অলসতা দূর করতে যেসব আমল করবেন
অলসতা কর্মবিমুখতা ও হীনমন্যতা তৈরি করে। জীবনের সম্ভাবনা নষ্ট করে দেয়। কর্মবিমুখ ও নিষ্ক্রিয় ব্যক্তিকে অন্যরা পছন্দ করে না। ভাবলেশহীন কিংবা উদাসীন মানুষকে সবাই অবহেলার চোখে দেখে।
তাই অলস ব্যক্তির জীবন ফলপ্রসূ ও কর্মমুখর হয় না। কর্মহীনতা, নির্লিপ্ততা ও আলস্য নিজের জন্য যেমন কিছু করতে পারে না; তেমনি সমাজ ও অন্যদের জন্যও তেমন কিছু উপহার দিতে পারে না। উপরন্তু অনেক অলস আশপাশের লোকদের জন্য অবক্ষয় ডেকে আনে।
বিজ্ঞাপন
অলসতা ব্যক্তি ও জাতির উন্নতির অন্তরায়। কিন্তু কোন আমল করলে অলসতা দূর হবে— তা অনেকে জানে না। তাদের জন্য আমাদের ছোট আয়োজন। নিম্নে অলসতা দূর করার আটটি আমল এখানে উল্লেখ করা হলো—
এক. ফজরের নামাজের প্রতি যত্ন নেওয়া
ফজরের নামাজের প্রতি গুরুত্ব দিন। কারণ, অলসতার কারণে ফজরের নামাজ না পড়তে পারলে— এটাই হবে সারাদিনের আমলহীনতা, গুনাহমুখিতা ও অলসতার সূচনা। তাই অলসতা থেকে বাঁচতে প্রতিটি দিন শুরু করুন ফজর নামাজের মাধ্যমে।
হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন তোমাদের কেউ নিদ্রা যায়, তখন তার গ্রীবাদেশে শয়তান তিনটি করে গাঁট বেঁধে দেয়; প্রত্যেক গাঁটে সে এই বলে মন্ত্র পড়ে যে তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত, অতএব তুমি ঘুমাও। অতঃপর যদি সে জেগে ওঠে আল্লাহর জিকির করে, তাহলে একটি গাঁট খুলে যায়। তারপর যদি অজু করে, তবে তার আর একটি গাঁট খুলে যায়। তারপর যদি নামাজ পড়ে, তাহলে সমস্ত গাঁট খুলে যায়। আর তার প্রভাত হয় স্ফুর্তি ও ভালো মনে। নচেৎ সে সকালে ওঠে কলুষিত মনে ও অলসতা নিয়ে। (বুখারি, হাদিস : ১১৪২)
দুই. নেক আমলে মনোযোগ দেওয়া
সৎকাজ ও নেক আমলে মনোযোগ দেওয়ার সময় এখনই। আরও বয়স হলে আমল করব— এমন চিন্তা বাদ দিন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা তোমাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা এবং এমন জান্নাতের দিকে দ্রুত ধাবিত হও, যার প্রশস্ততা হবে আকাশসমূহ ও জমিনসম। তা মুত্তাকিদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৩)
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, সাতটি বিষয়ের আগে তোমরা দ্রুত নেক আমল করো। তোমরা কি এমন দারিদ্র্যের অপেক্ষা করছ, যা তোমাদের সব কিছু ভুলিয়ে দেবে? নাকি ওই ঐশ্বর্যের অপেক্ষা করছ, যা তোমাদের দর্পিত বানিয়ে ছাড়বে? নাকি এমন রোগের জন্য অপেক্ষা করছ, যার আঘাতে তোমরা জরাজীর্ণ হয়ে পড়বে? নাকি সেই বার্ধক্যের অপেক্ষায় আছ, যা তোমাদের অথর্ব করে ছাড়বে? নাকি মৃত্যুর, যা আকস্মিক এসে পড়বে? নাকি দাজ্জালের, অনুপস্থিত যা কিছুর জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে, সে হচ্ছে সেসবের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট। নাকি কিয়ামতের অপেক্ষা করছ, যে কিয়ামত সর্বাপেক্ষা বিভীষিকাময় ও সর্বাপেক্ষা তিক্ত হবে? (তিরমিজি, হাদিস : ২৩০৬)
তিন. অলসতা দূরে দোয়া পড়ুন
