টানা ১০ বছর রাসূল (সা.) এর সেবা করেছেন যে সাহাবি
আনাস ইবনে মালিক রা. ছিলেন একজন বিখ্যাত সাহাবি। তিনি রাসূল সা.-এর খাদেম ছিলেম। একই সঙ্গে তিনি ছিলেন ইমাম, মুফতি, কোরআনের শিক্ষক, মুহাদ্দিস, খ্যাতিমান রাবী আনসারী সাহাবি।
মদিনার বিখ্যাত খাযরাজ গোত্রের বনু নাজ্জার শাখায় হিজরতের ১০ বছর আগে ৬১২ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। এই গোত্রটি আনসারদের মধ্যে সার্বাধিক সম্মানিত ছিল। আনাসের বাবার নাম ছিল মালিক ইবনে নাদর এবং মায়ের নাম ছিল উম্মু সুলাইম সাহলা বিনতু মিলহান আল আনসারিয়্যা।
বিজ্ঞাপন
আনাসের বয়স যখন আট, নয় তখন তার মা ইসলাম গ্রহণ করেন। এ কারণে রাগ করে তার বাবা সিরিয়ায় চলে যান এবং সেখানেই অমুসলিম অবস্থায় মারা যান।
আনাস রা. যখন ১০ বছরের বালক ছিলেন তখন নবীজি সা. মদিনায় আসেন। আনাসের বয়স অল্প হলেও তিনি খুবই উৎসাহী ছিলেন। রাসূল সা. কুবা থেকে মদিনায় আসার সময় সমবয়সী ছেলে-মেয়েদের সাথে পথের পাশে দাঁড়িয়ে আনাসও স্বাগত সঙ্গীত গেয়েছিলেন। রাসূল সা. মদিনায় এসে স্থির হওয়ার কিছুদিন পর আনাসের মা তাকে রাসূল সা.-এর দরবারে নিয়ে যান। এ সম্পর্কে হজরত আনাস রা. বলেন—
আমার মা আমার হাত ধরে রাসূল সা.-এর কাছে নিয়ে গিয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আনসারদের প্রত্যেক নারী-পুরষ আপনাকে কিছু কিছু হাদিয় দিয়েছে। আমি তো তেমন কিছু দিতে পারিনি। আমার এই ছেলেটি আছে, সে লিখতে জানে। সে এখানো প্রাপ্ত বয়স্ক হয়নি। তাকে আপনার কাছে দিলাম, সে আপনার সেবা করবে। সেই থেকেই আমি একাধারে দশ বছর রাসূল সা.-এর খেদমত করেছি। এর মধ্যে কখনো তিনি আমাকে মারেননি, গালি দেননি,বকাঝকা করেননি এবং মনও খারাপ করেননি। তিনি সব সময় আমাকে এই বলেছেন, হে ছেলে! তুমি আমার গোপন কথা গোপন রাখবে। তাহলেই তুমি ঈমানদার হবে। আমার মা এবং রাসূল সা.-এর সহধর্মীনীরা আমাকে কখনো তার কোনো গোপন কথা জিজ্ঞেস করলে আমি তা বলিনি।
আরও পড়ুন
আনাস রা. টানা ১০ বছর রাসূল সা.-এর সেবা করেছেন। ফজর নামাজের আগে রাসূল সা.-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে দুপুরে বাড়িতে ফিরতেনে। কিছুক্ষণ পর আবার আসতেন এবং আসরের নাামাজ আদায় করে বাড়ি ফিরতেন। আনাসের মহল্লায় একটি মসজিদ ছিল, সেখানে মুসল্লিরা অপেক্ষায় থাকতো তাকে দেখে তারা আসরের নামাজ পড়তো।
দিনের এই সময়গুলো ছাড়াও যেকোনো সময় রাসূল সা.-এর নির্দেশ পালনে প্রস্তুত থাকতেন তিনি। যখনই প্রয়োজন হতো রাসূল সা.-এর ডাকে সাড়া দিতেন। একদিনের ঘটনা—
দুপুরে কাজ শেষ করে তিনি বাড়িতে ফিরছিলেন। পথিমধ্যে তার সববয়সীরা খেলছিলো। তিনি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাদের খেলা দেখছিলেন। কিছুক্ষণ পর রাসূল সা. সেখানে এসে তাকে একটি কাজে পাঠালেন। এবং তার অপেক্ষায় তিনি একটি দেয়ালের ছায়ায় দাঁড়িয়ে থাকলেন। কাজ সেরে বাড়ি ফিরতে তার দেরি হলো। তার মা দেরির কারণ জানতে চাইলেন। তিনি বললেন, আমি রাসূল সা.-এর একটি কাজে গিয়েছিলাম।
আনাস রা. সবসময় রাসূল সা.-এর সঙ্গে থাকতেন। পর্দার আয়াত নাজিল হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি স্বাধীনভাবে রাসূল সা.-এর ঘরে যাতায়াত করতেন। একদিন ফরজ নামাজের আগে রাসূল সা. বললেন, আমি রোজা রাখবো আমাকে কিছু খাবার দাও। আনাস রা. খুব তাড়াতাড়ি কিছু খুরমা ও পানি দিলেন। রাসূল সা. তা দিয়ে সেহরি সেরে ফজরের নামাজের প্রস্তুতি নিলেন।
ওয়াকিদী বলেন, রাসূল সা. এর খাদিমদের মধ্যে যারা তার দরজা থেকে দূরে যেত না. তাদের মধ্যে আনাস একজন।
রাসূল সা. স্নেহভরে আনাস রা.-কে কখনো ছেলে আবার কখনো উনাইস বলে ডাকতেন। তিনি মাঝেমধ্যে আনাসের বাড়িতে যেতেন, আহার করতেন। কখনো দপুরের সময় বিশ্রাম নিতেন, নামাজ আদায় করতেন এবং আনাসের জন্য দোয়াও করতেন। (আসহাবে রাসূলের জীবনকথা, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা, ১৮২)