জিলহজ মাসে যেসব আমল করবেন
জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন বিশেষ ফজিলতপূর্ণ ও অপরিসীম গুরুত্ববহ। পবিত্র কোরআনুল কারিমে চারটি মাসের গুরুত্ব ও মহত্ত্বের কথা এসেছে। এই এই চারটি মাসের অন্যতম হলো জিলহজ মাস।
আর এ মাসের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট ও ফজিলতপূর্ণ সময় হলো— ‘আশারায়ে জিলহজ’ বা জিলহজের প্রথম দশ দিন। আসুন, হাদিসের আলোকে এ দিনগুলোতে আমাদের করণীয় সম্পর্কে সংক্ষেপে জেনে নিই—
বিজ্ঞাপন
এক. অধিক পরিমাণে নেক আমল
এই দশ দিনে অত্যধিক আমলে সালেহ তথা উত্তম আমল করা। কেননা, এ দিনগুলোতে যে আমল করা হয়, তা আল্লাহ তাআলার নিকট অন্য যেকোনো দিনের আমলের চেয়ে অধিক প্রিয়। জিকির, কোরআন তিলাওয়াত, নফল নামাজ ও নফল-রোজা সবই এর অন্তর্ভুক্ত।
আল্লাহর রাসুল (সা.) হাদিসে বলেন, ‘আল্লাহর নিকট জিলহজের প্রথম দশ দিনের নেক আমলের চেয়ে অধিক প্রিয় অন্য কোনো দিনের আমল নেই। সাহবায়ে কেরাম আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও এ দিনের আমলের চেয়ে উত্তম নয়? তিনি বললেন, না, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও এরচেয়ে উত্তম নয়। তবে সে ব্যক্তির কথা ভিন্ন যে নিজের জান মাল নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে বের হয়েছে অতপর কোন কিছুই নিয়ে ফিরতে পারে নি।’ (বুখারি, হাদিস : ৯৬৯)
দুই. বেশি পরিমাণে জিকির করা
এই দিনগুলোতে অধিক পরিমাণে জিকির করা উচিত। বিশেষত, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার ও আলহামদুলিল্লাহ পাঠে নিমগ্ন হওয়া চাই। আল্লাহর নবী (সা.) হাদিসে ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তাআলার নিকট জিলহজের প্রথম দশকের আমলের চেয়ে অধিক মহৎ ও প্রিয় আমল আর নেই। সুতরাং তোমরা এ দিনগুলোতে বেশি বেশি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ‘আল্লাহু আকবার’ ও ‘আলহামদুলিল্লাহ’ পড়। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৫৪৪৬)
তিন. নখ-চুল ও পশম ইত্যাদি না কাটা
জিলহজের চাঁদ ওঠার পর এই দশ দিন কোরবানি আদায় করা পর্যন্ত শরীরের কোনো প্রকার চুল-পশম ও নখ না কাটা। এ বিষয়ে বর্ণিত সকল হাদিস এবং সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়িদের আমল থেকে প্রতীয়মান হয় যে, যারা কোরবানি করবেন এবং যারা সামর্থ্যের অভাবে কোরবানি করবেন না— সবার জন্যই এই আমল করা উত্তম।
তবে যে ব্যক্তি কোরবানি করবে, তার জন্য এ আমলটি তুলনামূলক অত্যাধিক গুরুত্ব রাখে। আল্লাহর নবী (সা.) বলেন, ‘যখন তোমরা জিলহজের চাঁদ দেখতে পাও এবং তোমাদের কেউ কোরবানি করতে চায়, সে যেন— তার চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকে। (মুসলিম, হাদিস : ১৯৭৭)
অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) এক ব্যক্তিকে বললেন— আমাকে কোরবানির দিন ঈদ পালনের আদেশ করা হয়েছে, যা আল্লাহ এ উম্মতের জন্য নির্ধারণ করেছেন। লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসুল! যদি আমার কাছে শুধু একটি মানিহা থাকে (অর্থাৎ অন্যের থেকে নেওয়া দুগ্ধ দানকারী উটনী) আমি কি তা দিয়ে কোরবানি করব? নবীজি (সা.) বললেন- না, তবে তুমি নখ, চুল ও মোঁচ কাটবে এবং নাভির নীচের পশম পরিস্কার করবে। এটাই আল্লাহর দরবারে তোমার পূর্ণ কোরবানি বলে গণ্য হবে। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৭৭৩, ৫৯১৪)
এমনকি সাহবায়ে কেরাম ও তাবেয়িরাও এ দিনগুলোতে শিশুদের চুল-নখ কাটা অপছন্দ করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) এক নারীর পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। ওই নারী জিলহজের দশকে ছেলের চুল কেটে দিচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেন, সে যদি কোরবানির দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করত— অনেক ভালো হতো। (মুস্তাদরাকে হাকিম, হাদিস : ৭৫৯৫)
চার. প্রথম দিন থেকে নবম দিন রোজা
সম্ভব হলে জিলহজের প্রথম তারিখ থেকে নয় তারিখ পর্যন্ত রোজা রাখা। বা এরমধ্যে যে কয়দিন সম্ভব হয়— রোজা রাখা। তবে নয় তারিখ অর্থাৎ, ঈদের আগের দিন অবশ্যই রোজা রাখার চেষ্টা করা। কেননা এই এক দিনের রোজার ফলে এক বছর আগের ও এক বছর পরের মোট দুই বছরের গোনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।
আল্লাহর নবী (সা.) বলেন, ‘আমি আশা করি, আরাফার দিন অর্থাৎ জিলহজের নয় তারিখের রোজার ফলে— আল্লাহ তাআলা এক বছর আগের ও এক বছর পরের গোনাহ মাফ করে দেবেন। (মুসলিম, হাদিস : ১১৬২)
জিলহজের প্রথম নয় দিন— রোজা রাখার বিষয়ে একাধিক হাদিস বর্ণিত হয়েছে, যেগুলো সনদের বিচারে দুর্বল হলেও মুহাদ্দিসগণ এ গুলোকে সমষ্টিগতভাবে আমলযোগ্য বলেছেন। (লাতায়িফুল মাআরিফ; ইমাম ইবনে রজব হাম্বলি, পৃষ্ঠা : ৩৫২-৩৫৩ )
পাঁচ. তাকবিরে তাশরিক পাঠ
জিলহজের নয় তারিখ ফজরের নামাজের পর থেকে তের তারিখ আসরের নামাজ পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজের পর পুরুষদের জন্য উচ্চস্বরে আর মহিলাদের জন্য নিম্নস্বরে তাকবিরে তাশরিক পড়া ওয়াজিব।
পুরুষরা ঈদের নামাজে যাওয়ার সময়ও উচস্বরে তাকবিরে তাশরিক পাঠ করবে। তাকবিরে তাশরিকের জন্য বিভিন্ন শব্দ হাদিস শরিফে উল্লেখিত হয়েছে। তার মধ্যে সর্বোত্তম ও সর্বজনবিদিত পাঠ হলো এই—
الله أكبر، الله أكبر، لا إله إلا الله، و الله إكبر، الله أكبر، و لله الحمد.
উচ্চারণ : আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার; লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার; ওয়া লিল্লাহিল হামদ। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাহ, হাদিস : ৫৬৯৬-৫৬৯৯; সুনানু ইবনিল মুনযির : ৪/৩৪৯)
ছয়. কোরবানি করা
কোরবানি করা জিলহজের অন্যতম মহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ আমল। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির কোরবানি করার সামর্থ্য আছে, কিন্তু কোরবানি করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহে উপস্থিত না হয়।’ (মুসতাদরাকে হাকিম, হাদিস : ৭৬৩৯)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে যথাযথভাবে আমল করার তাওফিক দান করুন।