বাংলাদেশি সেই মুখতারকে এবার সম্মাননা জানালেন হারামাইনের প্রেসিডেন্ট

বাংলাদেশি আলেম মুখতার আলম শিকদারকে সৌদি আরবে বিশেষ নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে পবিত্র মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীর প্রেসিডেন্সি বিভাগের প্রধান শায়খ ড. আবদুর রহমান আস-সুদাইস তাকে বিশেষভাবে সম্মাননা জানিয়েছেন।

রোববার (১৪ নভেম্বর) পবিত্র মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

মুখতার আলম পবিত্র কাবা শরিফের প্রধান ক্যালিগ্রাফার হিসেবে কাবার গিলাফ (কিসওয়াহ) প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। প্রতিবেদনটির ভাষায়— তাকে বহু বছর ধরে তার অনন্য কীর্তি ও পবিত্র কাবার গিলাফে কোরআন আয়াত অঙ্কন সুনিপুণ কারিশমার কারণে— খাদিমুল হারামাইন বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আলে সৌদের রাজকীয় ফরমানে শায়খ মুখতারকে সৌদির নাগরিকত্ব দেওয়া উপরক্ষে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে।

সম্মানা অনুষ্ঠানে জেনারেল প্রেসিডেন্ট শায়খ সুদাইস জোর দিয়ে বলেন, এই সম্মানজনক উপলক্ষ পবিত্র কাবার গিলাফের খিদমতে আরও বেশি আত্মনিয়োগ করার ও নিষ্ঠাবান হওয়ার দাবি রাখে। দেশের জনগণের কাছে আরবি ক্যালিগ্রাফির জ্ঞান, যোগ্যতার গুরুত্ব ও শৈল্পিকতা-মাধুর্য আরও বরণীয়য় হয় সে লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।

প্রসঙ্গত বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) বিভিন্ন পেশার দক্ষ বিদেশি নাগরিকদের সৌদি আরবে নাগরিকত্ব দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। সেই ঘোষণায় পর প্রথম দিনেই তার নামও উচ্চারিত হয়।

সৌদি গেজেটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, মূলত বিভিন্ন পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সৌদি বাদশার এক রাজকীয় নির্দেশনায় তাদের সৌদির নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। এদের মধ্যে প্রথম দিন ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, ইতিহাসবিদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও চিকিৎসক, বিনিয়োগকারক, প্রযুক্তিবিদ, ক্রীড়াবিদসহ পাঁচ বিদেশি নাগরিক আছেন। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ঘোষিত ‘ভিশন-২০৩০’ -এর অংশ হিসেবে বিভিন্ন পেশার দক্ষ বিদেশিদের নাগরিকত্ব দেওয়ার এ রাজকীয় নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হয়।

সৌদি গেজেট সৌদি আরবের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম আশ-শারকুল আওসাতের বরাত দিয়ে জানায়, নাগরিকত্ব পাওয়া বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন— পবিত্র কাবা শরিফের গিলাফের (কিসওয়া) প্রধান ক্যালিগ্রাফার মুখতার আলিম, ইতিহাসবিদ ড. আমিন সিদো, ড. আবদুল করিম আল সাম্মাক, প্রখ্যাত গবেষক ড. মুহাম্মদ আল-বাকাই ও প্রখ্যাত নাট্যশিল্পী সামান আল-আনি।

সৌদি গেজেটের প্রতিবেদনে মুখতার আলমের পরিচয়ে বলা হয়, মুখতার আলীম বর্তমানে মক্কার কিসওয়া কারখানায় পবিত্র কাবার কিসওয়ার প্রধান ক্যালিগ্রাফার হিসেবে কাজ করছেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী ও ফোরামে তার প্রধান ক্যালিগ্রাফিগুলো প্রদর্শিত হয়েছে। ক্যালিগ্রাফি দক্ষতা বিষয়ক প্রশিক্ষণে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা-শিক্ষাদান করেন। মক্কার দ্য ইনস্টিটিউট অব হলি মস্ক বা পবিত্র মসজিদুল হারাম পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে ক্যালিগ্রাফি-বিষয়ক তার পাঠ শোখানো হয়।

মুখতার আলম মক্কার বিখ্যাত উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে বর্তমানে পিএইচডি গবেষণারত। তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপ্লোমা, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রিধারীদের সার্টিফিকেটের ক্যালিগ্রাফার হিসেবেও কাজ করেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন সংস্থা থেকে বহু পুরস্কার ও প্রশংসামূলক সনদ লাভ করেছেন।

মুখতার আলমের বাড়ি চট্টগ্রামে। লোহাগাড়া উপজেলার আধুনগর ইউনিয়নে। তিনি রশীদের ঘোনা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম জনাব মুফিজুর রহমান বিন ইসমাঈল শিকদার। মায়ের নাম শিরিন বেগম। কর্মজীবনের শুরুতে তার বাবা কিছুদিন ঐতিহ্যবাহী চুনতি হাকীমিয়া আলিয়া মাদরাসার শিক্ষক ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি দীর্ঘ সময় সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ফার্মাসিস্ট হিসেবে বিভিন্ন হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করেন। মূলত বাবার কর্মসূত্রে পরিবারের সদস্যরা দীর্ঘ সময় সৌদিতে কাটিয়েছেন। বর্তমানে মুখতার তার মা, স্ত্রী ও চার মেয়েকে নিয়ে মক্কায় বসবাস করছেন। মুখতারের চার ভাই ও এক বোন।