জানাজার নামাজে রুকু-সিজদা নেই যে কারণে
মৃত্যু এক অমোঘ সত্য। কেউ আগে আর কেউ পরে। এভাবেই সবাই পরকালের পথে যাত্রা করে। যারা সৎ আমল করে, তারা আখিরাতে শান্তি-সুখে থাকবে। আর যারা মন্দ কাজ করে, তারা গুনাহের শাস্তি ভোগ করবেন।
মৃত্যুর পর মুসলমানের জানাজার নামাজ পড়া হয়। তার জন্য মুক্তি ও ক্ষমার দোয়া করা হয়। কেউ মারা গেলে ওই এলাকার লোকদের ওপর সেই ব্যক্তির জানাজার নামাজ আদায় করা ফরজে কিফায়া।
বিজ্ঞাপন
জানাজার নামাজ যেভাবে পড়তে হয়
জানাজার নামাজ সাধারণ নামাজের চেয়ে ভিন্ন। এই নামাজ পড়ার নিয়ম হলো, ইমাম মৃতের বক্ষ বরাবর দাঁড়াবেন। (বুখারি, হাদিস : ১২৪৬)
যারা জানাজার নামাজে অংশ নেবেন, তারা ইমামের কাতার করে দাঁড়াবেন ও ইমামকে অনুসরণ করবেন। (ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৩১০২)
আল্লাহর ইবাদত হিসেবে সবাই জানাজার ফরজ আদায়ের জন্য নিয়ত করবে। (বুখারি, হাদিস : ০১)
এরপর তাকবিরে তাহরিমা বলবে এবং কান পর্যন্ত হাত ওঠাবে। তারপর ছানা পড়বে। অতঃপর তাকবির বলে দরুদ পাঠ করবে। এই তাকবিরে হাত ওঠাবে না। তারপর তৃতীয় তাকবির বলে মৃত ব্যক্তি ও মুসলমানদের জন্য দোয়া করবে। তখনো হাত ওঠাবে না। তারপর চতুর্থ তাকবির বলবে। তখনো হাত ওঠাবে না। (দারাকুতনি : ১৮৫৩; ইবনে আবি শায়বা : ৩/২৯৫)
ইমাম তাকবির উচ্চৈঃস্বরে বলবেন এবং বাকি দোয়া-দরুদ অনুচ্চস্বরে পড়বেন। মুক্তাদিরা সবই অনুচ্চস্বরে পড়বে। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৭৮৪, সুনানে কুবরা, হাদিস : ৭৪৩৩)
অতঃপর ডান এবং বাঁ দিকে সালাম ফেরাবেন। (সুনানে কুবরা, হাদিস : ৭২৩৮)
জানাজায় রুকু-সিজদা নেই যে কারণে
উপরোল্লেখিত আলোচনা ও মাসআলা থেকে জানা গেল যে, জানাজার নামাজে রুকু ও সিজদা নেই। রুকু-সিজদা না থাকার কারণ হলো—
এক. রুকু ও সিজদায় নিজের সর্বনিম্ন অক্ষমতা ও অপদস্থতা এবং আল্লাহ তাআলার সীমাহীন মর্যাদা, বড়ত্ব ও মহত্ত্ব প্রকাশ করা হয়। জানাজার নামাজে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা, গুণাগুণ এবং অন্যদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়। কারণ, জানাজার নামাজ মৃত ব্যক্তির পক্ষে শুধুই সুপারিশ। আর রুকু-সিজদার কারণ ও উদ্দেশ্য এর বিপরীত। তাই জানাজার নামাজে রুকু-সিজদার বিধান দেওয়া হয়নি।
দুই. জানাজার নামাজ পড়া হয় লাশ সামনে রেখে। যদি অন্য নামাজের মতো জানাজার নামাজে রুকু-সিজদা করা হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের মধ্যে এই ধারণা হতে পারে যে লাশের উদ্দেশে বুঝি রুকু-সিজদা করা বৈধ।
সুতরাং লাশ সামনে রেখে রুকু-সিজদা করলে শিরকের সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই মুসলিম উম্মাহকে শিরকি ধারণা থেকে বাঁচানোর জন্য জানাজার নামাজে রুকু-সিজদার বিধান দেওয়া হয়নি।