তিন তাসবিহ কী? পড়লে যে ফজিলত
ছোট এবং ফজিলতপূর্ণ একটি আমল তিন তাসবিহ। প্রতিদিন এই আমলটি করা যায়। এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা গুনাহ মাফ করে দেন বলে হাদিসে বর্ণিত হয়েছ। প্রতি নামাজের পর তিন তাসবিহ পড়ার প্রতি হাদিসে বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এছাড়াও ঘুমানোর আগেও এই আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে হাদিসে। এই আমলের আরেকটি ফজিলতের দিক হলো এর মাধ্যমে আমলের পাল্লা ভারী হয়।
তিন তাসবিহ কী?
বিজ্ঞাপন
তিন তাসবিহ হলো—সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ ও আল্লাহু আকবার।
তিন তাসবিহ পড়ার নিয়ম
এ ক্ষেত্রে হাদিসে পাঁচটি পদ্ধতি বর্ণিত হয়েছে। সুবিধামতো যেকোনো পদ্ধতিতে আমল করা যায়। পদ্ধতিগুলো হলো—
১. সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার, আলহামদু লিল্লাহ ৩৩ বার, আল্লাহু আকবার ৩৩ বার ও ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির’ একবার, মোট ১০০ বার।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতি ফরজ নামাজের পর ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদু লিল্লাহ, ৩৩ বার আল্লাহু আকবার আর ৯৯ বার হওয়ার পর শততম পূর্ণ করতে বলবে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির’, তার গোনাহগুলো সাগরের ফেনারাশির মতো অসংখ্য হলেও ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’ (মুসলিম, হাদিস : ৪৯০৬)
আরও পড়ুন
২. সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার, আলহামদু লিল্লাহ ৩৩ বার, আল্লাহু আকবার ৩৩ বার করে মোট ৯৯ বারও পাঠ করা যায়। প্রত্যেক সালাতের পর এই আমল করার দ্বারা জিহাদের সমান সওয়াব লাভ করা যায়।
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, দরিদ্র লোকেরা নবী করিম (সা.)-এর কাছে এসে বলল, সম্পদশালী ও ধনী ব্যক্তিরা তাঁদের সম্পদের দ্বারা উচ্চ মর্যাদা ও চিরস্থায়ী নিয়ামত নিয়ে আমাদের থেকে এগিয়ে গেলেন। তাঁরা আমাদের মতো সালাত আদায় করছেন, আমাদের মতো সিয়াম পালন করছেন এবং তাঁরা তাঁদের অর্থ-সম্পদের মাধ্যমে হজ, ওমরাহ, জিহাদ ও সদকা করার মর্যাদাও লাভ করছেন। এ কথা শুনে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি কি তোমাদের এমন কিছু কাজের কথা বলব, যা তোমরা করলে, যারা নেক কাজে তোমাদের চেয়ে অগ্রগামী হয়ে গেছে, তাদের পর্যায়ে পৌঁছতে পারবে। কেউ তোমাদের সমপর্যায়ে উপনীত হতে পারবে না। আর লোকদের মধ্যে তোমরাই হবে উত্তম আমলকারী, তবে যে ব্যক্তি এ ধরনের আমল করবে তার কথা ভিন্ন। তোমরা প্রত্যেক সালাতের পর ৩৩ বার করে তাসবিহ (সুবহানাল্লাহ), তাহমিদ (আলহামদু লিল্লাহ) এবং তাকবির (আল্লাহু আকবার) পাঠ করবে।’
(বুখারি, হাদিস : ৮৪৩)
৩. সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার, আলহামদু লিল্লাহ ৩৩ বার, আল্লাহু আকবার ৩৪ বার বলে ১০০ পূর্ণ করবে। (মুসলিম, হাদিস : ৫৯৬; সহিহ আত-তারগিব, হাদিস : ১৫৯৩)
৪. সুবহানাল্লাহ ১০ বার, আলহামদু লিল্লাহ ১০ বার, আল্লাহু আকবার ১০ বার, মোট ৩০ বার পাঠ করবে। এটি আমলনামায় অনেক ভারী হবে।
রাসুল (সা.) বলেন, ‘কোনো মুসলিম দুটি অভ্যাস আয়ত্ত করতে পারলে জান্নাতে প্রবেশ করবে। সেই দুটি অভ্যাস আয়ত্ত করাও সহজ, কিন্তু এ দুটি অনুশীলনকারীর সংখ্যা কম। তার একটি হলো—প্রতি ওয়াক্ত সালাতের পর ১০ বার সুবহানাল্লাহ, ১০ বার আল্লাহু আকবার এবং ১০ বার আলহামদু লিল্লাহ বলা। তা মুখে পড়লে হয় (পাঁচ ওয়াক্ত সালাতে) ১৫০ এবং আমলনামায় হয় এক হাজার ৫০০। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৪১০)
উপরোক্ত পাঁচ পদ্ধতির যেকোনো একটির ওপর আমল করা যাবে। সালাতের পর ঘুমের আগে তিন তাসবিহ পাঠ করার কথা হাদিসে এসেছে।
আলী ইবনে আবি তালিব (রা.) থেকে বর্ণিত, ফাতেমা (রা.) যখন মহানবী (সা.)-এর কাছে একজন সেবক চেয়েছিলেন, তখন রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি কি তোমাদের এমন কিছু সম্পর্কে জানাব না যা তোমাদের জন্য একজন সেবকের চেয়ে উত্তম হবে? তোমরা যখন বিছানায় যাও তখন ৩৪ বার আল্লাহু আকবার, ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদু লিল্লাহ পাঠ করো। এটা তোমাদের জন্য একজন সেবকের চেয়ে উত্তম হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৩১৮)
৫. সুবহানাল্লাহ ২৫ বার, আলহামদু লিল্লাহ ২৫ বার, আল্লাহু আকবার ২৫ বার এবং লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ ২৫ বার, মোট ১০০ বার পাঠ করবে। (নাসাঈ, হাদিস : ১৩৫০)