প্রতীকী ছবি

বিয়ে মহান আল্লাহপ্রদত্ত বিশেষ এক নেয়ামত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। ঈমানের পূর্ণতার সহায়ক। চারিত্রিক আত্মরক্ষার অনন্য হাতিয়ার। আদর্শ পরিবার গঠন, জৈবিক চাহিদা পূরণ এবং মানসিক প্রশান্তি লাভের প্রধান উপকরণ।

প্রাপ্ত বয়স্ক ও সামর্থ্যবান হলে— কালবিলম্ব না করে বিয়ে করা প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানি দায়িত্ব। বিয়ে শুধু জৈবিক চাহিদাই নয়, বরং একটি মহান ইবাদতও বটে। বিয়ের মাধ্যমে ইহ ও পরকালীন কল্যাণ সাধিত হয়। বিয়ে মানুষের জীবন পরিশীলিত, মার্জিত ও পবিত্র করে তোলে।

পৃথিবীর প্রথম মানব-মানবীর বিয়ে

বিয়ের বিধান সৃষ্টির শুরুলগ্ন থেকেই পালন হয়ে আসছে। আদর্শ পরিবার গঠন, জৈবিক চাহিদা পূরণ, মানসিক প্রশান্তি ও বংশ বৃদ্ধির অন্যতম মাধ্যম হলো বিয়ে। বিয়ে প্রতিটি মানুষের স্বভাবজাত চাহিদাও পূরণ করে। এ চাহিদা পূরণার্থেই ইসলাম শরিয়ত বিয়ের বিষয়াদি সহজ করেছে।

পৃথিবীর আদিমানুষ আদম (আ.)। তখনো আদি মানবীর সৃষ্টি হয়নি। আদম আল্লাহর নির্দেশে জান্নাতের এখানে ওখানে ঘুরে বেড়ান। ফুলের সৌরভ, পাখির কলরব ও নদীর কলকল সুর— আদমের মনে হিল্লোল বইয়ে দেয়। কিন্তু সে হিল্লোল বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো মনো-তটে আনন্দ আছড়ে পড়ে— আবার তা মিলিয়ে যায়, বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। ধীরে ধীরে আদম বিষণ্ণ হয়ে পড়েন। সবকিছু থেকেও যেন তার কিছু একটা নেই। আল্লাহ বুঝতে পারলেন আদমের সঙ্গীর অভাব। তিনি সৃষ্টির করলেন— এক রূপবতী রমণীকে। যিনি পৃথিবীর প্রথম নারী। নাম তার হাওয়া। আমাদের আদিমাতা হাওয়া (আ.)।

আরও পড়ুন : স্ত্রীকে প্রফুল্ল রাখা রাসুল (সা.)-এর সুন্নত

আদম (আ.) তার সঙ্গীনি হাওয়াকে দেখে-ই বিস্ময়ে হতবাক। সঙ্গ চাইলেন এই রূপবতীর। আল্লাহ তাআলা আখেরি নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর দরুদ পড়াকে মোহরানা নির্ধারণ করেন। আর আদমের সঙ্গে হাওয়ার বিয়ে সম্পন্ন করে দেন। শুরু হয় প্রথম মানব-মানবীর পবিত্র বন্ধন— বৈবাহিক জীবনের। তারা সন্তান জন্ম দিয়ে হলেন পৃথিবীর আদিপিতা ও আদিমাতা। একপর্যায়ে তাদের সন্তানসন্ততি হয়। মানব বংশের বিস্তার ঘটে। আর এভাবেই বিয়ের মাধ্যমে মানবসভ্যতার যাত্রা শুরু হয়।

আর্থিক সচ্ছলতা লাভে বিয়ে-শাদি

মহান রাব্বুল আলামিন কোরআনুল কারিমে ইরশাদ করেন, ‘আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা রুম, আয়াত : ২১)

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিয়ে সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন, তাদেরও। তারা যদি নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের সচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। যারা বিয়েতে সামর্থ্য নয়, তারা যেন সংযম অবলম্বন করে— যে পর্যন্ত না আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের অভাবমুক্ত করে দেন। (সুরা নুর, আয়াত : ৩২-৩৩)

আরও পড়ুন : স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্ব ও কর্তব্য

আল্লাহ তাআলা আরও ইরশাদ করেন, ‘ ইরশাদ করেন-  هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ অর্থাৎ ‘তারা (স্ত্রীগণ) তোমাদের পোশাক এবং তোমরা (স্বামীগণ) তাদের পোশাকস্বরূপ`। (সূরা বাকারা : আয়াত ১৮৭)

