রিজিক বৃদ্ধির আমল
রুজি-রোজগার ও রিজিক সমৃদ্ধ হোক এবং জীবনে প্রাচুর্য আসুক— এটা কে চায় না? সবাই সুখ-শান্তি, সমৃদ্ধি ও প্রাচুর্যতা কামনা করে। অন্য সব কিছুর মতো এসবও মহান আল্লাহ দান করে থাকেন। তিনি মানুষের অভাব-অনটন দূর করেন। দুঃখ-কষ্ট ও বিষাদ-যন্ত্রণা লাঘব করেন। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রশান্তি ও সাফল্য দেন। তাই প্রতিক্ষণে তার কাছে চাইতে হবে। কল্যাণ ও সাহায্যের প্রার্থনা করতে হবে।
পবিত্র কোরআনুল কারিম ও হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির বহু আমল বর্ণিত হয়েছে। একসঙ্গে সবগুলো আলোচনা করতে গেলে— লেখা অনেক দীর্ঘ হয়ে যায়। পাঠকের সুবিধার্থে এখানে কয়েকটি আমল উল্লেখ করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এক. অসহায়ের প্রতি বিনম্র আচরণ
যেকোনো বিপদ-আপদক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো ইবাদত। এটি মুসলিমদের সামাজিক দায়িত্বও বটে। মুসআব বিন সাদ (রা.) যুদ্ধজয়ের পর মনে মনে কল্পনা করলেন, নিজের বীরত্ব ও শৌর্যবীর্যের কারণে বোধহয় তিনি অন্যের চেয়ে বেশি মর্যাদাবান। এমন অবস্থায় মহানবী (সা.) তাকে বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে থাকা দুর্বলদের কারণে তোমাদের সাহায্য করা হয় এবং রিজিক দেওয়া হয়।’ (বুখারি, হাদিস : ২৮৯৬)
দুই. আল্লাহর রাস্তায় খরচ করা
‘দানে বাড়ে ধন’। এটা সর্বজনবিদিত। এ বিষয়ে কোরআনের বক্তব্য এমন—বলে দাও, ‘নিশ্চয়ই আমার রব তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা রিজিক প্রশস্ত করেন এবং সংকুচিত করেন। আর তোমরা যা কিছু আল্লাহর জন্য ব্যয় করো, তিনি তার বিনিময় দেবেন এবং তিনিই শ্রেষ্ঠ রিজিকদাতা।’ (সুরা : সাবা, আয়াত : ৩৯)
তিন. ইবাদতের জন্য নিজেকে ফারেগ করা
আল্লাহর ইবাদতের মাধ্যমে অভাব দূর হয়। কেউ যখন ইবাদত-বন্দেগির জন্য নিজেকে ফারেগ করে, আল্লাহ তাআলা তার রিজিকে বরকত দান করেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর (সা.) বলেন- “আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে আদম সন্তান, আমার ইবাদতের জন্য তুমি ঝামেলামুক্ত হও, আমি তোমার অন্তরকে প্রাচুর্য দিয়ে ভরে দেব এবং তোমার দারিদ্র্য ঘুচিয়ে দেব। আর যদি তা না করো, তবে তোমার হাত ব্যস্ততায় ভরে দেব এবং তোমার অভাব দূর করব না।’” (তিরমিজি, হাদিস : ২৬৫৪)
আরও পড়ুন : যে ৬ আমলে রিজিক বাড়ে
চার. অভাবমুক্তির জন্য দোয়া করা
আল্লাহর কাছে চাইলে আল্লাহ বান্দার হাত ফিরিয়ে দেন না। তাই অভাবমুক্তি ও প্রাচুর্যতার জন্য আল্লাহ কাছে চাইতে হয়। তাহলে তিনি ঐশ্বর্য ও বিত্ত-বৈভব দান করবেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব।’ (সুরা মুমিন, আয়াত : ৬০)
পাঁচ. হজ-ওমরাহ করা
হজ-ওমরাহ পালনে রিজিক বাড়ে। যত বেশি করা হয়, তত বৃদ্ধি পায়। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা একের পর এক হজ ও ওমরাহ করতে থাকো, কেননা তা অভাব ও গুনাহ দূর করে দেয়, যেভাবে কামারের হাপর লোহা, সোনা ও রুপার ময়লা দূর করে দেয়।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৮১৫)
ছয়. আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করা
হিজরত করা মানে আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে স্বদেশ ত্যাগ করা। কোনো ব্যক্তির জীবনে এমনটা হয়ে থাকলে, তারও রিজিকে প্রশস্ততা আসে। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘আর যে আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করবে, সে জমিনে বহু আশ্রয়ের জায়গা ও সচ্ছলতা পাবে। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের উদ্দেশে মুহাজির হয়ে নিজ ঘর থেকে বের হয় তারপর তাকে মৃত্যু পেয়ে বসে, তাহলে তার প্রতিদান আল্লাহর ওপর অবধারিত হয়। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১০০)
মহান আল্লাহ আমাদের বেশি বেশি নেক আমল করার তাওফিক দান করুন। আমাদের জীবনে কষ্ট-দুঃখ দূর করে ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্য দান করুন। আমিন।