ঈসা (আ.) এর জন্মের মুহূর্ত নিয়ে কোরআনে যা বলা হয়েছে
আল্লাহর বিশেষ কুদরতে বাবা ছাড়া জন্মগ্রহণ করেছিলেন হজরত ঈসা আ.। জিবরাঈল আ. আল্লাহর নির্দেশে ঈসা আ.-এর মা মারইয়াম আ.-এর শরীরে ফুঁ দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে স্বাভাবিক নিয়মে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মের পর যখন লোকালয়ের মানুষ তার জন্মের কথা জানতে পারলো তখন মারইয়াম আ.-কে বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন করলো।
বিষয়টি পবিত্র কোরআনে হুবহু তুলে ধরা হয়েছে। বর্ণিত হয়েছে—
বিজ্ঞাপন
وَاذۡکُرۡ فِی الۡکِتٰبِ مَرۡیَمَ ۘ اِذِ انۡتَبَذَتۡ مِنۡ اَہۡلِہَا مَکَانًا شَرۡقِیًّا ۙ ١٦ فَاتَّخَذَتۡ مِنۡ دُوۡنِہِمۡ حِجَابًا ۪۟ فَاَرۡسَلۡنَاۤ اِلَیۡہَا رُوۡحَنَا فَتَمَثَّلَ لَہَا بَشَرًا سَوِیًّا ١٧ قَالَتۡ اِنِّیۡۤ اَعُوۡذُ بِالرَّحۡمٰنِ مِنۡکَ اِنۡ کُنۡتَ تَقِیًّا ١٨ قَالَ اِنَّمَاۤ اَنَا رَسُوۡلُ رَبِّکِ ٭ۖ لِاَہَبَ لَکِ غُلٰمًا زَکِیًّا ١٩ قَالَتۡ اَنّٰی یَکُوۡنُ لِیۡ غُلٰمٌ وَّلَمۡ یَمۡسَسۡنِیۡ بَشَرٌ وَّلَمۡ اَکُ بَغِیًّا ٢۰ قَالَ کَذٰلِکِ ۚ قَالَ رَبُّکِ ہُوَ عَلَیَّ ہَیِّنٌ ۚ وَلِنَجۡعَلَہٗۤ اٰیَۃً لِّلنَّاسِ وَرَحۡمَۃً مِّنَّا ۚ وَکَانَ اَمۡرًا مَّقۡضِیًّا ٢١ فَحَمَلَتۡہُ فَانۡتَبَذَتۡ بِہٖ مَکَانًا قَصِیًّا ٢٢ فَاَجَآءَہَا الۡمَخَاضُ اِلٰی جِذۡعِ النَّخۡلَۃِ ۚ قَالَتۡ یٰلَیۡتَنِیۡ مِتُّ قَبۡلَ ہٰذَا وَکُنۡتُ نَسۡیًا مَّنۡسِیًّا ٢٣ فَنَادٰىہَا مِنۡ تَحۡتِہَاۤ اَلَّا تَحۡزَنِیۡ قَدۡ جَعَلَ رَبُّکِ تَحۡتَکِ سَرِیًّا ٢٤ وَہُزِّیۡۤ اِلَیۡکِ بِجِذۡعِ النَّخۡلَۃِ تُسٰقِطۡ عَلَیۡکِ رُطَبًا جَنِیًّا ۫ ٢٥ فَکُلِیۡ وَاشۡرَبِیۡ وَقَرِّیۡ عَیۡنًا ۚ فَاِمَّا تَرَیِنَّ مِنَ الۡبَشَرِ اَحَدًا ۙ فَقُوۡلِیۡۤ اِنِّیۡ نَذَرۡتُ لِلرَّحۡمٰنِ صَوۡمًا فَلَنۡ اُکَلِّمَ الۡیَوۡمَ اِنۡسِیًّا ۚ ٢٦ فَاَتَتۡ بِہٖ قَوۡمَہَا تَحۡمِلُہٗ ؕ قَالُوۡا یٰمَرۡیَمُ لَقَدۡ جِئۡتِ شَیۡئًا فَرِیًّا ٢٧ یٰۤاُخۡتَ ہٰرُوۡنَ مَا کَانَ اَبُوۡکِ امۡرَاَ سَوۡءٍ وَّمَا کَانَتۡ اُمُّکِ بَغِیًّا ۖۚ ٢٨ فَاَشَارَتۡ اِلَیۡہِ ؕ قَالُوۡا کَیۡفَ نُکَلِّمُ مَنۡ کَانَ فِی الۡمَہۡدِ صَبِیًّا ٢٩ قَالَ اِنِّیۡ عَبۡدُ اللّٰہِ ۟ؕ اٰتٰنِیَ الۡکِتٰبَ وَجَعَلَنِیۡ نَبِیًّا ۙ ٣۰ وَّجَعَلَنِیۡ مُبٰرَکًا اَیۡنَ مَا کُنۡتُ ۪ وَاَوۡصٰنِیۡ بِالصَّلٰوۃِ وَالزَّکٰوۃِ مَا دُمۡتُ حَیًّا ۪ۖ ٣١ وَّبَرًّۢا بِوَالِدَتِیۡ ۫ وَلَمۡ یَجۡعَلۡنِیۡ جَبَّارًا شَقِیًّا ٣٢ وَالسَّلٰمُ عَلَیَّ یَوۡمَ وُلِدۡتُّ وَیَوۡمَ اَمُوۡتُ وَیَوۡمَ اُبۡعَثُ حَیًّا ٣٣ ذٰلِکَ عِیۡسَی ابۡنُ مَرۡیَمَ ۚ قَوۡلَ الۡحَقِّ الَّذِیۡ فِیۡہِ یَمۡتَرُوۡنَ ٣٤
