীড়া সাংবাদিকতা নিয়ে। তার ক্যারিয়ারে শুরুর দিক নিয়ে অঘোর মন্ডলকে নিয়ে স্মরণ করলেন এভাবে, ‘অনেকে ক্রিকেটের সেরা বিশ্লেষক, সেরা লেখক হতে পারে। বাংলাদেশের ক্রিকেটের সেরা রিপোর্টার আমার দৃষ্টিতে অঘোর মন্ডল। অনেকদিন শঙ্কায় থাকতে হয়েছে অঘোর দা কী রিপোর্ট করছে। অঘোর দা একদিকে সতীর্থ, একদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী, আরেক দিকে বন্ধুবর।’ জাতীয় দলের সাবেক তারকা ফুটবলার আব্দুল গাফফার বেশ কাছ থেকে দেখেছেন অঘোর মন্ডলকে। তিনি অঘোর মন্ডল সম্পর্কে বলেন, ‘অঘোর ক্রীড়াঙ্গনের অকৃত্রিম বন্ধু। অনেক সংকটে আমাদের পরামর্শ দিয়েছে।’
অঘোর মন্ডলের মেয়ে অরুণিমা মন্ডল বাবাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন। পেশাগত জীবনের মতো ব্যক্তিগত জীবনেও অঘোর একই রকম ছিলেন, ‘আপনাদের মুখে যা শুনলাম তিনি নিউজের জন্য খুব সচেতন ছিলেন। বাসাতেও তিনি আমাদের বিভিন্ন শব্দ চয়নের ভুল ধরতেন। আমার একটি ফুড ব্লগিং রয়েছে সেখানেও বিভিন্ন বিষয়ে অসঙ্গতি তিনি তুলে ধরতেন।’ অঘোর সর্বশেষ এটিএন নিউজে কর্মরত ছিলেন। এটিএন নিউজের প্রধান বার্তা সম্পাদক শহিদুল আজমও বিশিষ্ট ক্রীড়া সাংবাদিক। তিনি ক্রীড়া সাংবাদিকের বাইরে অন্য অঘোরকেও দেখেছেন, ‘অঘোরকে আমি সাহিত্য, রাজনীতি বিভিন্ন বিষয়ের পারদর্শী হিসেবে পেয়েছি।’
অঘোর মন্ডলের প্রণীত প্রতিবেদনের সংকলন প্রকাশের দাবি জানিয়েছ সাংবাদিক আরাফাত জোবায়ের বলেছেন, ‘তার ভাবনার জগত ছিল ভিন্ন। যা আমাদের জন্য অত্যন্ত শিক্ষণীয়। তার বিশেষ রিপোর্ট সংকলন হলে নতুন প্রজন্মের জন্য পাথেয় হবে। একজন রিপোর্টার কিভাবে রিপোর্টার হতে পারেন অঘোর দাদার জীবন অনুসরণ করলেই তা বোঝা যায়।’
বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্টস এসোসিয়েশনের এই স্মরণসভায় সঞ্চালনা করেন সহ-সভাপতি রায়হান আল মুঘনি। বিএসজেএ সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান অঘোর মন্ডলের পরিবারের পাশে থাকার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
এজেড/এএইচএস