মহররম ও আশুরায় যা করবেন না
মহররম মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক। কোরআনে বর্ণিত সম্মানিত চার মাসের অন্যতম একটি এই মাস। এ মাসে পৃথিবীর বহু ঐতিহাসিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। হাদিসের ও ইতিহাসের কিতাবগুলো সেগুলোর আলোচনা এসেছে।
আল্লাহ তাআলা আশুরার দিন কুদরত প্রকাশ করেছেন। বনি ইসরাইলের জন্য সমুদ্রে রাস্তা বের করে দিয়েছেন এবং তাদের নিরাপদে পার করে দিয়েছেন। আর একই রাস্তা দিয়ে ফেরাউন ও তার অনুসারীদের ডুবিয়ে মেরেছেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১/৪৮১)
বিজ্ঞাপন
কিন্তু কিছু মানুষ এ দিনের গুরুত্ব প্রকাশ করতে গিয়ে নানান ভিত্তিহীন কথা বলে থাকেন। যা কোনোভাবেই শরিয়ত সমর্থন করে না। যেমন- এদিন ইউসুফ (আ.) জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন। ইয়াকুব (আ.) চোখের জ্যোতি ফিরে পেয়েছেন। ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি পেয়েছেন। ইদরীস (আ.)-কে আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। আবার অনেকে বলে, এদিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে। অথচ এসব কথার কোনো ভিত্তি শরিয়তে নেই। (বিস্তারিত জানতে দেখুন : আল আসারুল মারফুআ, আবদুল হাই লখনউবি : ৬৪-১০০; মা ছাবাহা বিসসুন্নাহ ফি আয়্যামিস সানাহ : ২৫৩-২৫৭)
শোক পালনে মাতম জায়েজ নেই
এ মাসের একটি ঘটনা শাহাদাতে হুসাইন (রা.)। বলাবাহুল্য যে, উম্মতের জন্য এই শোক সহজ নয়। কিন্তু নবী (সা.)-এরই তো শিক্ষা-‘নিশ্চয়ই চোখ অশ্রুসজল হয়, হৃদয় ব্যথিত হয়, তবে আমরা মুখে এমন কিছু উচ্চারণ করি না যা আমাদের রবের কাছে অপছন্দনীয়।’
কিন্তু তাদের জন্য শোক প্রকাশ করতে গিয়ে যেন এমন কিছু না করা হয়, যা ইসলাম সমর্থন করে না। ইসলামের নামে ইসলাম বহির্ভুত কাজ করলে, আল্লাহ তাআলা শাস্তি দেবেন। এক হাদিসে নবীজি (সা.) বলেন, ‘মানুষের মধ্যে দুটি চরিত্র কুফুরির পর্যায়ের। একটি হলো বংশ মর্যাদায় আঘাত হানা। আর অপরটি হলো- কোনো মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে বিলাপ করা।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৭)
তাই যে ব্যক্তি এমন করে, তাকে নবীজি (সা.) উম্মতের বাইরের লোক হিসেবে অভিহিত করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি গালে থাপ্পড় মারে, পকেট ছিড়ে ফেলে ও জাহিলিয়াতের রীতি-নীতির প্রতি আহবান করে— সে আমাদের দলভূক্ত নয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১২৯৪)
আরও পড়ুন : মহররম ও আশুরার ফজিলত
মাতমকারী আল্লাহর অভিশাপে আক্রান্ত হয়
মাতমকারীর ওপর লা’নত বা অভিশাপ নেমে আসে। আবু উমামা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) মুখমণ্ডল ক্ষত- বিক্ষতকারিনী, পকেট বিদীর্ণকারী এবং দুর্ভোগ ও ধ্বংস প্রার্থনাকারীণীর ওপর লা’নত করেছেন।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৫৮৫)
এমন ব্যক্তি যে কি-না কারও মৃত্যুতে মাতম করেছে সে যদি তার এ কাজের জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে তাওবা না করে মারা যায় তাহলে পরকালে তাকে ভয়াবহ শাস্তি ভোগ করতে হবে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মাতমকারিণী মৃত্যুর পূর্বে তওবা না করলে কিয়ামতের দিন তাকে আল-কাতরার পাজামা ও খোস-পাঁচড়ার ঢাল পরিহিতা অবস্থায় দাঁড় করানো হবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৯৩৪)
যে ব্যক্তির মৃত্যুতে বিলাপ বা মাতম করা হয় তার জন্যও বিষয়টি কোনো উপকার বয়ে আনে না। বরং তার জন্যও ব্যাপারটি কষ্টের কারণ হয়। উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মৃত ব্যক্তিকে তার কবরের মধ্যে তার জন্য মাতম করে কান্না করার দরুন শাস্তি দেওয়া হয়।’ (সহিহ বুখারি : ১২৮৮)
অর্থাৎ সে ব্যক্তি তার উত্তরসূরীদের এহেন কাজের জন্য কবরে থেকে কষ্ট পান। তাই আমাদের উচিত মানুষের মৃত্যুতে শোক পালনের এ অন্যায় পদ্ধতি বর্জন করা।
আশুরা নিয়ে অনৈসলামিক কর্মকাণ্ড নয়
অতএব শাহাদাতে হুসাইন (রা.)-কে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের অনৈসলামিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত না হওয়া এবং সব ধরনের জাহেলী রসম-রেওয়াজ থেকে দূরে থাকা প্রত্যেক মুসলিমের অবশ্য কর্তব্য।
এ মাসে যেসব অনৈসলামিক কাজকর্ম ঘটতে দেখা যায়, তার মধ্যে তাজিয়া, শোকগাথা পাঠ, শোকপালন, মিছিল ও র্যালি বের করা, শোক প্রকাশার্থে শরীরকে রক্তাক্ত করা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। এসব রসম-রেওয়াজের কারণে এ মাসটিকেই অশুভ মাস মনে করার একটা প্রবণতা অনেক মুসলমানের মধ্যেও লক্ষ করা যায়। এজন্য অনেকে এ মাসে বিয়ে-শাদি থেকেও বিরত থাকে। বলাবাহুল্য এগুলো অনৈসলামিক ধারণা ও কুসংস্কার।
মোটকথা, এ মাসের করণীয় বিষয়গুলো হলো- তওবা, ইস্তেগফার, নফল রোজা এবং অন্যান্য নেক আমল। এসব বিষয়ে যত্নবান হওয়া এবং সব ধরনের কুসংস্কার ও গর্হিত প্রথা-রেওয়াজ থেকে বেঁচে কোরআ-সুন্নাহ মোতাবেক চলাই মুসলমানের একান্ত কর্তব্য। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফিক দান করুন।