প্রতীকী ছবি

নতুন বছরের আগমনে জীবন থেকে হারিয়ে যায় ৩৬৫ দিন। মানুষ এগিয়ে যায় কবর পথের দিকে। জীবন থেকে হারিয়ে যায় সময়। সময় মানুষের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। 

মানুষের জীবনে সময়, বছর, মাস, দিন সবই এক একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা। নতুন বছর মানে শুধু সময়ের পরিবর্তন নয়, বরং এটি আত্মপর্যালোচনা, নতুন করে পরিকল্পনা ও  ইসলামের আলোকে জীবন সাজানোর গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ। 

একজন মুমিনের জীবনের লক্ষ্য শুধু দুনিয়ার সফলতা অর্জন নয়; বরং তার চিন্তা-চেতনা ও কর্ম সবকিছুই আখিরাতের সফলতার সঙ্গে সম্পৃক্ত। আর ইসলামের সৌন্দর্য এখানেই। তাই নতুন বছরে মুমিনের ভাবনা কেমন হওয়া উচিত। তা ইসলামের আলোকে জেনে নেওয়া যাক।

আত্মপর্যালোচনা ও তওবা

নতুন বছরের প্রথম কাজ হওয়া উচিত অতীতের ভুল-ত্রুটি বিশ্লেষণ করা। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে খাঁটি তওবা কর, আন্তরিকভাবে। (সূরা তাহরিম,আয়াত : ৮)

হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের আত্মার হিসাব নাও নিজেদের হিসাব দেওয়ার আগে, তাকে ওজন করো নিজেদের ওজন দেওয়ার আগে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৫৯)

আমাদের জীবনের প্রতিটি ভুলের জন্য ক্ষমা চাওয়া উচিত। ভবিষ্যতে  যেন সে ভুল আর না হয়, এ জন্য দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করা উচিত।

আখিরাতের প্রস্তুতি

নতুন বছরের শুরুতে মুমিনের মনে সর্বপ্রথম প্রশ্ন হওয়া উচিত, আমি আখিরাতের জন্য কী প্রস্তুতি নিচ্ছি? আখেরাতের বিভীষিকাময় মুহূর্তের কথা স্মরণ করিয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন—

সে বলবে, হয়! এ জীবনের জন্য যদি আমি কিছু অগ্রে প্রেরণ করতাম। (সূরা ফজর, আয়াত :২৪)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সেই ব্যক্তি বুদ্ধিমান যে নিজের নাফসকে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং মৃত্যুর পরবর্তী সময়ের জন্য কাজ করে। আর সেই ব্যক্তি নির্বোধ ও অক্ষম যে তার নাফসের দাবির অনুসরণ করে আর আল্লাহ তায়ালার কাছে বৃথা আশা পোষণ করে। (ইবনু মাজাহ, হাদিস : ৪২৬০)

রাসূল সা. আরও বলেছেন, সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ সেই, 'যার আয়ু দীর্ঘ হয়েছে ও আমল সুন্দর হয়েছে' (তিরমিজি,২৩২৯)

এই দুনিয়া অস্থায়ী, কিন্তু আখিরাত চিরস্থায়ী। তাই আমাদের সবকিছুর মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত আল্লাহকে রাজি করে জান্নাতের পথে এগিয়ে যাওয়া।

মানুষের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার

আবু হুরায়রা রা. বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—

ধন-সম্পদের (খাইরাত) মাধ্যমে তোমরা ব্যাপকভাবে লোকেদেরকে সন্তুষ্ট করতে সক্ষম হবে না, কিন্তু মুখমণ্ডলের প্রসন্নতা ও প্রফুল্লতা, চরিত্র মাধুর্যের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে তাদেরকে সন্তুষ্ট করতে পারবে। (বুলুগুল মারাম,১৫৩৪)

নতুন বছরে আমরা প্রতিজ্ঞা করতে পারি, অন্যদের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করব, আত্মীয়-স্বজনের হক আদায় করব, যারা বিপদগ্রস্ত তাদের সাহায্য করব।

সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন

আমল ইবাদত একজন মুসলিমের জীবনের মূল উদ্দেশ্য। তবে এর বাইরেও পৃথিবীতে বসবাসের জন্য পরিবার, সমাজ, পেশাগত জীবনের সব দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করা জরুরি। কারণ, মানুষ সামাজিক জীবনের বাইরে যেতে পারে না। এইসব দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করা ইবাদতের অংশ।

নতুন বছরে আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত প্রতিটি কাজ আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে পালন করা।

জ্ঞান অর্জন ও তার প্রচার-প্রসার

ইসলামিক জ্ঞান অর্জন এবং তা প্রচার করা একজন মুমিনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। নতুন বছরের প্রতিজ্ঞা হতে পারে, কোরআন-হাদিসের গভীর অধ্যয়ন এবং চারপাশের মানুষের কাছে ইসলামের সঠিক বার্তা পৌঁছে দেওয়া।

স্বাস্থ্য এবং হালাল উপার্জনে মনোযোগ

শরীর ও মনকে সুস্থ রাখা এবং হালাল পথে উপার্জন করা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা।  রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, হালাল উপার্জন করা প্রত্যেক মুমিনের উপর ফরজ। (বায়হাকি, হাদিস : ৫৫৩৮)

নতুন বছরে সুস্থ জীবনধারা অনুসরণ, বৈধ পথে রুজি-রোজগার নিশ্চিত করার চেষ্টা করতে হবে।

মুমিনের প্রতিটি দিনই যেন হয় নতুন বছরের নতুন দিন। হজরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছিলেন, 'মুমিনের প্রতিটি দিনই তো নববর্ষ।’ 

প্রকৃত মুমিন প্রতিদিনই তার আমলের হিসাব-নিকাশ করবে, নব উদ্যমে নতুন করে পরকালের পাথেয় সংগ্রহে ব্যস্ত থাকবে। আর এটিই হবে মুমিন-মুসলমানের দিন যাপনের প্রকৃত চিন্তা ও ভাবনা।

লেখক : তরুণ আলেম