দস্তরখানে খাবার খাওয়ার ফজিলত
খাবার খাওয়ার অনেক সুন্নত রয়েছে। সেগুলো অন্যতম একটি হলো- দস্তরখান বিছিয়ে খাবার খাওয়া। আল্লাহর নবী কারিম (সা.) দস্তরখানা ছাড়া খাবার গ্রহণ করতেন না। তিনি মৃত্যু পর্যন্ত খাবারের সময় দস্তরখান ব্যবহার করেছেন। উম্মতকে দস্তরখান ব্যবহারের প্রতি উৎসাহিত করেছেন।
সাধারণত দস্তরখান বলা হয়, যার ওপর খাবারের পাত্র রেখে পানাহার করা হয়। সাহাবায়ে কেরাম দস্তরখান বিছিয়ে খাবার খেতেন। দস্তরখান বিছিয়ে খাবার খেলে, খাবার নষ্ট হওয়ার ভয় থাকে না।
বিজ্ঞাপন
দস্তরখানে খাবার রেখে খেলে মার্জিতভাব প্রকাশ পায়। বিনয় ও সভ্য-জীবনের অনুশীলনও হয়। এটা সরল ও নিরহংকার মানুষের স্বভাব। এছাড়াও দস্তরখানে খাবার রাখলে— যেহেতু একটু নিচু হয়ে খাবার খেতে হয়, এতে পেটে চাপ থাকে। মাত্রাতিরিক্ত আহার করে দেহে মেদ তৈরির আশঙ্কা কম থাকে।
দস্তরখান কী ধরনের হতে হবে?
দস্তরখানার নির্দিষ্ট কোনো ধরন নেই। চামড়া, রেক্সিন, কাপড় ইত্যাদি দ্বারা দস্তরখানা বানানো যাবে এবং পরিষ্কার ও ছবি বা লেখামুক্ত হওয়ার প্রতি লক্ষ রাখতে হবে। (বুখারি, হাদিস : ৫৩৮৭, ৫৩৮৬; তিরমিজি, হাদিস : ১৭৮৮; উমদাতুল কারি : ২১/৩৬; আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল : ৭/১৭৫, ফাতাওয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত : ১১/৩৪৪)
আনাস (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) পায়াবিশিষ্ট বড় পাত্রে খাবার খেতেন না। কাতাদা (রা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, তাহলে কীসের ওপর খানা খেতেন? তিনি বললেন, ‘চামড়ার দস্তরখানের ওপর।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৩৮৬)
দস্তারখানে খাবার খেলে কি রিজিক বাড়ে?
তবে দস্তরখানে খাবার খেলে রিজিক বৃদ্ধি পায়, এ জাতীয় কোনো বক্তব্য কোরআন-হাদিসের কোথাও আমরা খুঁজে পাইনি। তবে দস্তরখানের খাবার খাওয়া রাসুল (সা.)-এর সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।
আনাস (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) কখনো ‘খিওয়ান’-এর ওপর (টেবিল বা টেবিলের মত উঁচু কিছুতে) খাবার রেখে খাননি এবং ‘সুকরুজা’তেও (ছোট ছোট পাত্রবিশেষ) নয়। তাঁর জন্য কখনো পাতলা রুটিও তৈরি করা হয়নি। (কাতাদা থেকে বর্ণনাকারী) ইউনুস কাতাদাকে জিজ্ঞেস করলেন, তাহলে তারা কীসের উপর খেতেন? তিনি বললেন, ‘সুফরা’র ওপর। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৪১৫)
আরও পড়ুন : খাবারের সময় যে ৩ কাজ করবেন না
অন্য বর্ণনায় এসেছে, আনাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) কখনও ‘সুকুরজা’ অর্থাৎ ছোট ছোট পাত্রে আহার করেছেন, তার জন্য কখনও নরম রুটি বানানো হয়েছে কিংবা তিনি কখনো টেবিলের উপর আহার করেছেন বলে আমি জানি না। বর্ণনাকারীকে জিজ্ঞেস করা হলো, তাহলে তারা কীসের ওপর রেখে খাবার খেতেনে।? তিনি বললেন, দস্তরখানের ওপর।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৩৮৬; তাফসিরে কুরতুবি : ৬/৩৭৪)
দস্তরখানের ব্যাপারে বিশেষভাবে লক্ষণীয় বিষয়
সে যুগে ‘সুফরা’ ছিল চামড়ার। তাতে আংটা থাকত। খুলে বিছালে দস্তরখান, গুটিয়ে ফেললে সফরের পাথেয় রাখার মতো ছোট ব্যাগ। ‘সুফরা’তে সাধারণত শুকনা খাবার রেখে খাওয়া হতো। এই ধরনের দস্তরখানা না হয়ে অন্য কোনো ধরনের দস্তরখান হলেও ব্যবহার করার চেষ্টা করব।
আমি যদি দস্তরখান ছাড়া খাই তাহলে খাবার নিচে পড়ে ময়লা লেগে যাবে; তা আবার পরিষ্কার করে তারপর খেতে হবে। কিন্তু যদি দস্তরখান বিছিয়ে নিই, তাহলে দস্তরখান থেকে তুলেই খেতে পারব। তেমনি শুকনো খাবার দস্তরখানে রাখাও যাবে।
আর মনে রাখতে হবে, দস্তরখান যেন হয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। দস্তরখান কখনোই নোংড়া করে রাখব না। অনেককে দেখা যায়, দস্তরখানে কাঁটা, হাড্ডি ইত্যাদি ফেলে। দস্তরখান তো এগুলো ফেলার জন্য নয়। এগুলো ফেলার জন্য আলাদা কোনো পাত্র থাকলে ভালো হয়। সুতরাং আমরা দস্তরখানে কাঁটা, হাড্ডি ইত্যাদি ফেলব না। তেমনি দস্তরখান ময়লা করেও রাখব না।
সাথে সাথে খেয়াল রাখব কাঁটা বা হাড্ডি পানির মধ্যে ফেলব না। কারণ তা আরেক প্রাণীর খাবার। হাত ধোওয়ার কাজ-আমল দস্তরখানে খাবার পরিবেশন করার আগে সেরে ফেললে ভালো। যাতে অসতর্কতায় হাত ধোওয়ার সময় খাবার পাত্রে পানির ছিটা না পড়ে।