অজুর সওয়াব ও ফজিলত
আল্লাহ তাআলা ইবাদতের জন্য মানুষ ও জিন সৃষ্টি করেছেন। আর ইবাদতের মধ্যে সর্বোত্তম ইবাদত হলো নামাজ। হাদিস শরিফে নামাজকে জান্নাতের চাবি বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। সেই নামাজের পূর্বশর্ত হলো অজু। অজু ছাড়া নামাজ পড়া যায় না। পবিত্র হাদিসে অজুকে নামাজের চাবি বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জান্নাতের চাবি হচ্ছে নামাজ, আর নামাজের চাবি হচ্ছে অজু।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৪)
বিজ্ঞাপন
সুবহানাল্লাহ, এর ফলাফল দাঁড়ায় জান্নাতের চাবি হলো অজু, যেহেতু অজু ছাড়া নামাজ অগ্রহণযোগ্য। অজুর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো, অজু মানুষকে আলোকিত করে। কিয়ামতের দিন এই উম্মতের অজুর অঙ্গগুলো উজ্জ্বল থাকবে, ফলে তাদের অন্য উম্মতদের থেকে আলাদা করা সহজ হবে। তাই সাহাবায়ে কেরাম অজুর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতেন।
নুআইম মুজমির (রহ.) বলেন, আমি আবু হুরায়রা (রা.)-এর সঙ্গে মসজিদের ছাদে উঠলাম। অতঃপর তিনি অজু করে বলেন, ‘আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন আমার উম্মতকে এমন অবস্থায় আহ্বান করা হবে, যে অজুর প্রভাবে তাদের হাত-পা ও মুখমণ্ডল উজ্জ্বল থাকবে। তাই তোমাদের মধ্যে যে এ উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে নিতে পারে, সে যেন তা করে।’ (বুখারি, হাদিস : ১৩৬)
আরও পড়ুন : অজুর দোয়া ও আমল
অতএব আমাদের উচিত, অজুর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া। প্রিয় নবীজির সুন্নত মোতাবেক অজু করার চেষ্টা করা। কারণ প্রিয় নবীজি কিয়ামতের দিন তাঁর উম্মতদের অজুর অঙ্গগুলোর উজ্জ্বলতা দেখে চিহ্নিত করবেন। তাদের হাউসে কাউসারের পবিত্র পানি দ্বারা আপ্যায়ন করবেন।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) একটি কবরস্থানে এসে বলেন, তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। হে কবরবাসী মুমিনরা, ইনশাআল্লাহ আমরাও তোমাদের সঙ্গে এসে মিলব। আমার বড় ইচ্ছা হয় আমাদের ভাইদের দেখি। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আমরা কি আপনার ভাই নই? তিনি বলেন, তোমরা তো আমার সাহাবা। আর যারা এখনো (পৃথিবীতে) আসেনি তারা আমাদের ভাই। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আপনার উম্মতের মধ্যে যারা এখনো (পৃথিবীতে) আসেনি তাদের আপনি কিভাবে চিনবেন?
তিনি বলেন, ‘কেন, যদি কোনো ব্যক্তি সাদা রঙের কপাল ও সাদা রঙের হাত-পাবিশিষ্ট ঘোড়া অনেকগুলো কালো ঘোড়ার মধ্যে মিশে যায় তবে সে কি তার ঘোড়াকে চিনে নিতে পারবে না? তারা বলেন, হ্যাঁ, ইয়া রাসুলাল্লাহ। তিনি বলেন, তারা (আমার উম্মত) সেদিন এমন অবস্থা আসবে যে অজুর ফলে তাদের মুখমণ্ডল, হাত-পা জ্যোতির্ময় হবে। আর হাউসের পাড়ে আমি হব তাদের অগ্রনায়ক। জেনে রাখো, কিছুসংখ্যক লোককে সেদিন আমার হাউস থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে, যেমনিভাবে বেওয়ারিশ উটকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে। আমি তাদের ডাকব, এসো এসো। তখন বলা হবে, ‘এরা আপনার পরে (আপনার দ্বিনকে) পরিবর্তন করে দিয়েছিল।’ তখন আমি বলব, ‘দূর হও, দূর হও’। (মুসলিম, হাদিস : ৪৭২)
আরও পড়ুন : যেসব কারণে অজু ভাঙে না
তাই প্রতিটি মুমিনের উচিত, অজুর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া। অজুর ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নতগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে যথাযথভাবে অজু করা। এখন শীতের মৌসুম, শীতের তীব্রতায় অজুতে যেন কোনো রকম ত্রুটি থেকে না যায় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা। মহান আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমিন।