ছবি : সংগৃহীত

মানুষের মৃত্যু অনিবার্য সত্য। এই অমোঘ-অপরিবর্তনীয় মৃত্যু কেউ ঠেকাতে পারে না। যখন মৃত্যু লেখা আছে, তখন-ই হবে। মুমিনের জন্য মৃত্যু সবসময় স্বস্তিকর ও কল্যাণজনক। তবে হঠাৎ মৃত্যু থেকে আল্লাহর রাসুল (সা.) পানাহ চেয়ে দোয়া করেছেন। 

মৃত্যু হয়ে গেলে মুমিন তার আল্লাহর কাছে চলে যায়। এতে তার মর্যাদা বৃদ্ধি পায় ও গুনাহ মোচন হয়। দুনিয়ার সব কষ্ট-ক্লেশকে বিদায় জানিয়ে— সে রবের সন্তুষ্টি ও জান্নাতের দিকে এগিয়ে যায়। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘মুমিন ব্যক্তি যখন মৃত্যুবরণ করে, তখন সে দুনিয়ার দুঃখ-কষ্ট থেকে নিষ্কৃতি পায়।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ১৯৩০)

পক্ষান্তরে সে যদি আল্লাহর নাফরমান ও পাপিষ্ঠ হয়, তাহলে যে অবস্থায় মৃত্যু হোক না কেন— তার জন্য তা মহা বিপদের কারণ। বিশেষ করে হঠাৎ মৃত্যুর কারণে সে পাপাচার থেকে তওবা করার সুযোগ পেল না, নিজের অবস্থা সংশোধন করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলো। মানুষের কাছে ক্ষমা চাইতে পারল না। উপরন্তু আল্লাহর ক্রোধ ও আজাবের দিকে ধাবিত হলো।

আয়েশা (রা.) ও আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তারা বলেন- ‘(হঠাৎ মৃত্যু) পাপীর জন্য আফসোস আর মুমিনের জন্য নিষ্কৃতির কারণ।’ (মুসাননাফে ইবনে আবি শায়বা : ৩/৩৭০; বায়হাকি : ৩/৩৭৯)

এরপরও আল্লাহর রাসুল (সা.) আকস্মিক মৃত্যু থেকে রক্ষা চেয়ে দোয়া করতে উম্মতকে শিখিয়েছেন। এটার নানা কারণ হতে পারে। তন্মধ্যে একটি হলো- গাফিলতির অবস্থায় মৃত্যু হয়ে যাওয়া। কারণ, মুমিনও গাফিল হতে পারে এবং কখনো কোনো কারণে গাফিল হওয়া স্বাভাবিক।

আরও পড়ুন : ঋণ থেকে মুক্তি লাভের দোয়া

উবাইদ ইবন খালিদ সালামি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী (সা.)-এর একজন সাহাবি ছিলেন। তিনি বলেন, নবী (সা.) বলেছেন- ‘হঠাৎ মৃত্যু আফসোসের পাকড়াও স্বরূপ, (যাতে সে তওবার সুযোগ না পায়)। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩০৯৬)

আলকামা (রহ.) বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-কে বলতে শুনেছি, “আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘নিশ্চয় মুমিনের আত্মা (মৃত্যুর সময়) ঘামের সঙ্গে বের হয়, আমি গাধার মতো মৃত্যু পছন্দ করি না।’ তাকে প্রশ্ন করা হলো- গাধার মত মৃত্যু কী? তিনি বললেন, হঠাৎ মৃত্যু।” (তিরমিজি, হাদিস : ৯৮০)

আনাস বিন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“কিয়ামতের একটি আলামত হলো- ‘হঠাৎ মৃত্যু’ প্রকাশ পাওয়া।” (তাবারানি, হাদিস : ২৩৩; আস-সিলসিলাতুস সাহিহাহ, হাদিস : ২২৯২)

আকস্মিক মৃত্যু থেকে দোয়া রক্ষার দোয়া

হঠাৎ মৃত্যু থেকে বাঁচতে দোয়া করা যাবে। বাংলায় নিজের মতো করে হঠাৎ মৃত্যু থেকে পানাহ চাওয়া সহজ। আরবিতে হাদিসের বাক্য দিয়েও দোয়া করা যাবে। আবুল ইয়াসার (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহর রাসুল (সা.) এই দোয়া পড়তেন।

দোয়াটি হলো (আরবি) :

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَدْمِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ التَّرَدِّي وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْغَرَقِ وَالْحَرَقِ وَالْهَرَمِ وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ يَتَخَبَّطَنِي الشَّيْطَانُ عِنْدَ الْمَوْتِ وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ أَمُوتَ فِي سَبِيلِكَ مُدْبِرًا وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ أَمُوتَ لَدِيغًا

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাদমি ওয়া আউজুবিকা মিনাত তারাদ্দি, ওয়া আউজুবিকা মিনাল গারাকি ওয়াল হারকি ওয়াল হারাকি ওয়াল হারামি ওয়া আউজুবিকা আঁইয়াতাখব্বাতানিশ শাইতনু ইংদাল মাওতি ওয়া আউজুবিকা আন আমুতা ফি সাবিলিকা মুদবিরান ওয়া আউজুবিকা আন আমুতা লাদি-গান।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে চাপা পড়ে মৃত্যুবরণ থেকে আশ্রয় চাই, আশ্রয় চাই গহ্বরে পতিত হয়ে মৃত্যুবরণ থেকে, আমি আপনার কাছ থেকে আশ্রয় চাই পানিতে ডুবে ও আগুনে পুড়ে মৃত্যুবরণ থেকে এবং অতি বার্ধক্য থেকে। আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাই মৃত্যুকালে শয়তানের প্রভাব থেকে, আমি আশ্রয় চাই আপনার পথে জিহাদ থেকে পলায়নপর অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা থেকে এবং আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই বিষাক্ত প্রাণীর দংশনে মৃত্যুবরণ থেকে। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৫৫২; নাসায়ি, হাদিস : ৫৫৪৬), হাকিম, হাদিস : ১/৫৩১)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে উত্তম মৃত্যু দান করুন। ঈমান ও আমলের সঙ্গে যেন হয়— আমাদের সবার শেষ পরিণতি।