কিয়ামতের দিন যারা আল্লাহর সুদৃষ্টি পাবে না
আল্লাহ তাআলা কিছু মানুষের প্রতি কেয়ামতের দিন তাকাবেন না। তাদের দিকে তিনি রহমতের দৃষ্টি দেবেন না। কারণ, তাদের পাপ ও গুনাহ। তারা আলাদা আলাদা ক্ষেত্রে আল্লাহর দেওয়া সীমা লঙ্ঘন করার অপরাধে।
যাদের প্রতি আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন তাকাবেন না, তাদের সংক্ষিপ্ত তালিকা ও তাদের নিয়ে হাদিসের বক্তব্য।
বিজ্ঞাপন
এক. উপকার করে যে খোঁটা দেয়
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তিন ধরনের লোক এমন আছে, মহান আল্লাহ যাদের সঙ্গে কথা বলবেন না, কিয়ামতের দিন তাদের দিকে (রহমতের দৃষ্টিতে) তাকাবেন না এবং তাদের পবিত্র করবেন না; বরং তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। আমি (আবু হুরাইরা) বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, তারা কারা? ওরা তো ক্ষতিগ্রস্ত! তিনি বলেন, টাখনুর নিচে কাপড় পরিধানকারী, ব্যবসার সামগ্রী মিথ্যা শপথ দিয়ে বিক্রয়কারী এবং কাউকে কিছু দান করার পর তার খোঁটা দাতা।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৯৪)
দুই. পোশাক পরে যে অহংকার করে
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিন ওই ব্যক্তির দিকে (রহমতের দৃষ্টিতে) তাকাবেন না, যে অহংকারবশত পোশাক প্রলম্বিত (ও প্রদর্শিত) করে।’ (বুলুগুল মারাম, হাদিস : ১৪৫১; বুখারি, হাদিস : ৫৮৫৬)
তিন. রুকু-সিজদার মাঝে যে সোজা হয়ে দাঁড়ায় না
ত্বলাক বিন আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিন ওই নামাজির দিকে (রহমতের দৃষ্টিতে) তাকাবেন না, যে রুকু ও সিজদার মাঝখানে সোজা হয়ে দাঁড়ায় না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৬৫)
চার. টাখনুর নিচে কাপড় পরিধানকারী
আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিন তিন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না, তাদের সঙ্গে কোনো কথাও বলবেন না, তাদের পরিশুদ্ধতা প্রত্যয়ন করবেন না, তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি। ...তারা হলো—যেসব পুরুষ পায়ের গিরার নিচে (পায়ের উঁচু হাড়) কাপড় পরিধান করে, মিথ্যা শপথ করে পণ্য চালিয়ে দেয় এবং দান করে খোঁটা দেয়। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২৫৬৩)
পাঁচ-সাত. অহংকারী দরিদ্র, বৃদ্ধ ব্যভিচারী ও মিথ্যাবাদী শাসক
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তিন শ্রেণির লোকের সঙ্গে কথা বলবেন না, তাদের পবিত্র করবেন না এবং তাদের দিকে রহমতের দৃষ্টি দেবেন না। তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি। তারা হলো, বৃদ্ধ ব্যভিচারী, মিথ্যাবাদী শাসক ও অহংকারী দরিদ্র।’ (মুসলিম শরিফ, হাদিস : ২৯৬)
আট-দশ. মাতা-পিতার অবাধ্য, নারী হয়ে পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বনকারী ও দাইয়ুস
আবদুল্লাহ বিন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, তিন ধরনের মানুষের দিকে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন দৃষ্টিপাত করবেন না। মাতা-পিতার অবাধ্য, পুরুষের সদৃশ অবলম্বনকারী নারী এবং দাইয়ুস। আর তিন প্রকার লোক জান্নাতে যাবে না। মাতা-পিতার অবাধ্য, মদ পানে আসক্ত এবং অনুদানের পর খোঁটাদাতা।’ (মুসনাদ আহমদ, হাদিস : ৬১১)
দাইয়ুস ওই ব্যক্তি, যার স্ত্রীর কাছে পর-পুরুষ প্রবেশ করে, অথচ সে কিছুই মনে করে না; বরং চুপ থাকে।
এগারো. সমকামী ও পায়ুপথে সঙ্গমকারী
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন ওই ব্যক্তির দিকে দৃষ্টিপাত করবেন না, যে ব্যক্তি পুরুষের সঙ্গে কিংবা স্ত্রীর সঙ্গে পায়ুপথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে।’ (তিরিমিজি, হাদিস নম্বর : ১১৭৬)
বারো. মিথ্যা শপথ করে যারা পণ্য বিক্রয় করে
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার এবং নিজেদের শপথকে তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে, এরা আখিরাতের কোনো অংশই পাবে না এবং আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাদের সঙ্গে কথা বলবেন না, তাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করবেন না এবং তাদের পবিত্র করবেন না, বস্তুত তাদের জন্য আছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৭৭)
আল্লাহ তাআলা আমাদের এই সব পাপ থেকে দূরে রাখুন। আখেরাতের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করার তাওফিক দিন। আমিন।