যে ৬ ব্যক্তির জন্য আল্লাহ জান্নাতের ওয়াদা করেছেন
জান্নাত মুমিনের চির সুখের ও অনিঃশেষ-অনাবিল শান্তির ঠিকানা। পরম আরাধ্য ও কাঙ্ক্ষিত স্থানও বটে। প্রতিটি মুসলিম জান্নাত কামনা করে। জান্নাত লাভে আল্লাহর কাছে দোয়া ও প্রত্যাশা করে।
আল্লাহর রাসুল (সা.) অসংখ্য হাদিসে জান্নাত লাভের বিভিন্ন উপায় বলে দিয়েছেন। মুমিনরাও নানা ইবাদত ও আমলের মাধ্যমে এই জান্নাত অর্জনে সচেষ্ট থাকে।
বিজ্ঞাপন
জান্নাতে যাওয়ার সেসব আমলের মধ্যে ছয়টি আমল এমন আছে, যার কোনো একটিতে অভ্যস্ত ব্যক্তি আমল চলাকালীন মৃত্যুবরণ করলে— আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতের জিম্মাদার হয়ে যান। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) সেই ছয় ব্যক্তির কথা ঘোষণা করেছেন। নিম্নে ব্যাখ্যাসহ হাদিসটির বিবরণ তুলে ধরা হলো—
এক. ইসলাম প্রতিষ্ঠায় প্রাণ উৎসর্গকারী
ইসলাম আল্লাহ তাআলার মনোনীত ধর্ম। সমাজ ও রাষ্ট্রের ক্ষুদ্র বৃহৎ সব সমস্যার সমাধান রয়েছে ইসলামে। ইসলাম বিজিত ধর্ম হিসেবে থাকুক একজন মুমিনের এটাই কাম্য হওয়া উচিত। সর্বস্তরে ইসলামী অনুশাসন ও ইসলামকে বিজয়ী আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য যারা ধারাবাহিক প্রচেষ্টায় নিয়োজিত থাকে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আন্দোলন ও সংগ্রামের সে পথেই মৃত্যুবরণ করে তাহলে তাদের জন্য আছে কাঙ্ক্ষিত সেই জান্নাতের সুসংবাদ।
ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য বের হয়, সে যদি এ অবস্থায় মারা যায় তবে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো আল্লাহ তাআলার দায়িত্ব।’
দুই. দাফন-কাফন ও জানাজায় অংশগ্রহণকারী
কোনো মানুষের মৃত্যুর পর দাফনের আগ পর্যন্ত তার দৈহিক মর্যাদা নিশ্চিত করা জীবিতদের কর্তব্য। শরিয়তে এর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। মৃতকে গোসল করানো ও জানাজার নামাজ পড়ার স্বতন্ত্র ফজিলতও আছে। রাসুল (সা.) ওই হাদিসে ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি জানাজার সঙ্গে যায়, (জানাজা ও দাফন কাজে শরিক হয়) সে যদি এমন অবস্থায় মারা যায় তাহলে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো আল্লাহ তাআলার দায়িত্ব।’
আরও পড়ুন : জান্নাত লাভের সহজ দোয়া
তিন. অসুস্থ রোগীর সেবাকারী
ইসলাম মানুষের স্বাস্থ্য ও মানবিক অধিকার নিশ্চিত করেছে। তাই রোগীর সেবা শুশ্রূষাকে ইবাদত হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। ওই হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি রোগীর সেবায় নিয়োজিত, সে যদি এ অবস্থায় মারা যায় তবে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো আল্লাহ তাআলার দায়িত্ব।’
চার. নামাজের জন্য উত্তমরূপে অজু করে মসজিদে গমনকারী
পবিত্রতা ঈমানের অনুষঙ্গ। পবিত্রতা অর্জন ছাড়া ইসলামের মৌলিক ইবাদত কবুল হয় না। পবিত্রতা অর্জনের অন্যতম মাধ্যম হলো অজু। একজন মুমিন যখন উত্তমরূপে অজু করে মহান হুকুম নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদের দিকে গমন করে তখন আল্লাহ তাআলা ওই বান্দার প্রতি অনেক খুশি হন।
ওই হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করে নামাজের উদ্দেশ্যে গমন করে, সে যদি এ অবস্থায় মারা যায় তবে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো আল্লাহ তাআলার দায়িত্ব।’
পাঁচ. আলেম ও নীতিবান শাসককে সম্মান করতে আসা ব্যক্তি
ওলামায়ে কেরাম ও নীতিবান শাসকরা দেশ ও ধর্মের অনেক বড় সম্পদ। ইসলামে নীতিবান শাসক ও আলেমদের সম্মান করতে আদেশ করা হয়েছে। তাদের অসম্মান ও হেয়প্রতিপন্ন করা কিংবা তাদের বিরুদ্ধাচরণ করা পাপ ও অন্যায়। তাদের সম্মান করার বিশেষ ফজিলতও ওই হাদিসে ঘোষিত হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যদি কোনো ব্যক্তি নীতিবান শাসক ও আলেমকে শ্রদ্ধা প্রদর্শন এবং সম্মান দেখাতে আসে, সে যদি এ অবস্থায় মারা যায় তবে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো আল্লাহর দায়িত্ব।’
ছয়. ঘরে অবস্থানরত নম্র ও সদাচারী ব্যক্তি
রাগ, ক্ষোভ, পরনিন্দা ও প্রতিশোধ পরায়ণতা রুষ্ট ও মন্দ মানুষের স্বভাব। মানুষের সামাজিক চলাফেরা ও কথাবার্তায় এ ধরনের নিন্দনীয় বিষয়গুলো পরিলক্ষিত হয়। সীমিত চলাফেরা আর পরিমিত কথাবার্তা এ ধরনের পাপ থেকে অনেকটাই বিরত রাখে। তাই প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না থেকে গৃহে অবস্থান করাই উত্তম। এ ধরনের মন্দ আচরণ থেকে যারা বিরত থাকবে তাদের ব্যাপারেও ওই হাদিসে জান্নাতের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি তার ঘরে অবস্থান করে, কোনো মুসলিমের গিবত করে না, তার সঙ্গে রাগ করে না অথবা তার কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করে না, সে যদি এ অবস্থায় মারা যায় তবে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো আল্লাহর তাআলার দায়িত্ব।’ (সিলসিলা সহিহাহ, হাদিস : ৩৩৮৪)
আল্লাহ তাআলা আমাদের জান্নাতে যাওয়ার সব পথ ও পন্থা অবলম্বন করার তাওফিক দান করুন।