সুখের খোঁজে ইসলাম গ্রহণ করেছি
একটা ভালো চাকরি ও বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট— সবকিছু আমার ছিল। একজন সুখী মানুষের সাধারণত যেসব চাহিদা থাকে, তার কোনো কমতি ছিল না আমার। আমাদের সংস্কৃতিতে প্রচলিত পার্থিব মান অনুযায়ী আমি একজন সফল মানুষ ছিলাম। সব মিলিয়ে আমার সুখী ও আনন্দময় জীবন আবশ্যক ছিল। কারণ, সবকিছুই দুর্দান্ত ও খুবই চমৎকারভাবে চলছিল।
কিন্তু এসব সত্ত্বেও আমি হাহাকার অনুভব করতাম। আমার ভেতর অদ্ভুত শূন্যতা বিরাজ করতো। তখন আমি খ্রিস্টান ছিলাম; কিন্তু খ্রিস্টধর্ম আমার আগ্নেগিরির জ্বলন-শূন্যতা নেভাতে সক্ষম ছিল না।
বিজ্ঞাপন
তাছাড়া আমার দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্কটি যখন কার্যকর হয়নি, তখন আমার অন্তরের এই শূন্যতাটি একটি বিশাল অন্ধকার কূপে পরিণত হয়েছিল— যা আমাকে গলাধঃকরণ করতে সদা প্রস্তুত।
শুধু একজন মুসলিম
মেক্সিকোর একটি নিরিবিলি ছোট শহরে আমার নিবাস। বড়জোর মেক্সিকো সিটি থেকে ঘণ্টা দেড়েকের পথ। সে সময় মুসলিম ও ইসলাম সম্পর্কে আমি যা জানতাম— তা ছিল কেবল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রাপ্ত সংবাদ। তখন আমি বিশ্বাস করতাম, প্রতিটি মুসলিম মূলত সন্ত্রাসী। তাদের থেকে কোনোভাবে ভালো কিছুর আশা করা যায় না।
যাই হোক, আমার একজন মুসলিম বন্ধবী ছিল। কয়েক বছর আগে সে ইসলামে দীক্ষিত হয়েছে। কিন্তু ইসলাম গ্রহণের পর মেক্সিকো থেকে দূরে চলে গেছে। সে একজন মুসলিমকে বিয়ে করেছে। তাদের একটি বাচ্চাও আছে। আমার কঠিন সময়গুলোতে কেবল সে-ই আমার পাশে দাঁড়াতো। সে আমার শূন্যতা অনুধাবন করতে পারতো। আমার অন্তঃপুরের নিরম্বুতা সম্পর্কে জানতো— যেটি আমাকে নিঃশেষ করে দেওয়ার উপক্রম হয়েছিল।
আমি আমার জীবন কীভাবে আগের গতিপথে ফিরিয়ে আনবো— সে ব্যাপারে বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যরা আমাকে নানা লেকচার ও বক্তব্য দিচ্ছিল। কিন্তু আমার সেই বান্ধবী এমনটা করার পরিবর্তে আমাকে শুধু আল্লাহ সম্পর্কে জানিয়েছিল। সে আমাকে তাঁর মহিমান্বিত পবিত্রতা, দয়া ও করুণা সম্পর্কে বলেছিল। এসব বিষয়ে সে আমার সঙ্গে ইন্টারনেটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চ্যাট করতো।
আমার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ
বন্ধুর নিঃস্বার্থ প্রচেষ্টার কারণে আমি বুঝতে শুরু করি যে— আমার সৃষ্টিকর্তা হলেন- মহান আল্লাহ তাআলা। আর এই উপলোব্ধি আমার জন্য বড় স্বস্তি ছিল। আমার ভেতরে ক্রম বৃদ্ধিমান অন্ধকূপে এটি ছিল— প্রথম আলোক-রেখা।
আমি মনে-প্রাণে আল্লাহর ইবাদত করতে চাইছিলাম। কারণ, আমি বুঝে নিয়েছিলাম- আমি যদি যথাযথভাবে আল্লাহর ইবাদত করি, তাহলে তিনি আমার সব সমস্যা সমাধান করে দেবেন। আমাকে প্রশান্তি ও তৃপ্তি দান করবেন। আমার রাজ্যের শূন্যতা দূর করবেন।
একদিন রাতে। আল্লাহ আমার হৃদয়-পথ ঘুরিয়ে দিলেন। আমি কায়িক ও প্রাকৃতিকভাবে সিজদায় পড়ে গেলাম। ফলে আমি আল্লাহর দরবারে সিজদা জ্ঞাপন করলাম। সেদিন আমি অঝোরে কেঁদে ছিলাম। অশ্রুবিগলিত নয়নে আমি আমার হৃদয় আমার সৃষ্টিকর্তার কাছে সমর্পণ করেছি। কামনা করেছি- তিনি যেন আমাকে গ্রহণ করেন। আমার জীবন কবুল করেন।
সঠিক পথে ফিরে
প্রায় একমাস পর। আমি মেক্সিকোর একটি মসজিদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমি চাইছিলাম- আমার ইসলাম গ্রহণের বিষয়টিকে অফিসিয়ালভাবে করতে। আক্ষরিক ও মৌলিকভাবে আমি মুসলিমে পরিণত হতে।
