কাবার খতিব জুমায় যে উপদেশ দিয়েছেন
পবিত্র মসজিদুল হারামের সম্মানীত ইমাম ও খতিব শায়খ ড. উসামা বিন আবদুল্লাহ খাইয়াত জুমার খুতবায় গুরত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। তার দীর্ঘ বক্তব্যর বিশেষ কয়েকটি দিক তুলে ধরা হলো-
শুরুতেই তিনি মহান আল্লাহর প্রশংসা ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরুদ ও সালাম পেশ করেন। অতঃপর বলেন, আমাদের সবসময় আল্লাহকে ভয় করতে হবে। হৃদয়ে সদা সর্বদা তার স্মরণ জাগরুক রাখা ও কাল বিচার দিবসে আল্লাহর সামনে দণ্ডায়মান হওয়ার কথা মনে রাখতে হবে।
বিজ্ঞাপন
অন্ধকার থেকে আলোর পথে
মহান আল্লাহ তাআলা যাদের হৃদয় ঈমানের আলোয় আলোকিত করেছেন, বিশ্বাসের বরফে শীতল করেছেন— তারা বড়ই সৌভাগ্যবান। আল্লাহর পক্ষ থেকে নবীদের সত্যবাণী আনয়নের মাধ্যমে যারা হেদায়েতের পথের দিশা পেয়েছেন। অন্তর থেকে অজ্ঞতা, ভ্রষ্টতা, কপটতা ও কুসংস্কার দূর করেছেন। অথচ সেই সত্য পয়গাম ছাড়া তাদের মুক্তির কোনো পথ জানাছিলনা। সন্ধ্যান ছিল না— অন্ধকার বিদূরিত করার কোনো পথ-পন্থা। জানা ছিল না মন্দ পরিণাম থেকে মুক্তির সহজ কোনো রাস্তা। আল্লাহর এ মহান নিয়ামতের কথা স্মরণ করা ও তার কৃতজ্ঞতা আদায় করা আবশ্যক।
প্রভূর নিয়ামতরাজিতে আমরা ডুবন্ত
আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের অগণিত নিয়ামতে ডুবিয়ে রেখেছেন। যেগুলো গণনা করে শেষ করা যাবেনা। তবে সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ ও মহা নিয়ামত হলো- ‘ইসলাম ধর্মের অনুসারী বানানো’। যে ধর্ম বা জীবনব্যবস্থা তার মনোনীত। যে ধর্মের একনিষ্ঠ অনুসারীর প্রতি তিনি সন্তুষ্ট ও অনুগ্রহশীল। যাদের ‘শরিয়াহ মুহাম্মাদিয়্যাহ’ তথা মুহাম্মদ (সা.)-এর অনুসারী বানিয়েছেন, তাদের প্রতি তিনি বড়ই দয়া ও অনুগ্রহ করেছেন।
উম্মতে মুহাম্মদী শ্রেষ্ঠ উম্মত
আল্লাহ তাআলা ইসলাম ধর্মের অনুসারী বানানোর সঙ্গে সঙ্গে কীভাবে বান্দা তার মহান রবের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক স্থাপন করা যায়, তার সন্তুষ্টি অর্জন করা যায় ও জীবনচলার পথে সংঘটিত ত্রুটি-বিচ্যুতি, অন্যায়-অপরাধ ও পাপরাশি মার্জনা করে সুন্দর-সফেদ ও পবিত্র জীবন লাভ করা যায় সে রাস্তাও বাতলিয়ে দিয়েছেন।
‘উম্মতি মুহাম্মদী’ বা মুহাম্মদ (সা.) এর উম্মতের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব অন্যান্য উম্মতের তুলনায় অনেক বেশি। আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুহাম্মদীর মর্যাদা, দেশে দেশে তাদের কর্তৃত্ব-আধিপত্য ও সম্মানের কথা ঘোষনা করেছেন।
এ প্রসঙ্গে ইমাম আহমদ (রহ.) তার বিখ্যাত হাদিসগ্রন্থ মুসনাদে আহমদে উবাঈ ইব্নে কা’ব (রা.)-এর সূত্রে একটি হাদিস বর্ণনা করেন। রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘তুমি এই উম্মতের জন্য সু-সংবাদ দাও গৌরব, জমিনে রাজত্বের, আল্লাহপ্রদত্ত সাহায্য ও দ্বীনের সমুন্নতির। যারা পরকালের আমল দ্বারা ইহকাল অর্জনে ব্যস্ত, প্রকৃতার্থে পরকালে তাদের কোনো অংশ থাকবেনা।’
ইসলামই সৌন্দর্যের প্রতীক
এ কথা দিবালোকের ন্যায় সত্য ও স্পষ্ট যে ইসলামি শরিয়তের অনেক সৌন্দর্যের দিক রয়েছে। যেগুলো সংখ্যায় সিমাবদ্ধ করা সম্ভব নয়। অন্যান্য ধর্মে যেগুলোর ছিঁটেফোটাও নেই। তবে এর সৌন্দর্যের দিক ফুটিয়ে তোলার জন্য এতটুকুই উল্লেখ করা যথেষ্ট যে, মহান আল্লাহ তাআলা সকলের রুহ-প্রাণ, শ্বাস-প্রশ্বাস, ধন-সম্পদ,বিবেক-বুদ্ধি, ইজ্জত-আবরু হেফাজত করেছেন।
বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে কাউকে হত্যা করা বৈধ ঘোষণা হলেও সেটা ন্যায় ও সঙ্গত কারণেই হয়ে থাকে। প্রতিটি মানুষের হক ও প্রাপ্য ইসলামি শরিয়ত নিশ্চিত করেছে। অন্যায়ভাবে কারো সম্পদ আত্মসাৎ করার অধিকার দেয়নি।
সুতরাং একজন প্রকৃত মুমিন ইসলামের বিধি-বিধান ও মূলনীতির ব্যাপারে কখনো সংশয়-সন্দেহ পোষণ করতে পারেনা। বরং মনে-প্রাণে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা যে, দুনিয়া ও আখিরাতের যাবতীয় সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধি, কল্যাণ ও সফলতা একমাত্র ইসলামী জীবনব্যবস্থাতেই নিহিত রয়েছে।
আরবি থেকে অনুবাদ করেছেন : আবুবকর ইসরাফীল। শিক্ষার্থী : আরবী বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।