খাঁচায় পাখি পোষা কি জায়েজ?
অনেক বাসায় ছোট ছেলেমেয়েরা পাখি পছন্দ করে। বড়রাও পাখি পুষতে শখ করে। সে কারণে বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে পাখি পালনের দৃশ্য দেখা যায়। ভিন্নভাবে বললে পাখি পালন একটি সুন্দর দৃশ্যও বটে।
আমাদের এক ভাই প্রশ্ন করে জানতে চেয়েছেন, আমি কয়েকটি পাখি কিনেছি। পাখিগুলোকে খাঁচায় রাখি। আমার খুব ভালো লাগে পাখি পুষতে। তবে আমি তাদের নিয়মিত খাবার দিই ও আদর যত্ন করি।
বিজ্ঞাপন
আমার পরিচিত একজন বললেন, কোনো প্রাণীকে এভাবে খাঁচায় বন্দি করে রাখা উচিত নয়। এতে প্রাণীর কষ্ট হয়। তাই এখন আমার জানা প্রয়োজন যে, খাঁচাবন্দি করে এভাবে পাখি লালন-পাললের বিধান কী? এটা কি জায়েজ নাকি গুনাহ হচ্ছে?
উত্তর : পাখি খাঁচায় জন্ম আবার খাঁচাতে বড় হয়েছে; ধরে এনে বন্দি করা হয়নি— এমন পাখি পালন জায়েজ। তবে শর্ত হলো- এবং বড় হয় এসব পালিত পাখিকে নিয়মিত খাবার পানি ও চিকিৎসা দিয়ে সুন্দরভাবে পরিচর্যা করতে হবে।
ফিকহের কিতাবগুলো রয়েছে, খাবার-পানির সঠিক ব্যবস্থা করে ও কোনো ধরনের কষ্ট না দিলে— খাঁচায় বন্দি করে পাখি পোষা জায়েজ। (আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল : ৪/৪৫৪, ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ১১/১৭৩)
হাদিসে এসেছে, কিছু সাহাবি খাঁচায় পাখি রেখে লালন-পালন করেছেন বলে। হিশাম ইবনে উরওয়া (রা.) বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের (রা.) মক্কায় ছিলেন। তখন সাহাবিরা খাঁচায় পাখি রাখতেন।’ (আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৩৮৩)
আনাস (রা.) বলেন, ‘আমার এক ভাই ছিল; তাকে আবু উমায়ের বলে ডাকা হতো। সে তখন মায়ের দুধ খেত না। যখনই সে নবী (সা.)-এর কাছে আসত, তিনি বলতেন, হে আবু উমায়ের! কী করছে তোমার নুগায়ের? (একটি পাখির নাম।) সে নুগায়ের নিয়ে খেলত। তিনি আমাদের ঘরে নামাজের জন্য দাঁড়াতেন এবং আমরাও তার পেছনে দাঁড়াতাম। আর তিনি আমাদের নিয়ে নামাজ আদায় করতেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৬১২৯; মুসলিম, হাদিস : ২১৫০)
খাঁচায় পাখি পালার শর্ত ও নিয়ম
শখের বশে খাঁচায় পাখি পালতে গেলে— যথাযথভাবে পাখিগুলোর পরিচর্যা করতে হবে। দানাপানি দিতে না পারলে বা আদর-যত্ন সম্ভব না হলে কিংবা বন্দি করে রাখার কারণে পাখি কষ্ট পেলে— খাঁচায় আটকে রাখা জায়েজ হবে না। বরং ছেড়ে দেওয়া আবশ্যক।
ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘এক নারীকে একটি বিড়ালের জন্য শাস্তি দেওয়া হয়েছে। সে তাকে বেঁধে রেখেছিল এবং অবশেষে বিড়ালটি মারা গিয়েছিল, পরিণতিতে নারী তারই কারণে জাহান্নামে প্রবেশ করল। সে যখন তাকে বেঁধে রেখেছিল, তখন তাকে আহার ও পানি দিত না এবং তাকে ছেড়েও দিত না যে, সে কীটপতঙ্গ ধরে খাবে।’ (বুখারি, হাদিস : ২৩৬৫; মুসলিম, হাদিস : ২২৪২)
প্রসঙ্গত খেয়াল রাখা উচিত যে, খাঁচায় বন্দি করলে— যেসব পাখির কষ্ট হতে পারে, সেগুলোকে খাঁচায় বন্দি না করাই উচিত।
তথ্যসূত্র : (বুখারি, হাদিস : ৬২০৩; ফাতহুল বারি : ১০/৬০১; ফাতাওয়া কারিইল হেদায়া, পৃষ্ঠা : ২০০; রদ্দুল মুহতার : ৬/৪০১)