যেদিন রোজা রাখলে দুই বছরের গুনাহ মাফ হয়
জিলহজ মাস বছরের অন্যতম চার মাসের একটি। আর এ মাসের প্রথম দশক অনেক গুরুত্বপূর্ণ। হাদিস বিশেষভাবে এ সময় রোজা রাখার কথা এসেছে। আল্লাহর রাসুল (সা.) সাধারণত এ দশকটিতে (০৯ দিন) রোজা রাখতেন।
হাদিস শরিফের মৌলিক গ্রন্থগুলোতে এ দশকে রোজা রাখার ব্যাপারে স্বতন্ত্র অধ্যায় নির্ধারিত হয়েছে। বর্ণিত হয়েছে, ‘আল্লাহর রাসুল (সা.) জিলহজের নয়টি দিবসে (সাধারণত) রোজা রাখতেন।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২৪৩৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২২৩৩৪; সুনানে কুবরা, বায়হাকি, হাদিস : ৮৩৯৩)
বিজ্ঞাপন
উম্মুল মুমিনিন হাফসা (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, ‘চারটি আমল নবী কারিম (সা.) কখনো ছাড়তেন না। আশুরার রোজা, জিলহজের প্রথম দশকের রোজা, প্রত্যেক মাসের তিন দিনের রোজা, ফজরের আগে দুই রাকাত সুন্নত নামাজ। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২৪১৫; সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৬৪২২; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৬৩৩৯)
অতএব সম্ভব হলে— এ দশকে রোজা রাখার প্রতি মনোযোগ দেওয়া জরুরি। পুরো নয় দিন রোজা রাখতে কষ্ট হলে, যে কয়টি সম্ভব সে কয়টি রাখতে পারি। তাতেও সাওয়াব হবে ইনশাআল্লাহ।
নয় জিলহজের রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত
জিলহজ মাসের গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন হলো নয় তারিখ। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী- ‘ইয়াওমু আরাফা’। এ দিনটি হজের মূল দিন। আরাফার ময়দানে হাজিদের অবস্থান এ দিনেই হয়ে থাকে। আল্লাহ তাআলা এ দিনকে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করেছেন। দ্বীন-ইসলামকে পূর্ণতার ঘোষণা দিয়েছেন এ দিনেই। এ দিনেই অবতীর্ণ হয়েছে কোরআনে কারিমের সর্বশেষ আয়াত, ‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার নিআমত পরিপূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন মনোনীত করলাম।’ (সুরা মায়েদা, আয়াত : ০৩)
এ দিনে বান্দার দিকে রবের রহমতের জোয়ার প্রবলবেগে উৎসারিত হয়। অসংখ্য বান্দাকে তিনি ক্ষমা করে থাকেন এই দিন। উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘আরাফার দিনের মতো আর কোনো দিন এত অধিক পরিমাণে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয় না। আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার নিকটবর্তী হন এবং বান্দাদের নিয়ে ফিরিশতাদের নিকট গর্ব করেন। আল্লাহ বলেন, কী চায় তারা?’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৩৪৮)
জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত আরেক বর্ণনায় রয়েছে, ‘আল্লাহ তাআলা নিকটতম আসমানে আসেন এবং পৃথিবীবাসীকে নিয়ে আসামানের অধিবাসী অর্থাৎ ফিরিশতাদের সঙ্গে গর্ব করেন। বলেন, দেখ তোমরা— আমার বান্দারা উস্কোখুস্কো চুলে, ধুলোয় মলিন বদনে ও রোদে পুড়ে দূর-দূরান্ত থেকে এখানে সমবেত হয়েছে। তারা আমার রহমতের প্রত্যাশী। অথচ তারা আমার আজাব দেখেনি। ফলে আরাফার দিনের মতো আর কোনো দিন এত অধিক পরিমাণে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয় না।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৩৮৫৩)
আরাফার দিনের রোজায় দুই বছরের গুনাহ মাফ
এ দিনের একটি রোজায় বান্দার দুই বছরের গুনাহ মাফ হয়। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন—
প্রকাশ থাকে যে, হাদিসে বর্ণিত ইয়াওমে আরাফা থেকে জিলহজের নয় তারিখ উদ্দেশ্য। অতএব, যে এলাকা যখন জিলহজের নয় তারিখে উপনীত হবে— সে এলাকায় তখন এ বিধান প্রযোজ্য হবে।
প্রসঙ্গত, দুই বছরের গুনাহ মাফ বলতে— এখানে সগিরা গুনাহ উদ্দেশ্য বলে জানিয়েছেন প্রখ্যাত হাদিসবিশারদরা। সগিরা গুনাহ বিভিন্ন আমলের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দেন। আর কবিরা গুনাহ থেকে ক্ষমা লাভের জন্য আল্লাহর কাছে পুরোপুরি আত্মসমর্পিত হয়ে তাওবা করতে হয়। পাশাপাশি বান্দার হক থেকে মুক্তি পেতে, বান্দার কাছেই ক্ষমা চাইতে হয়।
জিলহজের ফজিলতপূর্ণ প্রথম দশকের মাঝে যেহেতু ইয়াওমে আরাফা তথা নয় জিলহজ সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ— তাই অন্যান্য দিনের তুলনায় এ দিবসটিকে বিশেষ গুরুত্বের সাথেই আমলে নেওয়া চাই। পুরো দশক সম্ভব না হলেও কমপক্ষে এ দিনে রোজা রাখার চেষ্টা করি। এছাড়াও অন্যান্য নেক আমলে আরও বেশি মনোনিবেশ করা চাই।