প্রতীকী ছবি

দিন শেষে মানুষ রাতের বেলা ঘুমায়। সারাদিনের ক্লান্তি ও অবসাদ দূর করে। প্রশান্তির ঘুম শেষে ভোর-সকালে সতেজ মন ও প্রফুল্ল চিত্তে জেগে ওঠে। সুন্দর ও মনোরম আরেকটি দিন শুরু করে। একজন মুমিন যখন আল্লাহর হুকুম ও রাসুল (সা.)-এর তরিকা অনুযায়ী সবকিছু করে, তখন তা ইবাদতে পরিণত হয়।

কেউ যখন ঘুমায়, তখন সে অনেকটা অনিয়ন্ত্রিত থাকে। ঘুমের ঘোরে অন্য রকম হয়ে পড়ে। তাই তার নিরাপত্তা ও সুরক্ষা জরুরি। একটি হাদিসে ঘুমানোর আগে সতর্কতাস্বরূপ প্রয়োজনীয় কয়েকটি কাজের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এক. রাতে নিরাপদ থাকতে সুন্নতি আমল

জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা রাতে পানাহারের পাত্রগুলো ঢেকে রেখো। ঘরের দরজাগুলো বন্ধ রেখো। আর সাঁঝের বেলায় তোমাদের বাচ্চাদের ঘরে আটকে রেখো। কারণ এ সময় জিনেরা ছড়িয়ে পড়ে এবং কোনো কিছুকে দ্রুত পাকড়াও করে। নিদ্রাকালে বাতিগুলো নিভিয়ে দেবে। কেননা অনেক সময় ছোট ক্ষতিকারক ইঁদুর প্রজ্জ্বলিত সলতেযুক্ত বাতি টেনে নিয়ে যায় এবং গৃহবাসীকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৩১৬)

দুই. তিন কুল পড়লে নিরাপদ থাকা যায়

আবদুল্লাহ্‌ বিন খুবাইব (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী (সা.) তাকে বলেছেন, ‘তুমি যখন সন্ধ্যায় উপনীত হবে কিংবা সকালে উপনীত হবে তখন তুমি ‘ক্বুল হুয়াল্লাহু আহাদ’ (সুরা ইখলাস) ও মুআওয়িযাতাইন (সুরা ফালাক ও সুরা নাস) ৩ বার পড়বে। এটি তোমাকে সব কিছু থেকে রক্ষা করবে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৭৫; আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৮২)

তিন. যে দোয়া পড়লে আচমকা বিপদ আসে না

উসমান বিন আফ্‌ফান (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি যে, ‘যে ব্যক্তি সন্ধ্যাবেলা তিনবার নিম্নোক্ত দোয়া বলবে— সে ব্যক্তি সকাল পর্যন্ত কোন আচমকা বিপদে আক্রান্ত হবে না। যে ব্যক্তি সকাল বেলা এ বাণীগুলো ৩ বার পড়বেন সন্ধ্যা হওয়া পর্যন্ত সে ব্যক্তি কোন আচমকা বিপদে আক্রান্ত হবেন না। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৮৮)

بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلاَ فِي السّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ 

উচ্চারণ : বিস্‌মিল্লা-হিল্লাজি লা ইয়াদ্বুররু মা‘আ ইস্‌মিহী শাইউন ফিল্ আরদ্বি ওয়ালা ফিস্ সামা-ই, ওয়াহুয়াস্ সামি‘উল ‘আলীম।

অর্থ : আল্লাহর নামে (সকল অনিষ্ট থেকে সাহায্য চাই), যার নাম (স্মরণের) সাথে আসমান ও যমীনে কোনো কিছুই ক্ষতি করতে পারে না। আর তিনি  সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী।

অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে, যে ব্যক্তি সকালে এ দোয়া তিনবার পাঠ করবে, সে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো আকষ্মিক দুর্ঘটনার শিকার হবে না। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় এ দোয়া তিনবার পাঠ করবে সে সকাল পর্যন্ত কোনো আকষ্মিক দুর্ঘটনার শিকার হবে না।

দোয়াটি হলো—

بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ 

উচ্চারণ : বিস্‌মিল্লা-হিল্লাজি লা ইয়ায্‌যুররু মা‘আ ইস্‌মিহি শাইউন ফিল্ আরযি ওয়ালা ফিস্ সামা-ই, ওয়াহুয়াস্ সামী‘উল ‘আলীম) কোনো কিছু তার ক্ষতি করতে পারবে না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৮৮; জাদুল মাআদ : ২/৩৩৮)

চার. যে দোয়া পড়লে সব ধরনের দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি

আবু দারদা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘যে ব্যক্তি সকালে সাত বার এবং বিকালে সাত বার এ দোয়া পাঠ করবে আল্লাহ তাআলা তাকে দ্বীন ও দুনিয়ার সব ধরনের দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেবেন।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৮১-৫০৮৩; কানজুল উম্মাল, হাদিস : ৫০১১)

দোয়াটি হলো—

حَسْبِيَ اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ ، عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ

উচ্চারণ : হাসবিয়া আল্লাহু লা-ইলাহা ইল্লা হুয়া আলাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়া হুয়া রাব্বুল আরশিল আজিম।

অর্থ : আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট। তিনি ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই। তার উপরই আমি তাওয়াক্কুল করি। তিনি মহান আরশের অধিপতি) আল্লাহ্‌ তার দুশ্চিন্তা দূর করে দিবেন।’

পাঁচ. আয়াতুল কুরসি পাঠ করা সুন্নত

রাসুল (সা.) বলেন, ‘তুমি যখন শয্যা গ্রহণ করবে, তখন আয়াতুল কুরসি পড়বে। তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বদা তোমার জন্য একজন রক্ষক থাকবে এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার কাছে আসতে পারবে না।’ (বুখারি, হাদিস : ২৩১১)