মসজিদে দায়িত্বশীলকে আমার মুসলিম হওয়ার ইচ্ছের কথা জানালাম। তখন সে আমাকে করণীয় বিষয়বস্তু সম্পর্কে অবগত করে। সব ধরনের নিয়ম-নীতি ও বিধি-রীতি জানিয়ে দেয়। প্রার্থনা, হিজাব পরিধান ও অন্যান্য বিষয়ে ধারণা দেয়। সে খুব উৎসাহী হয়ে এসব আমাকে জানায়।
এর তিনদিন পর আমি মসজিদে ফিরে এলাম। হাতে করে তখন আমি হিজাব নিয়ে আসলাম। ইসলাম গ্রহণের সাক্ষ্য-বাণী পড়লাম। সে সময় থেকে আমি নিয়মিত হিজাব পড়তে আরম্ভ করি। কীভাবে আল্লাহর ইবাদত করতে হয়— তাও শিখতে শুরু করি।
আল্লাহর ইবাদত শেখা
আমি আল্লাহর ইবাদত করতে চাইছিলাম। কারণ, আমি জানতাম- এটা আমার জন্য সর্বোত্তম। পবিত্র কোরআনের প্রথম অধ্যায় আল-ফাতিহা আমি শিখতে করতে শুরু করি। এছাড়াও আমি আরো ছোট ছোট কয়েকটা সুরা শিখে নিই। যাতে করে আমি আমার নামাজ আদায় করতে পারি।
ধীরে ধীরে আমি আমার জীবনে পরিবর্তন আনি। জীবনযাত্রায় নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে আরো অধিক পরিমাণে আল্লাহর অনুকম্পা লাভে— কিছু বিষয় নির্ধারণ করি।
আমার ধর্মবিশ্বাসে পরিবর্তন আসে। চলন-বলনেও আসে ভিন্নতার ছাপ। যখন আমি খ্রিস্টান ছিলাম, তখন আমি বিশ্বাস করতাম— ঈসা (আ.) আল্লাহর পুত্র। আমি তার কাছে প্রার্থনা করতাম ও বিভিন্ন কিছু চাইতাম। কিন্তু ইসলামে দীক্ষিত হওয়ার পর আমি জানতে পারি— ঈসা (আ.) কেবল একজন মানুষ ও আল্লাহর নবী। আর সমগ্র বিশ্বজগতের প্রতিপালক ও প্রভু শুধু আল্লাহ তাআলা। পাশাপাশি আমি অ্যালকোহল পান করা থেকে বিরত থাকি। এবং শুকরের মাংস খাওয়া বন্ধ করে দিই।
জীবনের পরিবর্তনগুলো
আল্লাহর কাছে আমি দোয়া করেছিলাম— তিনি যেন আমার চাকরি পরিবর্তনের তাওফিক দেন। কারণ, আমি ওয়েস্টার্ন আর্ট স্কুলে কাজ করতাম। আমি আমার কাজের সঙ্গে— ‘আল্লাহকে খুঁজে পাওয়া’ আমার নতুন জীবনের সংমিশ্রণ করতে অস্বস্তি বোধ করছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ, এক বছর পর আমি চাকরি পরির্ব্তন করে নিয়েছি।
কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, অনেক মানুষ আমার সঙ্গে কথাবার্তা বন্ধ করে দেয়। আবার অনেকে নানা ধরনের প্রশ্নবাণ ছুড়তে শুরু করে। বিভিন্ন কঠিন প্রশ্নে জর্জরিত করতে থাকে। অবশ্য প্রতিটি প্রশ্নের সঙ্গে আমার ধর্মতুষ্টি আরো শক্তিশালী হতে থাকে।
কারণ, আমি জানতাম- ইসলাম গ্রহণ করে আমি সঠিক বিষয়টি বেছে করেছি। এখন আমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো- নিজের জন্য কাজ করা। আমি চাই দিন দিন আমি একজন শ্রেষ্ঠ মানুষে পরিণত হতে।
দেখতে দেখতে পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। আল্লাহর শোকর, এই যাত্রাটি আমি কখনো মিস করতে চাই না। আমি এখন বিবাহিত। একটি বাচ্চাও আছে আমার। আমার পরিবার আমার নতুন ধর্মবিশ্বাস ও জীবনযাত্রা মেনে নিয়েছে। আমি মুসলিম হওয়াতে তারা নিদারুণ খুশি। কারণ, তারা দেখছে— মুসলিম হওয়াটা আমার জীবনে সুখ-প্রশান্তির উপলক্ষ্য হয়ে এসেছে।
ডিসকভারিং ইসলামের মাই জার্নি টু ইসলাম থেকে অনুবাদ করেছেন মুফতি মুহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন।
ঢাকা পোস্টের ইসলাম পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। জীবনঘনিষ্ঠ প্রশ্ন ও বিষয়ভিত্তিক প্রবন্ধ-নিবন্ধ পাঠাতে মেইল করুন: dhakapostislam@gmail.com