ছবি : সংগৃহীত

সাহু সিজদা বা সিজদায়ে সাহু। মূলত নামাজে ভুলে কোনো ওয়াজিব ছেড়ে দিলে— সিজদায়ে সাহু দিতে হয়। শুধু দিতে হয় না, বরং তখন সাহু সিজদা দেওয়া ওয়াজিব। কেননা, ওয়াজিব ছুটে যাওয়ার কারণেই সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয়।

♦ নামাজে ইমামের ভুলের কারণে মুক্তাদিদের ওপরও সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে। আর মুক্তাদিরা ইমামের অনুসরণ করা অবস্থায় যদি কোনো ভুল করে, এতে তার সিজদায়ে সাহু দিতে হবে না। (সুনানে কুবরা লিল বায়হাকি : ৪০৫০)

♦ যদি ইমাম সালাম ফেরানোর পর মুক্তাদি তার নামাজ পূর্ণ করতে গিয়ে ভুল করে, তখন তাকে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে। (নাসায়ি, হাদিস : ১২৪৩)

♦ ইমামের ওপর সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হওয়ার কারণে সিজদায়ে সাহু করার সময় মুক্তাদিকেও ইমামের অনুসরণ করতে হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৬৫; সুনানে কুবরা : ৪০৫০)

♦ যে ব্যক্তির ওপর সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয়েছে, যদি সে ইচ্ছাকৃতভাবে সিজদায়ে সাহু না করে তাহলে সে গুনাহগার হবে এবং নামাজ আবার পড়তে হবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৮৬১; বুখারি, হাদিস : ৬৭৩৭)

♦ যে ব্যক্তির একই নামাজে কয়েকটি ওয়াজিব ভুলক্রমে ছুটে গেছে, সে ক্ষেত্রে একবার সাহু সিজদা দিলেই হবে। (আব্দুর রাজ্জাক : ২/৩২১)

♦ যে ব্যক্তি ভুলক্রমে ফরজ নামাজে প্রথম বৈঠক না করে উঠে যায়, তখন সে যদি পুরোপুরি দাঁড়িয়ে না যায় তাহলে আবার বসে যাবে। যদি দাঁড়ানোর কাছাকাছি উঠে যায়, তাহলে সাহু সিজদা দিতে হবে। যদি বসার কাছাকাছি থাকে, তাহলে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে না। (আবু দাউদ, হাদিস : ৮৭২)

♦ যে ব্যক্তি নফল নামাজে প্রথম বৈঠক না করে উঠে যায়, সে আবার বসে যাবে; যদিও সে পরিপূর্ণভাবে দাঁড়িয়েই যায়। পরে সাহু সিজদা দেবে। তেমনি যে ব্যক্তি ফরজ নামাজের শেষ বৈঠকের কথা ভুলে গিয়ে দাঁড়িয়ে যায়, সে আবার বসে যাবে। যতক্ষণ পর্যন্ত সে পঞ্চম রাকাতের সিজদা না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত আবার বসে যাবে এবং সাহু সিজদা দেবে। (মুআত্তা মুহাম্মদ : ১/২২৫; কিতাবুল আসার : ১৮৬)

♦ যদি পঞ্চম রাকাতের সিজদা করে ফেলে, তাহলে তার ফরজ নফল হয়ে যাবে। তখন জোহর, আসর ও এশায় আরো এক রাকাত পড়ে নেবে এবং ফজরেও আরো এক রাকাত পড়ে নেবে, যা নফল হয়ে যাবে। (আবু    দাউদ : ৮৬৪; মুসনাদে আহমাদ ৪০০৬)

♦ যে ব্যক্তি শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ পড়ার পর এটিকে প্রথম বৈঠক মনে করে উঠে যায় তাহলে সে আবার বসে গিয়ে সালাম ফিরিয়ে নেবে। আবার তাশাহহুদ পড়বে না। (মুসনাদে আহমাদ : ৪০০৬)

♦ যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে সালাম ফিরিয়ে দেয় অথচ তার ওপর সিজদায়ে সাহু ছিল তাহলে সে ততক্ষণ পর্যন্ত সিজদায়ে সাহু করতে পারে, যতক্ষণ নামাজের বিপরীত কোনো কাজ না করে; যেমন— কিবলা থেকে ফিরে যাওয়া, কথাবার্তা বলা ইত্যাদি। (বুখারি, হাদিস : ১১৫০; আবদুর রাজ্জাক : ২/৩৫০)

♦ যে ব্যক্তি চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজ পড়ছিল, সে সালাম ফেরানোর পর মনে পড়ল সে শুধু দুই রাকাতই পড়েছে, তখন নামাজ বেনা করতে পারবে (অর্থাৎ বাকি দুই রাকাত পড়ে নেবে) এবং সিজদায়ে সাহু করবে। (আব্দুর রাজ্জাক : ২/৩১৩)

সাহু সিজদা যেভাবে আদায় করবেন

যার ওপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছে, সে শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ পড়া শেষ করে ডান দিকে এক সালাম ফেরাবেন। এরপর তাকবির বলে— নামাজের মতো দুটি সিজদা করে বসে যাবেন এবং তাশাহহুদ, দরুদ ও দোয়ায়ে মাসুরা পড়ে সালাম ফেরাবেন। সালামের আগে সিজদা করলে নামাজ হয়ে যাবে। তবে তা মাকরুহে তানজিহি। (বুখারি,  হাদিস  : ১১৫০, ১১৫৩; তিরমিজি : ৩৬১; মুসনাদে আহমাদ : ১৮১৮৮; সুনানে কুবরা : ২৯৬৮)