অলসতা ও উদাসীনতা থেকে মুক্তির জন্য দোয়া পড়ুন। বিভিন্ন হাদিসে রাসুল (সা.) অলসতা থেকে মুক্ত থাকার দোয়া করার বর্ণিত হয়েছে। হাদিসে বর্ণিত দোয়া পড়ুন। যেমন—
চিন্তা ও পেরেশানির সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) একটি বিশেষ দোয়া পড়তেন। দোয়াটি হলো—‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আউযুবিকা মিনাল আজযি ওয়াল-কাসালি, ওয়া আউযুবিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া আউযুবিকা মিন দ্বালা‘য়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল।’
অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে।
আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) চিন্তাযুক্ত অবস্থায় এই দোয়া পড়তেন। (বুখারি, হাদিস : ২৮৯৩)
চার. মনীষীদের জীবনী- বাণী পাঠ করুন
অলসতার অন্যতম কারণ চেতনা ও স্পৃহা না থাকা। নিজের মধ্যে প্রেরণা, চেতনা ও উদ্দীপনা জাগাতে মনীষীদের জীবনী ও বাণী পড়ুন। অলসতা দূর করতে খুব বেশি কাজে লাগবে এগুলো। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘পূর্বপুরুষদের কাহিনিতে বোধশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য শিক্ষা রয়েছে। এটা (কোরআনের বাণী) মিথ্যা রচনা নয়; বরং তা আগের ধর্মগ্রন্থগুলোর সমর্থক, সব কিছুর বিশদ বিবরণ এবং ঈমানদার সম্প্রদায়ের জন্য পথ নির্দেশ ও রহমত।’ (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ১১১)
পাঁচ. মনোবল বৃদ্ধির চেষ্টা করুন
ভাবুন, অলসতা, উদ্যমহীনতা ও উদাসীনতা ব্যর্থ মানুষের স্বভাব। গ্রামবাংলার এই প্রবাদ মনে রাখুন—‘অলস মস্তিষ্ক শয়তানের বাসা।’
সুতরাং আমি কেন শয়তানের শিকারে পরিণত হয়ে ব্যর্থদের কাতারে শামিল হব। তারপর তাআউয (আউযুবিল্লাহ) শয়তানের অনিষ্ট থেকে বাঁচতে বেশি বেশি ‘আউজুবিল্লাহ’ ও ‘ইস্তেগফার’ পাঠ করুন। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহর কাছে শক্তিশালী মুমিন দুর্বল মুমিন থেকে বেশি উত্তম ও প্রিয়। তুমি ওই জিনিসে যত্নবান হও, যার মধ্যে তোমার উপকার আছে এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও আর উৎসাহহীন (হিম্মতহারা) হয়ো না। (মুসলিম, হাদিস : ৪৮২২)
ছয়. কর্মোচ্ছল ও উদ্যমীদের সঙ্গে চলাফেরা
তৎপর, উদ্যমী ও কর্মচঞ্চল মানুষের সঙ্গে ওঠাবসা করুন। নেককার মানুষের সংস্পর্শ গ্রহণ করুন। এতে নিজের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হবে। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘হে ঈমানদাররা, আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১১৯)
সাত. অহেতুক ও অপ্রয়োজনীয় কাজ নয়
গোটা জীবনকে এই মূলনীতির অধীনে নিয়ে আসুন যে আমি কোনো অহেতুক কাজ করব না; আমি কোনো অহেতুক কথা বলব না। এই প্রতিজ্ঞা আপনার জন্য নেক কাজ ও কল্যাণময় কাজ করা সহজ করে দেবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘একজন ব্যক্তির ইসলামের পরিপূর্ণতার একটি লক্ষণ হলো, তার জন্য জরুরি নয়—এমন কাজ সে ত্যাগ করে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২২৩৯)
মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন।