ভারত যেন ভাঙা বিয়ে বাড়ি
খেলা শেষ হওয়ার আগেই অনেকে স্টেডিয়াম ছেড়ে চলে যাচ্ছিলেন। ভারতের হার যেন তখন সময়ের অপেক্ষা কেবল। যেই আহমেদাবাদ সকালেও ছিল উৎসবমুখর, রাত নামতেই সেটিই যেন শ্মশান। চারদিকে সুনসান নীরবতা। গোটা ভারতজুড়েই ভর করেছে রাজ্যের নীরবতা। যেন ভাঙা বিয়ে বাড়ি।
বিশ্বকাপের ফাইনালে স্বাগতিকদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠছিলেন এক হেড (ট্রাভিস হেড)। শেষ পর্যন্ত তার সেঞ্চুরিতেই শিরোপার স্বপ্নভঙ্গ হয় ভারতের। অবশ্য আরেকটু পেছনে ফিরে দেখলে প্রথম ইনিংসে এই হেডই বিধ্বংসী হয়ে ওঠা রোহিত শর্মার অবিশ্বাস্য এক ক্যাচ তালুবন্দী করেছেন। অনেকের চোখে ম্যাচের মোমেন্টাম ওই এক ক্যাচ।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন
ঘরের মাঠের বিশ্বকাপের ফাইনালে লড়বে স্বাগতিক দল। আসরজুড়ে দুর্দান্ত ছন্দে থাকা ভারতের সামনে এক যুগ পর শিরোপার হাতছানি। ক্রিকেট পাগল দেশটিতে ম্যাচটি নিয়ে তাই উন্মাদনার কোনো কমতি ছিল না। ফাইনালকে কেন্দ্র করে উত্তরপ্রদেশের ফরিদাবাদের একটি স্কুলের আজকের (রোববার) পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া হয়। দেশজুড়ে বাড়ি-মন্দিরে চলে বিশেষ প্রার্থনা। মোহাম্মদ শামির গ্রামের বাড়িতে আয়োজন করা হয় বিশেষ দোয়া মোনাজাতের।
ফাইনালের মহারণের ভেন্যু আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামেও রোববার নীল সমুদ্রে রূপ নিয়েছিল। জিতেগা ভারত স্লোগানে প্রকম্পিত হচ্ছিল দৈত্যাকার মাঠ। শুধু কি মাঠ? সারা ভারতেরই এদিন যেন কাঁপছিল ক্রিকেট জ্বরে। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এই স্টেডিয়ামে দর্শক ধারণক্ষমতা এক লাখ ত্রিশ হাজারের মতো। তবে আরও এমন দুচারটা স্টেডিয়ামের সমান আসন থাকলেও হয়তো কানায় কানায় পূর্ণ থাকতো গ্যালারি।
ফাইনালের দিন দুই তিনেক আগে থেকেই লোকাল মিডিয়ায় ছাপা হচ্ছিল, টিকিটের হাহাকারের খবর। দশ হাজার রূপির টিকিট বিকচ্ছে নাকি লাখ টাকায়। তবুও মিলছিল না যে কাঙ্ক্ষিত সোনার হরিণ নামক ওই টিকিট। আহমেদাবাদে ভারতের শিরোপা জয়ের সাক্ষী হতে দেশটির বিভিন্ন প্রদেশ থেকে অনেক ঝড় ঝাপটা পেরিয়ে মাঠে এসেছিলেন সমর্থকরা। রোহিতদের জন্য প্রস্তুত ছিল মঞ্চ। মাঠে চলে এসেছিলেন খোদ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। চ্যাম্পিয়ন দলকে বরণে রাখা হয় নানা আয়োজন। তবে সবকিছুতেই ভারত শেষ পর্যন্ত থেকেছে নীরব দর্শক হয়ে। তাদের সামনে বুনো উল্লাসে মেতেছে অস্ট্রেলিয়া।
এদিন খেলা যত গড়িয়েছে স্টেডিয়াম তত শান্ত হয়েছে কেবল। বিখ্যাত ধারাভাষ্যকার ও সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটার নাসের হুসেইন তো বলেই ফেললেন মনে হচ্ছে ফাঁকা মাঠে ফাইনাল হচ্ছে। আসলে রোহিতদের ফাইনালের খেলা মন ভরাতে পারেনি তাদের সমর্থকদের। কলকাতা থেকে অনেক ভোগান্তি নিয়ে মাঠে খেলা দেখতে গিয়েছিলেন এক বাঙালী। পরে গণমাধ্যমে বলেন, প্লেন বিলম্ব, সকাল থেকে না খাওয়া। এরপর অমন খেলা মানতে পারছি না কোনোভাবেই।
ভারতকে পরিচয় করানো যেতে পারে উৎসবের দেশ হিসেবে। একবার ভাবুনতো যদি রোহিত-কোহলিরা বিশ্বকাপ জিততো আজ ভারতের দেড়শ কোটি মানুষের কেউ ঘুমাতো? স্টেডিয়ামের বাইরে অনেকেই আতশবাজি পটকা জমিয়ে রেখেছিলেন। ভারত জিতলে সব ওড়ানো হবে। শেষ পর্যন্ত বাজি ফাটাবেন তবে স্বপ্নভঙ্গের বেদনা নিয়ে।
এফআই/এসকেডি