প্রতীকী ছবি

ফেসবুক পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বৃহত্তম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। লেখালেখি ও চিন্তা বিনিময়ের উন্মুক্ত প্লাটফর্ম। সত্য ও সুন্দরের চর্চারও অন্যতম একটি মাধ্যম বলা যায়। কিন্তু ফেসবুকে যে যার মতো করে ব্যবহার করে।

চলুন আজ জেনে নিই, ইসলাম অনুসারে আমাদের ফেসবুক পোস্টগুলো কেমন হওয়া উচিত।

এক. সততা ও নিষ্ঠা

আত্মপ্রদর্শন মুমিনের চরিত্র নয়। মুমিন জীবনের প্রতিটি কথা ও কাজে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে। কোরআনুল কারিমে আল্লাহ বলেছেন, “আপনি বলুন, ‘আমার সালাত, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ সবই আল্লাহ রাববুল আলামীনের উদ্দেশ্যে নিবেদিত, যার কোন শরিক নেই’।” (সুরা আনআম, আয়াত : ১৬২)

দুই. লাজুকতা ও সংকোচ-সংযম

মানুষের নিন্দা আর আল্লাহর শাস্তির ভয় মনে থাকলে মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকা সহজ। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘পূর্বের যুগের নবীদের অবশিষ্ট কথা যা পরবর্তী যুগের উম্মতরা পেয়েছে, তা হল, যখন তুমি লজ্জা করবে না, তখন তুমি যা চাও তাই কর।’ (বুখারি, হাদিস: ৬১২০)

ফেসবুকে আপনার লেখার শৈলী হোক সত্য ও সুন্দরের মিশেলে চমৎকার। আর এক্ষেত্রে লাজুকতা আপনার প্রধান সহায়ক হতে পারে।

তিন. মিথ্যা থেকে দূরে থাকুন

উদ্দেশ্য যতই মহৎ হোক মিথ্যা কখনো লিখবেন না। আল্লাহর রাসুল (সা.) সা. বলেছেন, ‘মিথ্যা পাপের পথ দেখায় এবং পাপ জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়।’ (বুখারি, হাদিস: ৬০৯৪)

অন্যত্র বলেছেন, ‘ধ্বংস সেই ব্যক্তির জন্য, যে লোকের মনোরঞ্জনের জন্য মিথ্যা বলে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৯০)

চার. ভালো কিছু লিখুন

আপনার পোস্টের মাধ্যমে কেউ যদি ভালো কিছু খুঁজে পায়, তবে তা অত্যন্ত আনন্দের। এর সাওয়াব সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ভালো কাজের পথ প্রদর্শনকারী তা সম্পাদনকারীর মত পুণ্য লাভ করে।’ ( মুসলিম, হাদিস : ১৬৭৭)

পাঁচ. মন্দের প্রতিবাদ করুন

সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি ফরজ বিধান। কোরআনুল কারিমে বলা হয়েছে, ‘তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যাণের জন্যেই তোমাদের আবির্ভাব। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে।’ (আলে ইমরান, আয়াত : ১১০)

চলমান সময়ে এ কাজের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অন্যতম সফল একটি মাধ্যম।

পাঁচ. বিশুদ্ধ ভাষায় লিখুন

মহানবী (সা.) স্বয়ং বিশুদ্ধ ভাষা বলতেন। কোরআনুল কারিমও অবতীর্ণ হয়েছে বিশুদ্ধ ভাষায়। আপনিও বিশুদ্ধ ভাষায় লিখুন। বিশুদ্ধ ভাষাই পারে মানুষকে আন্দোলিত করতে।

ছয়. উদ্ধৃতি উল্লেখ করুন

অন্য কারো লেখা নিজের বলে চালিয়ে দেয়া মারাত্মক অন্যায়। প্রখ্যাত ফকিহ ইবনু আব্দিল বার (রহ.) বলেছেন,  ‘জ্ঞানকে তার বক্তার প্রতি সম্বন্ধ করুন।  এতে জ্ঞানের উপকারিতা সর্বব্যাপী হয়।’ ( জামিউ বায়ানিল ইলম, ২/৯২২)

সাত. অহংকার প্রকাশ নয়

রূপ-গুণ, ধন-সম্পদ সবই আল্লাহর দান। তিনি চাইলে যে কোন সময় ছিনিয়ে নিতে পারেন। তাই নেয়ামতের শুকরিয়া জ্ঞাপন করুন। কোরআনুল কারিমে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ উদ্ধত ও অহংকারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা হাদিদ, আয়াত : ২৩)

আট. আত্মপ্রশংসাকে না বলুন

আত্মপ্রশংসা একটি সর্বনাশা ব্যাধি। এ থেকে উত্তরণ জরুরি। কোরআনুল কারিমে বলা হয়েছে, ‘তোমরা আত্মপ্রশংসা করবে না,  আল্লাহই জানেন কে ভালো মুত্তাকি।’ (সুরা নাজম, আয়াত : ৩২)

দশ. না জেনে লিখতে নেই

যা কিছুই লিখেন জেনে লিখুন। বিশেষত দ্বীনি বিষয়ে পণ্ডিতি করে নিজস্ব ব্যাখ্যা দাঁড় করানো চরম অপরাধ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যা আমি বলি নি তা আমার নামে চালিয়ে দেওয়ার পরিণাম জাহান্নাম।’ (বুখারি, হাদিস : ১০৯)

এগার. দোষচর্চা কাম্য নয়

পরচর্চা অত্যন্ত গর্হিত ও নিন্দনীয় অপরাধ। এটি সমাজকে অসুস্থ করে তোলে। দোষে-গুণেই মানুষ, যদ্দুর সম্ভব মানুষের দোষ গোপন রাখুন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ-ত্রুটি গোপন করবে, আল্লাহ কিয়ামতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন করবেন।’ (বুখারি, হাদিস : ২৪৪২)

বারো. গুজব ছড়ানো বড় গুনাহ

সত্য যাচাই না করে কোনো কিছু পোস্ট বা শেয়ার করবেন না। এতে ব্যক্তি ও সমাজ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিশৃঙ্খলার কবল থেকে মুক্তি পাবে। কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মুমিনগণ! কোনো পাপাচারী তোমাদের কাছে সংবাদ নিয়ে এলে তা যাচাই কর, পাছে অজ্ঞতাবশত কোনো পক্ষের ক্ষতি করে বসো, এবং পরে কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হতে হয়।’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত : ৬)

হাবিবুল্লাহ বাহার।।  তরুণ আলেম, লেখক ও অনুবাদক