ভ্রু প্লাক করা কি জায়েজ?
ভ্রুর আকৃতি পরিবর্তন না করে ভ্রু-এর নীচের লোম অপসারণ করা কি জায়েজ? এই লোম একেবারে সামান্য ও ভ্রু থেকে পুরো আলাদা হয়- তাহলে এর হুকুম কী? একটু জানানোর অনুরোধ।
এক. ইসলামে ভ্রু প্লাক ও নকশা আঁকার বিধান
বিজ্ঞাপন
ভ্রু প্লাক ও নকশা আঁকার ব্যাপারে ইসলামের নিয়ম হলো- স্বামী চাইলেও কপালের পশম চাঁছা ও ভ্রু প্লাক করা জায়েজ নেই। কেননা এর দ্বারা আল্লাহর সৃষ্টিতে পরিবর্তন করা হয়, যা ইসলামে অনুমোদিত নয়। এভাবে মুখে বা হাতে সুই ফুটিয়ে নকশা আঁকা বা ট্যাটু করা বৈধ নয়। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হোক ওই নারীদের ওপর, যারা দেহ-অঙ্গে উল্কি উত্কীর্ণ করে এবং যারা করায়, যারা ভ্রু চেঁছে সরু (প্লাক) করে ও যারা সৌন্দর্য বৃদ্ধির মানসে দাঁতের মধ্যে ফাঁক সৃষ্টি করে এবং যারা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে পরিবর্তন আনে।’ (বুখারি, হাদিস : ৪৮৮৬)
আবুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে— তিনি বলেন, ‘আল্লাহ্ লানত করেছেন আল্লাহ্র সৃষ্টিকে পরিবর্তনকারী সে সব নারীদের যারা উল্কি অঙ্কনের কাজ করে, যাদের উল্কি করানো হয়, সৌন্দর্য চর্চা হিসেবে যাদের চোখের ভ্রু সরু করা হয়, যাদের দাঁত সরু করানো হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাকে লানত করেছেন— আমি তাকে লানত করতে বাধা কোথায়? এটি তো আল্লাহ্র কিতাবেই রয়েছে। “রাসুল তোমাদের যা দিয়েছেন তা গ্রহণ করো”... “বিরত থাক” পর্যন্ত [সুরা হাশর, আয়াত: ০৭]। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৯৩১)
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘যে নারী পরচুলা লাগানোর কাজ করে, আর যে নারীকে পরচুলা লাগানো হয়; যে ভ্রু সরু করানোর কাজ করে, যার ভ্রু সরু করানো হয়, যে উল্কি অঙ্কনের কাজ করে এবং যাকে উল্কি করানো হয়— কোন রোগ ছাড়া; তাদের অভিশাপ করা হয়েছে।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪১৭০; ফাতহুল বারি, হাদিস : ১০/৩৭৬)
আলেমগণ এই হাদিসগুলো দিয়ে দলিল পেশ করেছেন যে, ভ্রু উপড়ানো নিষিদ্ধ। এছাড়াও ফিকাহবিদগণ একমত হয়েছেন যে, দুই চোখের ভ্রু উপড়ানো এটি চেহারার লোম উপড়ানোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়বে।’ (আল-মাওসুআতুল ফিকহিয়্যাহ আল-কুয়েতিয়্যাহ : ১৪/৮১)
তবে কেউ কেউ বলেছেন যে, পুরুষের দাড়ি-গোঁফের মতো নারীর গালে বা ঠোঁটের ওপর পশম থাকলে তা তুলতে দোষ নেই।
দুই. ভুরুর সীমানা কতটুকু?
ইবনে মানযুর (রহ.) বলেন, অক্ষিদ্বয়ের উপরস্থ গোশত ও চুল সমেত হাড্ডিদ্বয়কে আরবিতে “الحاجبان। বহুবচন হলো- حواجب।
কারো কারো মতে, হাড্ডির উপর গজিয়ে ওঠা পশম। এই পশমকে এই নামে নামকরণ করা হয়েছে— যেহেতু এটি চোখে সূর্যের রশ্মি পড়তে বাধা দেয় (حاجب মানে বাধাদানকারী)।”[লিসানুল আরব (১/২৯৮-২৯৯)] আরবি ভাষায় ও মানুষের প্রচলনে এটাকে حاجب বা ভুরু বলা হয়।
পূর্বোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে প্রতীয়মান হয় যে, আপনি যে লোমের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছেন সেটি ভ্রুর অধিভুক্ত। কারণ, সেটি ভ্রুর মূল চুল থেকে বিচ্ছিন্ন হলেও তদুপরি সেটি ভ্রুর অধিভুক্ত। কেননা, সেটি ভ্রুর হাড্ডির এলাকায় গজিয়েছে। তাই এটি ভ্রুর হাড্ডির বিধানই গ্রহণ করবে। নিদেনপক্ষে এর হুকুম হলো- যে বিষয়ে সংশয় অতি তীব্র সতর্কতাস্বরূপ সেটি ত্যাগ করা।