ছবি : সংগৃহীত

মুমিন-জীবনের লক্ষ্য আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে জান্নাত অর্জন করা। জান্নাতে চিরস্থায়ী আবাস বানানো। দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী ঘরবাড়ি, আনন্দ সব একদিন বিলীন হয়ে যাবে। কিন্তু জান্নাতের বাড়ি কখনো বিলীন হবে না।

ফেরাউন-পত্নী আসিয়া (আ.) নির্যাতনের যাঁতাকলে অতিষ্ঠ হয়ে আল্লাহর কাছে জান্নাতে ঘর তৈরির দোয়া করেছিলেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ফিরাউনের স্ত্রীর দৃষ্টান্ত, যখন সে এই বলে প্রার্থনা করেছিল—হে আমার রব, আপনার সান্নিধ্যে জান্নাতে আমার জন্য একটি ঘর নির্মাণ করুন। ’ (সুরা তাহরিম, আয়াত : ১১)

হাদিস শরিফে এমন কিছু আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা জান্নাতে ঘর নির্মাণ করবেন। সেগুলো হলো—

সন্তান হারানোর সময় ধৈর্য ধারণ করা

সন্তান হারানো মাতা-পিতা সন্তান মারা যাওয়ার পর যদি ধৈর্যধারণ করে এবং আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকে। আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে ঘর নির্মাণ করে থাকেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘‘কোনো বান্দার কোনো সন্তান মারা গেলে তখন আল্লাহ তাআলা তাঁর ফেরেশতাদের প্রশ্ন করেন, তোমরা আমার বান্দার সন্তানকে ছিনিয়ে আনলে? তারা বলে, হ্যাঁ। ...পুনরায় তিনি প্রশ্ন করেন, তখন আমার বান্দা কি বলেছে? তারা বলে, সে আপনার প্রতি প্রশংসা করেছে এবং ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পাঠ করেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, জান্নাতের মধ্যে আমার এই বান্দার জন্য একটি ঘর তৈরি কোরো এবং তার নাম রাখো বাইতুল হামদ বা প্রশংসালয়।” (তিরমিজি, হাদিস : ১০২১)

ঝগড়া-বিবাদ বর্জন করা

ঝগড়া আল্লাহর কাছে সবচেয়ে অপছন্দনীয় জিনিস। কেউ যদি ঝগড়া বর্জন করে আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে ঘর নির্মাণ করবেন। যদিও তার জন্য সেই ঝগড়া করার অধিকার আছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ন্যায়সংগত হওয়া সত্ত্বেও ঝগড়া পরিহার করবে আমি তার জন্য জান্নাতের বেষ্টনীর মধ্যে একটি ঘরের জিম্মাদার; আর যে ব্যক্তি তামাশার ছলেও মিথ্যা বলে না আমি তার জন্য জান্নাতের মাঝখানে একটি ঘরের জিম্মাদার। আর যে ব্যক্তি তার চরিত্রকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছে আমি তার জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে অবস্থিত একটি ঘরের জিম্মাদার। ’ (আবু দাউদ,হাদিস : ৪৮০০)

মিষ্ট ভাষায় কথা বলা, অন্যকে আহার করানো

নম্র ভাষায় কথা বলা, অপরকে আহার করানো এগুলো আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় আমল। যে ব্যক্তি আমলগুলো করবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে ঘর নির্মাণ করবেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জান্নাতের প্রাসাদগুলো এমন হবে যে এর ভেতর থেকে বাইরের সব কিছু দেখা যাবে এবং বাইরে থেকে ভেতরের সব কিছু দেখা যাবে। এক বেদুইন দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), এসব প্রাসাদ কাদের জন্য? তিনি বললেন, যারা উত্তম ও সুমধুর কথা বলে, ক্ষুধার্তকে খাবার দেয়, প্রায়ই রোজা রাখে এবং লোকেরা রাতে ঘুমিয়ে থাকাবস্থায় জাগ্রত থেকে আল্লাহ তাআলার জন্য নামাজ আদায় করে, তাদের জন্য। ’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৫২৭)

ঘুমের আগে দোয়া পড়া

একটু সতর্ক হলেই আমরা সবাই এই আমলটি করতে পারি। আমাদের ঘরের ছোট শিশুকেও শেখাতে পারি। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন কেউ বিছানায় যায় এরপর ডান দিক হয়ে বালিশে মাথা রাখে, আর এ দুয়া পড়ে, (অর্থ) হে আল্লাহ, আমি আমার চেহারাকে অর্থাৎ যাবতীয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে তোমার হাতে সমর্পণ করলাম। আর আমার সব বিষয় তোমার কাছে সমর্পণ করলাম এবং আমার পৃষ্ঠদেশ তোমার আশ্রয়ে সোপর্দ করলাম। আমি তোমার গজবের ভয়ে ভীত ও তোমার রহমতের আশায় আশান্বিত। তুমি ছাড়া কোনো আশ্রয়স্থল নেই এবং নেই মুক্তি পাওয়ার স্থান। তুমি যে কিতাব অবতীর্ণ করেছ, আমি তার ওপর ঈমান এনেছি এবং তুমি যে নবী পাঠিয়েছ আমি তাঁর ওপর ঈমান এনেছি। আর এভাবে রাত যাপন করে তাহলে তার জন্য জান্নাতে ঘর নির্মাণ করা হবে। ’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৫১৬৪)

মসজিদ নির্মাণ করা

পৃথিবীর সবচেয়ে উত্কৃষ্ট জায়গা মসজিদ। এর নির্মাণকাজে যারা সহযোগিতা করবে তাদের জন্য আল্লাহ তাআলা জান্নাতের ঘর নির্মাণ করবেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার সুপ্রসন্নতা অর্জনের উদ্দেশ্যে একটি মসজিদ তৈরি করে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে অনুরূপ একটি ঘর তৈরি করেন। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩১৮)

সুন্নত নামাজ পড়া

ফরজ নামাজের আগে পরে যেসব সুন্নত আছে; কেউ যদি নিয়মিত এই নামাজ পড়ে আল্লাহ তাআলা তার জন্য মসজিদের ঘর নির্মাণ করবেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলিম বান্দা যখন আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় প্রতিদিন ফরজ ছাড়া আরো ১২ রাকাত নফল (সুন্নতে মুআক্কাদা) নামাজ আদায় করে আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করেন। ’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৫৮১)