যারা বিয়ে করে না— তাদের ব্যাপারে হুঁশিয়ারি

যারা বিয়ে করে না, তাদের ব্যাপারে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন রাসুল (সা.)। হাদিসে আছে, তিনজন ব্যক্তি আল্লাহ রাসুল (সা.)-এর ঘরে আসলেন। তারা ঘরবাসীদের রাসুল (সা.)-এর ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। তার ইবাদতের কথা শুনে তারা যেন বলল, কোথায় আল্লাহ রাসুল (সা.) আর কোথায় আমরা? তার আগের ও পরের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। তখন তাদের একজন বলল, আমি সারাজীবন রাতভর ইবাদত করব। আরেকজন বলল, আমি আজীবন রোজা রাখব। কখনো রোজা ভাঙব না। অন্যজন বলল, আমি নারীদের থেকে দূরে থাকব; কখনো বিয়ে করব না। আল্লাহর রাসুল তখন (সা.) তাদের কাছে এসে বললেন, ‘আরে! তোমরা এমন-অমন বলছো না! অথচ আমি তোমাদের সবার চেয়ে বেশি আল্লাহকে ভয় করি। কিন্তু আমি রোজা রাখি, আবার ইফতারও করি। নামাজ পড়ি, আবার ঘুমও যাই। নারীকে বিয়েও করি করি। অতএব, যারা আমার সুন্নত ছেড়ে দেবে, তারা আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।’ (বুখারি, হাদিস : ৫০৬৩; মুসলিম, হাদিস : ১৪০১)

আরও পড়ুন : স্বামীর প্রতি স্ত্রীর করণীয়

সক্ষমতা থাকলে দ্রুত বিয়ে করা আবশ্যক
 
আল্লাহর রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যে বিয়ের সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিয়ে করে নেয়, কেননা তা চক্ষুকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থান রক্ষা করে। (বুখারি, হাদিস : ৫০৬৬; মুসলিম, হাদিস : ১৪০০)

রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘যখন বান্দা বিয়ে করে, তখন সে তার দ্বীনের অর্ধেক পূরণ করে। অতএব, বাকি অর্ধেকাংশে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে।’ (সহিহ আল-জামিউস সাগির ওয়া জিয়াদাতুহু, হাদিস : ৬১৪৮; তাবরানি, হাদিস : ৯৭২; মুসতাদরাক হাকিম, হাদিস : ২৭২৮)

আরও পড়ুন : শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা সম্পর্কে ইসলাম কী বলে

সামর্থ্যহীনতার কথিত অজুহাতে বিয়ে করতে দেরি নয়

ইসলামে বিয়ের ব্যাপারে এত গুরুত্ব দেওয়ার পরও অনেক সময় অর্থ-সংকটের কথিত অজুহাতে পিতামাতারা ছেলে-মেয়েকে বিবাহ দিতে গড়িমসি করেন। আবার অনেক যুবক-যুবতীও ক্যারিয়ারের কথা বলে— বিয়ে করতে টালবাহানা করেন। তারা মনে করে, বিয়ে করলে হয়ত আর্থিক-সংকট বেড়ে যাবে। আর এ দায়িত্ব পালন করতে না পারলে বা আরও বেশি অর্থ উপার্জনের সুযোগ না হলে— জীবনমান নিচে নেমে যাবে; কিংবা জীবনে বিপর্যয় নেমে আসবে। অথচ তাদের এ ধরনের চিন্তা-ভাবনা শরিয়তের আলোকে মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। বাস্তবিক দৃষ্টিকোণ থেকেও এসব চিন্তা সঠিক বলে ধর্তব্য নয়। কেননা মানুষের আয়-রোজগার স্থায়ী বা অপরিবর্তনীয় কোনো বিষয় নয়। যে আল্লাহ আজ একজনকে ৫০ টাকা দিচ্ছেন, সে আল্লাহ-ই আগামীকাল তাকে ১০০ টাকা দিতে পারেন।

আরও পড়ুন : অন্যের বউকে বিয়ে করা কি জায়েজ?

আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে আছে, তিনি বলেন- আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তিন প্রকারের মানুষকে সাহায্য করা— আল্লাহ তাআলা নিজের কর্তব্য হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। এক. আল্লাহ তাআলার পথে জিহাদকারী। দুই. মুকাতাব গোলাম- যে চুক্তির অর্থ পরিশোধের ইচ্ছা করে। তিন. বিয়ে আগ্রহী— যে পবিত্র জীবন যাপন করতে চায়। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৫১৮)

রায়হান আহমেদ তামীম।। ছড়াকার ও সমাজকর্মী