মৃত্যুর আগে আপনজনেরা যে আমল করবেন
মৃত্যু হচ্ছে আলাদা দুইটি জীবনের মোহনা। দুনিয়ার জীবনের সমাপ্তি আবার আখেরাতের জীবনের সূচনা। দুনিয়াকে বলা হয় ‘মাযরাআতুল আখিরাহ’। তার মানে আখেরাতের শস্যক্ষেত্র। দুনিয়ার জীবন যার যেমন কাটবে, পরকালে এর ফলই সে ভোগ করবে।
স্বাভাবতই কোনো কিছু ভালো হিসেবে বিবেচিত হওয়ার জন্য সমাপ্তি সুন্দর হওয়া জরুরি। হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমল তো শেষ অবস্থা অনুসারেই বিবেচিত হবে। (বুখারি, হাদিস : ৬৬০৭)
বিজ্ঞাপন
আমাদের এক পরিচিত— প্রবাদ-শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। সবমিলিয়ে বলা যায়, আখেরাতে সুন্দর জীবনের জন্য সুন্দর মৃত্যুর বিকল্প নেই। মৃত্যুর সময় যদি ঈমানটাকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া যায়, দুনিয়ার সব দুঃখ-কষ্ট তখন তুচ্ছ। আর যদি এর বিপরীত কিছু হয়, শয়তানের ধোঁকায় কেউ নিজের ঈমান খুইয়ে বসে, জগতে তার চেয়ে হতভাগা আর কে হতে পারে!
এজন্য কোনো মুমূর্ষু ব্যক্তির পাশে যারা উপস্থিত থাকবেন, তাদের প্রথম কর্তব্য হলো— কালেমায়ে তায়্যিবার তালকিন করা। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের মৃত্যুগামী ব্যক্তিদের ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’র তালকিন করো। (মুসলিম, হাদিস : ৯১৬-৯১৭)
তালকিনের অর্থ হচ্ছে- মুমূর্ষু ব্যক্তির পাশে একটু আওয়াজ করে কালেমা পড়তে থাকা। তবে মনে রাখতে হবে, এ অবস্থায় তাকে কিছুতেই মুখে উচ্চারণ করে কালেমা পড়ার আদেশ করা যাবে না। জোরাজুরি করা যাবে না; এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।
আর পড়ুন : কবরের আজাব থেকে বাঁচার দোয়া
তাই নিয়ম হলো- তার পাশে বসে মৃদু আওয়াজে কেবল কালিমা পড়তে থাকা। কালিমা বলুন বা এজাতীয় কিছু না বলা। তার পাশে যখন কালেমা পড়া হবে, তিনি যখন কালেমার আওয়াজ শুনতে পাবেন, আশা করা যায়, তিনি নিজেই কালেমা পড়ে নিতে পারেন।
এ কালেমা যার জীবনের শেষ কথা হবে— তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যার শেষ কথা হবে- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৩১১৮)
মুমূর্ষু ব্যক্তির পাশে থেকে সুরা ইয়াসিন তিলাওয়াত করার কথাও হাদিসে রয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘মৃত্যুপথযাত্রী যারা তাদের পাশে থেকে তোমরা সুরা ইয়াসিন পাঠ করো।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৩১২৩; ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৩০০২)
ছোট ও সহজ এ দুইটি আমলের পাশাপাশি দূরের-কাছের সবারই উচিত— তার জন্য দোয়া করা। তার মৃত্যু যেন সহজ হয় এবং ঈমানের সঙ্গে হয়— আল্লাহর কাছে এই ফরিয়াদ করা।
এই দোয়াটুকুর জন্যে পাশে থাকারও প্রয়োজন নেই। কোনো আপনজনের মুমূর্ষু অবস্থার সংবাদ পেলে তার জন্যে যথাসাধ্য দোয়া করা উচিত। এতে শুধু তারই উপকার হবে-এমন নয়; বরং দোয়াকারীর উপকারও এতে কম নয়।
হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, কোনো মুসলিম ভাইয়ের জন্যে দূর থেকে কোনো দোয়া করলে ফিরিশতারা বলে-তাকেও (দোয়াকারীকেও) যেন এ বিষয়গুলো দান করা হয়। তাই অন্য কারও জন্যে দুআ করা, কারও মুমূর্ষু অবস্থায় সহজ মৃত্যু এবং ঈমানের সঙ্গে মৃত্যুর জন্যে দোয়া করলে লাভবান হবে দোয়াকারী নিজেও।