৪০ লাখ নেকি লাভের দোয়া পড়া যাবে কি?
মুমিন-জীবনে আমলের গুরুত্ব অপরিসীম। বিভিন্ন হাদিসে সহজে ও অল্প সময়ে বিপুল সওয়াব লাভের আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে। আমলগুলো নিতান্ত সহজ, কিন্তু অজস্র ও অগণিত ফজিলতপূর্ণ। তাই অফিসে-বাসায় কাজের ফাঁকে কিংবা চলার পথে সামান্য অবসরে আমলগুলো নিমিষেই করা যায়।
আজকে আমরা এমন একটি সহজ আমলের ব্যাপারে আলোচনা করব— যেটার ব্যাপারে বলা হয়েছে যে, দোয়াটি পড়লে ৪০ লাখ নেকি দেওয়া হবে। সাহাবি তামিম দারি (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন- ‘যে ব্যক্তি এই দোয়াটি দশ বার পড়বেন, আল্লাহ তাআলা তার আমল নামায় ৪০ লাখ নেকি লিখে দেবেন। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৭৩; মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ১৬৯৫২; তাবরানি, হাদিস : ১২৭৮)
বিজ্ঞাপন
দোয়াটির আরবি হলো—
أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، إِلَهًا وَاحِدًا أَحَدًا صَمَدًا، لَمْ يَتَّخِذْ صَاحِبَةً وَلَا وَلَدًا، وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ
উচ্চারণ : আশহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু। ইলাহান ওয়াহিদান- আহাদান সামাদান। লাম ইয়াত্তাখিজ সাহিবাতান ওয়ালা ওয়ালাদা। ওয়ালাম ইয়াকুল লাহু কুফুওয়ান আহাদ।
অর্থ : আমি স্বাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো উপাস্য নেই। তিনি একক, তার কোনো শরিক নেই। একক উপাস্য, একাই, অমুখাপেক্ষী, তার স্ত্রী-সন্তান নেই। তার সমকক্ষও কেউ নেই।
আরও পড়ুন : যেসব সহজ আমলে বেশি সওয়াব
সওয়াব লাভ ও নেকি অর্জন— প্রতিটি মুমিনের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঈমানের পর আমলের মাধ্যমেই আখেরাতে জান্নাত ও নাজাত লাভ হবে। সহজে আমল করা ও গুনাহ মাফ সম্পর্কে আমাদের বেশি কিছু লেখা রয়েছে। পাঠকদের জন্য যেসব আমল খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও কল্যাণকর।
উল্লেখিত হাদিস সম্পর্কে হাদিস-বিশারদদের বক্তব্য
প্রখ্যাত হাদিস-বিশারদগণ বলেছেন, এই হাদিসটি অত্যন্ত দুর্বল। এই হাদিস বর্ণনাকারীদের মধ্যে একজন আল-খালিল ইবনে মুররাহ রয়েছেন, তার হাদিস অগ্রহণযোগ্য। এছাড়াও ইমাম তিরমিজি (রহ.) এই হাদিস বর্ণনার পরে বলেন, ‘হাদিসটি গরিব, কেবল এই ধরানুসারেই আমরা হাদিসটি পেয়েছি। হাদিসবেত্তাদের নিকট আল-খালিল ইবনে মুররাহ শক্তিশালী নয়। এছাড়াও ইমাম বুখারির একটি বক্তব্য বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন- ‘আমি যাদের ব্যাপারে মুনকারুল হাদিস বলেছি, তাদের থেকে হাদিস বর্ণনা শুদ্ধ হবে না।’ (মিজানুল ই’তিদাল : ০১/০৬)
আরও পড়ুন : যে দশটি সহজ আমলে বিপুল সওয়াব
শায়খ আল-বানি (রহ.) হাদিসটিকে তার ‘আদ্বায়িফা’ গ্রন্থে নিয়ে এসেছেন এবং হাদিসটি ভীষণ দুর্বল বলেছেন। (আদ্বায়িফা, হাদিস : ৬৩১৩); অন্যদিকে এই হাদিসটিকে মুরসাল বলা হয়েছে। (আত-তাহজিব : ০১/২০৪)
এছাড়াও জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে এক বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন যে- ‘যে ব্যক্তির নিম্নোক্ত দোয়াটি ১১ বার পড়বে, আল্লাহ তাআলা তাকে বিশ লাখ নেকি দান করবেন। আর যে বেশি পড়বে, তাকে বেশি দান করবেন।’ (তারিখু ইবনে আসাকির, হাদিস : ৩৮/২৯৯)
মোদ্দাকথা, দোয়াটি পাঠ করলে প্রাপ্ত নেকি বা সওয়াবের সংখ্যার ব্যাপারে বর্ণনাগত তারতম্য রয়েছে। ২০ হাজার থেকে ০৪ মিলিয়ন বা ৪০ লাখ পর্যন্ত সংখ্যার বর্ণনা রয়েছে। অন্যদিকে হাদিসশাস্ত্রবিদদের মতে এ বর্ণনটি নিতান্তই দুর্বল, যার উপর আমল করা বিধিত নয়। কারণ, এর বর্ণনাসূত্রের মাঝে পরিত্যাজ্য পর্যায়ের বর্ণনাকারী রয়েছেন। সুতরাং এ জাতীয় দোয়া শুদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য দলিলসম্মত নয়।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সঠিকভাবে আমল করার তাওফিক দান করুন।