প্রতীকী ছবি

মানুষের জীবনে সবচেয়ে পরিচিত শব্দ হলো তার ‘নাম’। একজন মানুষের কাছে তার সুন্দর নামটি হীরার চেয়েও দামি। প্রত্যেকেই চায় তান নাম যেন সম্মানের কারণ হয়। কারণ, জন্ম থেকে মৃত্যু— প্রতিটি স্তরে নাম গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয়। এমনকি মানুষ মারা গেলেও অন্যদের মুখে মুখে রয়ে যায় তার নাম।

কারও নাম নিয়ে ট্রল বা ব্যঙ্গ কি জায়েজ?

বর্তমানে অনেককে দেখা যায়, তারা অন্যের নাম বিকৃত করেন। প্রায়ই কাউকে ব্যঙ্গ বা ট্রল করে মন্তব্য করেন বা কথা বলেন। বিশেষ করে ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক ও লাইকিসহ আরও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যঙ্গ ও ট্রলে সয়লাব। তাছাড়া বন্ধু মহল ও গল্প-গুজবের আসর এবং বিভিন্ন আড্ডায়ও অন্যের নাম বিকৃত করা কিংবা তাকে নিয়ে সমালোচনা করা ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দুঃখজনক হলো- নাম নিয়ে ব্যঙ্গ করার এই প্রবণতা দিন দিন মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। অথচ ইসলামি শরিয়ত মানুষের নাম নিয়ে ব্যঙ্গ করাকে মারাত্মক গুনাহ ও গর্হিত কাজ বলে ঘোষণা করেছে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাআলা সবাইকে সতর্ক করে বলেন—

‘হে ঈমানদাররা! কোনো মুমিন সম্প্রদায় যেন অপর কোনো মুমিন সম্প্রদায়কে উপহাস না করে; কেননা যাদের উপহাস করা হচ্ছে তারা উপহাসকারীদের চেয়ে উত্তম হতে পারে এবং নারীরা যেন অন্য নারীদের উপহাস না করে; কেননা যাদের উপহাস করা হচ্ছে তারা উপহাসকারিণীদের চেয়ে উত্তম হতে পারে। আর তোমরা একে অন্যের প্রতি দোষারোপ কোরো না এবং তোমরা একে অন্যকে মন্দ নামে ডেকো না; ঈমানের পর মন্দ নাম অতি নিকৃষ্ট। আর যারা তাওবা করে না তারাই তো জালিম।’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত : ১১)

মুসলিমের ইজ্জত রক্ষা আবশ্যক

এক হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) অন্য মুসলিম ভাইয়ের মান-সম্মান, ইজ্জত-আব্রু ও ধন-সম্পদ রক্ষা করতে বলেছেন। সেগুলো নষ্ট করা কিংবা তাতে অবৈধ হস্তক্ষেপ করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক মুসলিমের জন্য অপর মুসলিমের জান, মাল ও ইজ্জত হারাম।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৫৬৪)

আরও পড়ুন : খারাপ ধারণা থেকে বাঁচার আমল

অন্য এক হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) মুমিনদের সতর্ক করে বলেছেন, ‘মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসেকি এবং তার সঙ্গে লড়াই করা কুফুরি।’ (বুখারি, হাদিস : ৬০৪৪)

মুসলিমরা পরস্পর ভাই

মহানবী (সা.) আরও বলেছেন, ‘এক মুসলিম আরেক মুসলিমের ভাই। সে তার ওপরে জুলুম করে না, তাকে সহযোগিতা করা পরিত্যাগ করে না এবং তাকে লাঞ্ছিত ও হেয় করে না। কোনো ব্যক্তির জন্য তার কোনো মুসলিম ভাইকে হেয় ও ক্ষুদ্র জ্ঞান করার মতো অপকর্ম আর নেই।’ (মুসনাদে আহমাদ : ১৬/২৯৭, ৭৭৫৬)

রাসুল (সা.) আরও বলেন, ঈমানদারদের সঙ্গে অন্য একজন ঈমানদারের সম্পর্ক ঠিক তেমন যেমন দেহের সঙ্গে মাথার সম্পর্ক। সে ঈমানদারদের প্রতিটি দুঃখ-কষ্ট ঠিক অনুভব করে যেমন মাথা দেহের প্রতিটি অংশের ব্যথা অনুভব করে। (মুসনাদে আহমাদ : ৫/৩৪০)

অন্য হাদিসে এসেছে, একজন মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই, সে তার ওপর অত্যাচার করতে পারে না আবার তাকে ধ্বংসের মুখেও ঠেলে দিতে পারে না। (বুখারি, হাদিস : ২৪৪২)

ফিরিশতারা দোয়া ও বদ-দোয়া করে যখন

হাদিসে আরো এসেছে, কোনো মুসলিম যখন তার ভাইয়ের জন্য তার অনুপস্থিতিতে দোয়া করে তখন ফিরিশতা বলে, আমিন (কবুল করো) আর তোমার জন্যও তদ্রূপ হোক। (মুসলিম, হাদিস : ২৭৩২)

কাজেই কারো নাম বিকৃত করে কোনো ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলা অথবা ব্যঙ্গ ও তুচ্ছজ্ঞান করে এমন খেতাব বের করে ডাকা, যা সে অপছন্দ করে না; এসব কর্মকাণ্ড কিছুতেই ইসলাম সমর্থন করে না। উপরন্তু অন্যের মনঃকষ্টের কারণ হয়, এমন যেকোনো কথা ও কাজ থেকে বেঁচে থাকার জোর তাগিদ দিয়েছে ইসলাম। আল্লাহ আমাদের সবাইকে একে অন্যের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা রেখে ও সঠিক সম্বোধনে ডাকার মানসিকতা তৈরি করে দিন। আমিন।