ক্রিকেট বিশ্বকে স্তব্ধ করে দিয়ে চলে গেলেন জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক হিথ স্ট্রিক। বুধবার সকালে এমনই এক গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছিল ক্রিকেট দুনিয়াতে। ৪৯ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার ক্যান্সারের সঙ্গে লড়ছেন, এ খবর আগেই জানা হয়েছিল। মে মাসে খবর বেরিয়েছিল, লিভার এবং কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত তিনি। ডাক্তারের পক্ষ থেকে জানা যায় হিথ স্ট্রিকের বাঁচার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। এমনসব তথ্যের ভিত্তিতেই মূলত সত্য বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল সেই খবর। 

একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বলা হয়েছিল, দক্ষিণ আফ্রিকায় মৃত্যু হয় তার। শেষ সময়ে তার পাশে ছিল পরিবার এবং কাছের বন্ধুরা। বুধবার সকালে হিথ স্ট্রিকের সাবেক সতীর্থ হেনরি ওলেঙ্গা প্রথম নিশ্চিত করেন তার মৃত্যুর খবর। পরে অবশ্য ওলোঙ্গা নিজেই দাবি করেছেন হিথ স্ট্রিক বেঁচে আছেন। 

ওলোঙ্গা তার ফেসবুকে হিথ স্ট্রিকের মৃত্যু সংক্রান্ত খবরটি বারবারই সম্পাদনা করেছেন। তবে, সবশেষ প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, মারা যাননি এই ক্রিকেট কিংবদন্তি। খবর চাউর হবার চার ঘন্টার পরেই জানা গেল আগের খবরটি নিছকই ভুল বোঝাবুঝি। এদিকে মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হবার পরেই শোকবার্তা জানিয়েছেন সাবেক এবং বর্তমান ক্রিকেটারদের অনেকেই। 

জিম্বাবুয়ের সাবেক এই পেস বোলার বাংলাদেশ জাতীয় দলের সঙ্গেও কাজ করেছেন লম্বা সময় ধরে। আফ্রিকান দেশটির সর্বকালের সেরা বোলার তিনি। জিম্বাবুয়ের হয়ে ১০০ উইকেট শিকার করা প্রথম বোলার তিনি। দেশটির হয়ে টেস্টে ২০০ উইকেট শিকার করা একমাত্র বোলার স্ট্রিক। এমনকি তাদের হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় সপ্তম স্থানে আছে তার নাম। 

স্ট্রিক জিম্বাবুয়ের হয়ে ৬৫টি টেস্ট এবং ১৮৯টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন। বল হাতে খ্যাতি পেলেও একজন অলরাউন্ডার হিসেবেই তাকে মনে রাখবে ক্রিকেট বিশ্ব। জিম্বাবুয়ের জার্সিতে সর্বোচ্চ উইকেট দখলের কীর্তিও তারই। ৪৫৩ উইকেট নিয়ে সবার ওপরেই আছেন তিনি। সেইসঙ্গে ব্যাট হাতে করেছেন ৪ হাজার ৯৩৩ রান। 

২০০০ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ছিলেন দলের অধিনায়ক ছিলেন স্ট্রিক। অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার, গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ার, হেনরি ওলেঙ্গাদের নিয়ে জিম্বাবুয়েকে বিশ্ব ক্রিকেটের নামি মুখ করে তোলার পেছনে অন্যতম কারিগর ছিলেন এই পেসার।

টেস্টে ২২.৩৫ গড়ে হিথ স্ট্রিকের সংগ্রহ ১৯৯০ রান। এই ফরম্যাটে ২৮.১৪ গড়ে ২১৬ উইকেট নিয়েছেন। সাদা বলের ক্রিকেটে তার রান ২৯৪৩ রান, সেইসঙ্গে আছে ২৩৯টি উইকেট। 

২০০৫ সালে ক্রিকেট থেকে অবসরে যান তিনি। এরপর যুক্ত হয়েছিলেন কোচিং পেশার সঙ্গে। বাংলাদেশ জাতীয় দলের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। হালের মুস্তাফিজুর রহমান এবং তাসকিন আহমেদকে বিশ্বমঞ্চে নিয়ে আসার কারিগরও তিনি। এছাড়া দুই দফায় (২০০৯-১৩ এবং ২০১৬-১৮) ছিলেন জিম্বাবুয়ের কোচ। ২০১৮ সালে ছিলেন আইপিএল এর দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের সঙ্গে। 

যদিও কিংবদন্তি এই অলরাউন্ডারের শেষটা সুখকর ছিল না। একাধিক লিগে ম্যাচ গড়াপেটার অভিযোগে ৮ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। হিথ স্ট্রিক নিষেধাজ্ঞা মেনে নিলেও নিজের ওপর আসা অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছিলেন বারবার।

জেডএস/জেএ