আর স্মরণ করুন। এ কিতাবে মারইয়ামকে, যখন সে তার পরিবারের কাছ থেকে পৃথক হয়ে নিরালায় পূর্ব দিকে এক স্থানে আশ্রয় নিল, তারপর সে তাদের কাছ থেকে নিজেকে আড়াল করল। তখন আমি তার কাছে আমার রূহকে (জিবরাঈল আলাইহিস সালাম) পাঠালাম, সে তার কাছে পূর্ণ মানবাকৃতিতে আত্মপ্ৰকাশ করল।
মারইয়াম বলল, আমি তোমার থেকে দয়াময়ের আশ্রয় প্রার্থনা করছি (আল্লাহকে ভয় কর) যদি তুমি মুত্তাকী হও। সে বলল, আমি তো তোমার রব-এর দূত, তোমাকে এক পবিত্র পুত্র দান করার জন্য (আমি প্রেরিত হয়েছি)। মারইয়াম বলল, কেমন করে আমার পুত্র হবে, যখন আমাকে কোন পুরুষ স্পর্শ করেনি এবং আমি ব্যভিচারিণীও নই!
সে বলল, ‘এই ভাবেই হবে; তোমার প্রতিপালক বলেছেন, এটা আমার জন্য সহজসাধ্য এবং তাকে আমি এই জন্য সৃষ্টি করব, যেন সে হয় মানুষের জন্য এক নিদর্শন ও আমার কাছ থেকে এক অনুগ্রহ; এটা তো এক স্থিরীকৃত ব্যাপার।’
এরপর সে গর্ভে সন্তান ধারণ করল ও তাকে নিয়ে এক দূরবর্তী স্থানে চলে গেল। প্রসব-বেদনা তাকে এক খেজুর গাছের নিচে আশ্রয় নিতে বাধ্য করল। সে বলল, হায়, এর আগে যদি আমি মরে যেতাম এবং মানুষের স্মৃতি থেকে সম্পূর্ণ হারিয়ে যেতাম!
তখন ফেরেশতা (জিবরাঈল) তার নিচ থেকে ডেকে তাকে বলল, তুমি পেরেশান হয়ো না,তোমার রব তোমার নিচে একটি ঝর্ণা সৃষ্টি করেছেন। আর তুমি খেজুর গাছের কান্ড ধরে তোমার দিকে নাড়া দাও, তাহলে তা তোমার উপর তাজা-পাকা খেজুর ফেলবে। তুমি খাও, পান কর এবং চোখ জুড়াও। আর যদি তুমি কোন লোককে দেখতে পাও তাহলে বলে দিও, ‘আমি পরম করুণাময়ের জন্য চুপ থাকার মানত করেছি। অতএব আজ আমি কোন মানুষের সাথে কিছুতেই কথা বলব না’।
আরও পড়ুন
তারপর সে সন্তানকে নিয়ে তার সম্প্রদায়ের কাছে উপস্থিত হল; তারা বলল, হে মারইয়াম! তুমি তো এক অঘটন করে বসেছ। হে হারূনের বোন! তোমার বাবা অসৎ ব্যক্তি ছিল না এবং তোমার মা'ও ছিল না ব্যভিচারিণী।
মারইয়াম তখন ইঙ্গিতে সন্তানকে দেখাল। তারা বলল, যে দোলনার শিশু তার সাথে আমরা কেমন করে কথা বলব?’ (শিশুটি) বলল, ‘নিশ্চয় আমি আল্লাহর বান্দা; তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং আমাকে নবী করেছেন। যেখানেই আমি থাকি না কেন তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন, তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যতদিন জীবিত থাকি ততদিন নামাজ ও জাকাত আদায় করতে। আর আমাকে আমার মায়ের প্রতি অনুগত করেছেন এবং তিনি আমাকে করেননি দাম্ভিক, হতভাগ্য। আমার প্রতি শান্তি, যেদিন আমি জন্ম লাভ করেছি ও যেদিন আমার মৃত্যু হবে এবং যেদিন আমি জীবিত অবস্থায় পুনরুত্থিত হব।
এই হচ্ছে মারইয়াম পুত্র ঈসা। এটাই সঠিক বক্তব্য, যে বিষয়ে লোকেরা সন্দেহ পোষণ করছে। (সূরা মারইয়াম, (১৯), আয়াত, ১৬-৩৪, তাফসিরে ইবনে কাসির, ১৪-খণ্ড, ১৪৬)