কুলখানি ও চল্লিশা আয়োজন কি জায়েজ?
কেউ মারা যাওয়ার পর আমাদের দেশে তার নামে বিভিন্ন দিন খাবারের আয়োজন করা হয়। মৃত্যুর তৃতীয় দিন ‘কুলখানি’র ব্যবস্থা করা হয়। আর ৪০ তম দিনে ‘চল্লিশা’ নামে বিশাল ভোজনের আয়োজন করা হয়। কিন্তু এসব কি ইসলাম সমর্থন করে?
এর উত্তর হলো- ইসলাম কখনো এসব সমর্থন করে না। তবে মৃত ব্যক্তির কাছে সওয়াব পৌঁছানের নিয়তে— কেউ যদি গরিব-দুঃখী ও এতিম-অসহায়দের খাবার দেয়, তাহলে সেটা জায়েজ আছে।
বিজ্ঞাপন
প্রথাগত খাবার আয়োজন সম্পর্কে ইসলাম
কিন্তু দুঃখজনক হরেও সত্য যে, আমাদের দেশে এসব এখন বড় প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মৃত ব্যক্তির বাড়িতে নানা ব্যবস্থাপনায় খাবার-ভোজন ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তাতে ধনী-গরিবসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। অথচ অনেক সময় দেখা যায়, অর্থসংকটসহ নানাবিধ অসুবিধা থাকে অনেকের। কিন্তু এরপরও সামাজিক প্রথার কারণে অনেকটা বাধ্য হয়ে তারা এমনটি করেন। ইসলাম এই ধরনের কাজ কোনোভাবেই সমর্থন করে না। বরং এসব ইসলামে সম্পূর্ণ অনুচিত ও পরিত্যাজ্য।
উপরন্তু কোরআন-হাদিস ও আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সাহাবাদের জীবনচরিতে এমন কোনো আয়োজনের উপস্থিতি নেই। তারা কখনো এসব করেননি। তাই মনে রাখতে হবে, ইসলামে এসবরে স্থান নেই। এছাড়াও কিছু কিছু পরিবারের জন্য অত্যন্ত কষ্টসাধ্য ও অবমাননাকর।
প্রতিযোগিতামূলক খাবারের ব্যাপারে নবীজি
প্রতিযোগিতামূলক খাবার অনুষ্ঠান ও ভোজনের আয়োজন দেখা যায় অনেক সময়। লোক সমাগমের আধিক্য ও মানুষকে খাবার খাওয়ানো এবং তাদের প্রতি উদারতা প্রকাশের উদ্দেশ্যে এমনটা করা হয়। কিন্তু এ ধরনের আয়োজনের খাবার খেতে আল্লাহর রাসুল (সা.) নিষেধ করেছেন।
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) দুই প্রতিদ্বন্দ্বী অহংকারীর খাবার গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৭৫৪)
মৃতের পরিবারের জন্য খাবার আয়োজন
ইসলাম সুন্দরের ধর্ম। মহান ধর্মের সৌন্দর্য এখানেই যে, কারও মৃত্যুর পর মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে খেতে অনুৎসাহিত করা হয়েছে। উপরন্তু তিন দিন মৃতের শোকাহত পরিবারের জন্য খাবার আয়োজন করতে নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩১৩৪)
কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো— আমাদের সমাজে ‘কুলখানি’, ‘চল্লিশা’ ইত্যাদির নামে কিছু অনৈসলামিক প্রথার প্রচলন রয়েছে। এগুলো মূলত তাদের ওপর খরচের বোঝা চাপিয়ে দেওয়ার নামান্তর। সামাজিকতার নামে খাবারের আয়োজন করতে বাধ্য করা হয়। ভোজন অনুষ্ঠানের জন্য স্নায়ুচাপ তৈরি করা হয়।
এসব আয়োজনকে নিষিদ্ধ মাতম বলেছেন নবীজি
অথচ জারির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) হাদিসে বলেন, ‘আমরা [রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে] মৃত ব্যক্তির বাড়ির আনুষ্ঠানিকতা ও খাবার আয়োজনকে (শরিয়তনিষিদ্ধ) মাতম বলে গণ্য করতাম।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৬৮৬৬; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৬১২)
অতএব, সবার উচিত— মৃত ব্যক্তির পরিবারের সহযোগিতায় এগিয়ে আসা। তাদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া। এটাই প্রকৃত মুমিনের কাজ। শুধু খাবারের আয়োজন ও ভোজন অনুষ্ঠানের নামে ইসলামে অনুনমোদিত কাজে অংশ গ্রহণ যেন আমাদের থেকে প্রকাশ না পায়। কারণ, প্রথাসর্বস্ব আয়োজন ও অপচয় থেকে দূরে থাকাই মুমিনের জন্য শ্রেয়।
তাই সাধ্য মোতাবেক মৃতের পরিবারকে সহযোগিতা করার অত্যন্ত প্রশংসনীয়। পাশাপাশি মৃতের কাছে সওয়াব পৌঁছার জন্য কিছু আমল ও কাজ করা জরুরি। আল্লাহ আমাদের উত্তম কাজে তাওফিক দান করুন।