প্রতীকী ছবি

দাড়ি রাখা আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সব সময়ের সুন্নত। এছাড়াও সাহাবায়ে কেরাম ও উম্মাহর সকল আলেম-উলামা দাড়ি রেখেছেন। আর বিধানগতভাবে দাড়ি রাখা ফরজ। দাড়ি কাটা, ছাটা, মুণ্ডন ও দাড়ির নামে ফ্যাশন করা হারাম ও কবিরা গুনাহ। 

দাড়ি বিষয়ে নিম্নে কয়েকটি হাদিস

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘আল্লাহর রাসুল (সা.) মোচ কাটার ও দাড়ি লম্বা করার আদেশ করেছেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১/১২৯)

বিভিন্ন হাদিসে আদেশের শব্দগুলোও বর্ণিত হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, ‘মুশরিকদের বিরোধিতা কর। দাড়ি বাড়াও ও মোচ কাট।’ (বুখারি, হাদিস : ২/৮৭৫)

আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘মুশরিকদের বিরোধিতা করো এবং মোচ কাট ও দাড়ি পূর্ণ করো।’ (মুসলিম, হাদিস : ১/১২৯)

ইবনে ওমর রা. এর সূত্রে তিনি আরও বলেন, ‘মোচ উত্তমরূপে কাট এবং দাড়ি লম্বা কর।” (বুখারি, হাদিস : ২/৮৭৫)

আবু হুরায়রা রা.-এর সূত্রে হাদিসে আরও এসেছে, ‘গোঁফ কাটো এবং দাড়ি ঝুলিয়ে দাও, অগ্নি পূজারীদের বিরোধিতা করো।’ (মুসলিম, হাদিস : ১/১২৯)

উপরের হাদিসগুলোতে আরবিতে চারটি শব্দ এসেছে, সেগুলো হলো- (ﺍﺭﺧﻮﺍ ـ ﺍﻋﻔﻮﺍ ـ ﺃﻭﻓﻮﺍ ـ ﻭﻓﺮﻭﺍ)। এই সবগুলো শব্দ থেকে বোঝা যায়, আল্লাহর রাসুল (সা.) লম্বা ও পূর্ণ দাড়ি রাখার আদেশ করেছেন। সুতরাং দাড়ি রাখা ফরজ।

প্রিয়নবী ও সাহাবিদের অনুসরণে দাড়ি রাখা

তাছাড়া পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ও সুন্দর মানুষ আল্লাহর রাসুল (সা.) নিজে এবং মানবসভ্যতার ইতিহাসে নবীদের পরেই সর্বোৎকৃষ্ট মানুষ সাহাবায়ে কেরাম দাড়ি রাখতেন। সুতরাং আমরা যদি আল্লাহর ভালোবাসা পেতে চাই তাহলে আমাদের জন্য আবশ্যক হল নিঃস্বার্থভাবে প্রিয়নবী (সা.) এবং সাহাবায়ে কেরামের অনুসরণ করা।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্যে রসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে।’ (সুরা আহজাব, হাদিস : ২১)

অর্থাৎ আমরা আখারিতে সফলতা ও মুক্তি পেতে চইলে— প্রিয়নবী (সা.)-কে অনুসরণ করা ফরজ।

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, ‘বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহও তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহ মোচন করবেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৩১)

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, ‘রাসুল তোমাদের যা দেন, তা গ্রহণ করো এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় করো।’ (সুরা আল হাশর, আয়াত : ০৭)

স্ত্রীকে খুশি বা বাঁকাদৃষ্টি থেকে বাঁচতে দাড়ি না রাখা...

সুতরাং স্ত্রীকে খুশি করার জন্য অথবা সমাজের বাঁকা দৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য দাড়ি কাটা, ছাটা বা মুণ্ডণ করা নাজায়েজ। বর্তমান সমাজে দ্বীন নিয়ে বেঁচে থাকতে হলে— সকল ভ্রু-কুটি ও ঝড়-ঝঞ্জা উপেক্ষা করে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। অন্যথায় এই সমাজ আমাদের দ্বীন থেকে সরিয়ে দেবে।

কাজেই কাউকে খুশি করার জন্য দাড়ি কাটা শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ নয়। অতএব, আপনি আপনার স্ত্রীকে খুশি করতে দাড়ি কাটতে পারবেন না। বরং আপনি আপনার স্ত্রীকে শরিয়তের বিধান জানিয়ে দিবেন। আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর আদর্শ পালন করার আবশ্যকতার বিষয়টি আন্তরিকতার সাথে বোঝাবেন। স্ত্রী যদি বুঝে তবে তো ভালো। অন্যথায় সে যদি তা মানতে না চায়, তাহলে আপনি তাকে ছেড়ে দিতে পারেন। কারণ, ইসলামি বিধান পছন্দ না করার কারণে স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার অনুমোদন শরিয়তের রয়েছে। স্ত্রীর খুশির জন্য ইসলামের একটি ফরজ বিধান ককখনোই জলাঞ্জলি দেওয়া যাবে না। এটাই ঈমানের দাবি ও আবশ্যকতা।

আল্লাহ তওফিক দান করুন। আমিন।