প্রতীকী ছবি

পৃথিবীতেই জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত সাহাবিদের একজন হজরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রা.। মক্কায় আবরাহার হস্তী বাহিনীর ঘটনার ১০ বছর পর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ইসলামের প্রথমিক দিনগুলোতেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। 

মক্কার বিশিষ্ট ব্যক্তিরা তৎকালীন সময়ে প্রায় প্রতিদিন আবু বকর রা.-এর বাড়িতে বৈঠকে করতেন। এই বৈঠকের নিয়মিত সঙ্গী ছিলেন হজরত উসমান, আব্দুর রহমান, সাদ, তালহা, জুবায়ের। তারা সবাই আবু বকর রা.-এর প্রথম দাওয়াতেই ইসলাম গ্রহণ করেন। 

তাঁকে সাহিবুল হিজরাতাইন বলা হয়। কারণ, তিনি হাবশা এবং মদিনা দুই জায়গাতেই হিজরত করেছিলেন। বদর, উহুদ, খন্দক, তাবুক গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব যুদ্ধেই অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি।

আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রা. মদিনায় হিজরতের পর সাদ ইবনে রাবীআ রা.-এর সঙ্গে রাসূল সা. তাঁর ভ্রাতৃত্ব বন্ধন স্থাপন করে দেন। সাদ ইবনে রাবীআ রা. একজন ধনী সাহাবি ছিলেন। তিনি তাঁর মুহাজির ভাই আব্দুর রহমানের প্রতি ভ্রাতৃত্বের অনন্য নজির দেখালেন। তিনি তাঁকে বললেন—

আল্লাহ তায়ালা আমাকে অঢেল সম্পদ দিয়েছেন। আমি আমার এই সম্পদ সমান দুইভাগে ভাগ করে আপনাকে এক ভাগ দিতে চাই। এবং আমার দুইজন স্ত্রী আছেন, তাদের কোনো একজনকে আপনি পছন্দ করুন। আমি তাঁকে তালাক দেবো। পরে আপনি তাকে বিয়ে করে নিন। 

সাদ ইবনে রাবীআ রা.-এর এই প্রস্তাবে আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রা. বললেন, আল্লাহ তায়ালা আপনার পরিবার ও সম্পদে বরকত দান করুন। আমি আপনার সম্পদ চাই না। আপনি আমাকে বাজারের রাস্তাটি দেখিয়ে দিন।

আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রা. মদিনার বনু কায়নুকার বাজারে ঘি ও পনিরের ব্যবসা শুরু করলেন। ধীরে ধীরে তাঁর ব্যবসার পরিধি বাড়তে থাকলো। তিনি টাকা জমা হলে তিনি এক আনসারী নারীকে বিয়ে করলেন। 

বিয়ের পর রাসূল সা.-এর সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি তাঁর গায়ে হলুদের চিহ্ন দেখে বললেন, তুমি কি বিয়ে করেছো? তিনি বললেন, হ্যাঁ, এক আনসার নারীকে। রাসূল সা. জানতে চাইলেন তাকে দেনমোহর হিসেবে কি দিয়েছো? তিনি বললেন কিছু স্বর্ণ। রাসূল সা. তাঁকে বললেন, একটি বকরি দিয়ে হলেও ওয়ালিমা করো।

তিনি ব্যবসা চালিয়ে যেতে থাকলেন, আরও কিছু টাকা জমা হলে রাসূল সা.-এর নির্দেশমতে ওয়ালিমা করলেন। এভাবে তার সম্পদের পরিধি বাড়তেই থাকলো। তিনি তার সম্পদ অকাতরে ইসলামের পথে ব্যয় করতেন।

নবম হিজরির তাবুক যুদ্ধে রাসূল সা.-এর আহ্বানে সাড়া দিয়ে তিনি হজরত আবু বকর ও উসমান রা. বিপুল পরিমাণ সম্পদ দান করেন। তিনি একই আট হাজার দিনার রাসূল সা.-এর হাতে তুলে দেন। তাঁর এই পরিমাণ দান দেখে মুনাফিকরা কানাঘুষা শুরু করলো। বললো, সে রিয়াকারী। মানুষকে দেখানোর জন্য এতো দান করেছে। মুনাফিকদের জবাবে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, এতো সেই ব্যক্তি যার ওপর আল্লাহর রহমত নাজিল হতে থাকে। (সূরা তাওবা, আয়াত : ৭১)

আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রা.-এর দানের পরিমাণ দেখে ওমর রা. রাসূল সা.-কে বললেন, আমার মনে হচ্ছে আব্দুর রহমান গুনাহগার হচ্ছে, কারণ সে তাঁর পরিবারের জন্য কিছু রেখে আসেনি।

রাসূল সা. আব্দুর রহমান রা.-কে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার পরিবারের জন্য কিছু রেখেছো কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, যা দান করেছি তার থেকেও উৎকৃষ্ট জিনিস পরিবারের জন্য রেখে এসেছি। রাসূল সা. বললেন, কত রেখেছো? তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যে রিজিক, কল্যাণ ও প্রতিদানের অঙ্গীকার করেছেন তাই।

(আসহাবে রাসূলের জীবন কথা, ১ম খন্ড)