প্রতীকী ছবি

হাঁটাহাঁটি শরীরের জন্য উপকারী। এটা নতুন করে বলার কিছু নয়। তবে খালি পায়ে হাঁটার উপকারিতা অনেকের জানা থাকলেও হয়ত কেউ কেউ জানেন না যে, প্রায় সাড়ে চৌদ্দ শ বছর আগে রাসুল (সা.)-ও খালি পায়ে হাঁটার জন্য আদেশ দিয়েছেন।

হাঁটাহাঁটি সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘পৃথিবীতে গর্বভরে পদচারণ কোরো না। নিশ্চয় আল্লাহ কোনো দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না। পদচারণায় মধ্যবর্তিতা অবলম্বন করো এবং কণ্ঠস্বর নিচু করো। নিশ্চয় গাধার স্বরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর।’ (সুরা লুকমান, আয়াত : ১৮-১৯)

মাঝেমধ্যে খালি পায়ে হাঁটা সুন্নত

আরও বলা হয়েছে, ‘রহমানের বান্দা তো তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে।’ (সুরা ফুরকান, আয়াত : ৬৩)

খালি পায়ে হাঁটা মহানবী (সা.)-এর সুন্নত। বিভিন্ন হাদিসে সে প্রসঙ্গে আলোচনা এসেছে। এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘রাসুল (সা.) মাঝেমধ্যে খালি পায়ে হাঁটার নির্দেশ করেছেন।’ (সুনানে নাসাঈ, হাদিস : ৪১৬০; মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ২৩৯৬৯)

হাদিসের ব্যাখ্যা গ্রন্থে বলা হয়েছে, ‘মাঝে মাঝে খালি পায়ে হাঁটলে বিনয় আসে, অহমিকা দূর হয় এবং এটি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।’

মাঝে মাঝে খালি পায়ে চলার আদেশ দিয়েছেন নবীজি

আবদুল্লাহ ইবনে বুরাইদাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.)-এর এক সাহাবি মিসরে অবস্থানরত ফাদালাহ ইবনে উবাইদ (রা.)-এর কাছে পৌঁছেন। অতঃপর তিনি বলেন, আমি শুধু আপনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসিনি; বরং আমি ও আপনি যে হাদিসটি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে শুনেছি, আশা করি এ সম্পর্কে আপনার কিছু জানা আছে।

তিনি বলেন, তা কোন বিষয়ে? তিনি বলেন, এরূপ আপনি একটি স্থানের নেতা, অথচ আপনার মাথায় চুল উষ্কখুষ্ক দেখছি? সাহাবি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের মাত্রাতিরিক্ত জাঁকজমক দেখাতে নিষেধ করেছেন। তিনি (ফাদালাহ) বলেন, আপনার পায়ে জুতা দেখছি না কেন? তিনি বলেন, নবী (সা.) আমাদের মাঝে মাঝে খালি পায়ে চলার আদেশ দিতেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪১৬০)

উল্লিখিত হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, রাসুল (সা.)-এর নির্দেশনা পালনের উদ্দেশ্যে মাঝে মাঝে খালি পায়ে হাঁটা সুন্নত। এতে মানুষের আত্ম-অহমিকা কিছুটা সংবরণ হয়। তা ছাড়া এটি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এভাবে মহান আল্লাহ রাসুল (সা.)-এর বিভিন্ন সুন্নতে কল্যাণ রেখে দিয়েছেন।

এক পায়ে জুতা পরে হাঁটা নয়

খালি পায়ে হাঁটতে হাদিসে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। তবে এক পায়ে জুতা পরিধান করে অন্য পা খালি রেখে হাঁটতে নিষেধ করা হয়েছে। এটা দেখতে অসুন্দর ও বিদঘুটে লাগে। ব্যক্তির অসৌন্দর্যও প্রকাশ পায়।

আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন এক পায়ে জুতা পরে না হাঁটে। হয়তো উভয় পায়ে জুতা পরে হাঁটবে, নয়তো উভয় পায়ের জুতা খুলে হাঁটবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৮৫৫; মুসলিম, হাদিস : ২০৯৭)

খালি পায়ে হাঁটার উপকারিতা

হাঁটাহাঁটির উপকার সম্পর্কে প্রায় সবাই জানেন। খালি পায়ে হাঁটার উপকারিতাও অনেক। অনেকের কাছে এটি অজানা হলেও গবেষণার বদৌলতে এখন জানার সুযোগ হচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, খালি পায়ে হাঁটলে রক্তচাপ কমে। পায়ের নিচের স্নায়ুগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে। রক্ত ঘন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়। দেহে পুষ্টি জোগায়। ঘাসের ওপর খালি পায়ে হাঁটলে পায়ের নিচের নার্ভগুলো সক্রিয় হয়ে শরীরে ইতিবাচক শক্তি তৈরি করে। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

বিভিন্ন গবেষণায় আরও জানা গেছে, খালি পায়ে হাঁটা স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ভালো। এতে মানসিক প্রশান্তি আসে, ঘুম অনেক ভালো হয়। শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের মাত্রা বাড়ে। মস্তিষ্কের ভেতরে থাকা নিউরনগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে। তখন একদিকে যেমন স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়, তেমনি বুদ্ধিও বাড়তে শুরু করে। বিষয়টি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত।যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলেন, খালি পায়ে দৌড়ানো সম্ভব হলে জ্ঞানগত কর্মক্ষমতা বাড়ে। কোনো বিষয় মনে করতে ও স্মৃতি তৈরির প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। গবেষকরা আরও বলেন, খালি পায়ে দৌড়ালে ১৬ শতাংশ পর্যন্ত কাজের শক্তি বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও শরীরের প্রদাহ বা জ্বলুনিভাব কমতে সহায়তা করে।