প্রতীকী ছবি

কিয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের ছায়া ব্যাতীত অন্য কোনো ছায়া থাকবে না। সূর্য মাথার একেবারে উপরে অবস্থান করবে। সেদিন মানুষ দলে দলে বিভক্ত হবে। তাদের নিজেদের ঘামের সাগরে হাবুডুবু খেতে থাকবে। কিন্তু এই কঠিন দিনেও কিছু মানুষ আল্লাহর আরশের ছায়া পাবে।

আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা সাত ব্যক্তিকে সেই দিনে তাঁর (আরশের) ছায়া দান করবেন— যেদিন তার ছায়া ব্যতীত আর কোনো ছায়া থাকবে না; এক. ন্যায় পরায়ণ বাদশাহ (রাষ্ট্রনেতা), দুই. এমন যুবক যার যৌবন আল্লাহ তাআলার ইবাদতে অতিবাহিত হয়, তিন. যার অন্তর মসজিদের সঙ্গে লেগে থাকে (মসজিদের প্রতি তার মন সদা আকৃষ্ট থাকে।) চার. ওই দুই ব্যক্তি যারা আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে বন্ধুত্ব ও ভালবাসা স্থাপন করে; যারা এই ভালবাসার উপর মিলিত হয় এবং এই ভালবাসার উপরেই চিরবিচ্ছিন্ন (তাদের মৃত্যু) হয়। পাঁচ. সেই ব্যক্তি যাকে কোনো সুন্দরী (ব্যভিচারের উদ্দেশ্যে) আহ্বান করে, কিন্তু সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি।’ ছয়. সেই ব্যক্তি যে এমন গোপনে দান করে যে, তার ডান হাত কি দান করে, তা তার বাম হাতও জানতে পারে না। সাত. যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে; ফলে তার উভয় চোখে পানি বয়ে যায়।’

(বুখারি, হাদিস : ১৪২৩; মুসলিম, হাদিস : ১০৩১; তিরমিজি, হাদিস : ২৩৯১; নাসায়ি, হাদিস : ৫৩৮০, আহমদ, হাদিস : মুয়াত্তা মালিক, হাদিস : ১৭৭৭)

ন্যায়পরায়ণ শাসক

আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন যে ৭ শ্রেণীর মানুষকে আরশের ছায়ার নিচে আশ্রয় দেবেন তাদের মধ্যে অন্যতম ন্যায়পরায়ণ শাসক। যেকোনো দেশের মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধান এমন আমল করতে পারেন। তবে শাসক বলতে কেবল রাষ্ট্রপ্রধানকেই বোঝা যায় না। বাবা, স্বামী কিংবা ভাইও হতে পারেন সুশাসক। পরিবারে ইসলামি বিধিবিধানগুলো কার্যকর রাখার মধ্য দিয়ে ন্যায়পরায়ণ থাকা যায়।

আল্লাহর ইবাদাতে নিমগ্ন যুবক

কিয়ামতের দিন ওই ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা আরশের ছায়ার নিচে আশ্রয় দেবেন যিনি যৌবন বয়স আল্লাহর ইবাদাতে কাটিয়েছেন। আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই সবসময় যিকির  করেছেন।

আরও পড়ুন : কিয়ামতের দিন যারা আল্লাহর সুদৃষ্টি পাবে না

মসজিদের সঙ্গে সম্পর্ক যার

যেদিন কোনো ছায়া থাকবে না, সেদিন ওই ব্যক্তি আল্লাহর আরশের নিচে জায়গা পাবেন যার অন্তর সবসময় মসজিদের সঙ্গে ঝুলন্ত থাকে। অর্থাৎ সবসময় মসজিদে অবস্থান করতে চায় এবং একাধিকবার আল্লাহকে স্মরণ করে।

আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বন্ধুত্ব স্থাপনকারী দুই ব্যক্তি

কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা ওই দুজনকে আরশের ছায়ায় আশ্রয় দেবেন, যারা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে দুনিয়ায় মিলিত হয়েছে এবং পরস্পরকে ভালোবেসেছে। দুনিয়ার কোনো স্বার্থের কারণে নয়, কেবল আখিরাতে নাজাত পাওয়ার উদ্দেশ্যে তারা একত্রিত হয়েছিল।

যেনা-ব্যাভিচার থেকে আত্মরক্ষাকারী যুবক

কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তার আরশের ছায়ার নিচে ওই যুবককে আশ্রয় দেবেন, যাকে যৌবনে কোনো সুন্দরী এবং সম্ভ্রান্ত পরিবারের তরুণী ব্যাভিচারের প্রস্তাব দিয়েছিল। অথচ আল্লাহর ভয়ে সে ওই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে। একই সঙ্গে সে বলেছে, আমি আল্লাহকে ভয় করি।

আরও পড়ুন : সবার আগে যারা জাহান্নামে যাবে

দানশীল ব্যক্তি

দান করা নেককার লোকদের বৈশিষ্ট্য। দানশীল ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা পছন্দ করেন। কিন্তু যার ডান হাত কী দিয়েছে সেটি বাম হাত জানে না সেই ব্যক্তিকে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার আরশের ছায়ায় আশ্রয় দেবেন।

আল্লাহকে স্মরণকারী ব্যক্তি

কিয়ামতের আল্লাহ এমন ব্যক্তিকে আরশের ছায়ায় আশ্রয় দেবেন যিনি গোপনে আল্লাহকে স্মরণ করেছেন এবং আল্লাহর ভয়ে তিনি নীরবে কেঁদেছেন। আল্লাহকে স্মরণকারী ব্যক্তি আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়।

এইচএকে/এমএমইউ