পূর্ববর্তী যুগে আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে আদ জাতিকে পাঠিয়েছিলেন। আদ সম্প্রদায়ের ১৩টি পরিবার বা গোত্র ছিল। আম্মান থেকে শুরু করে হাযারামাউত ও ইয়ামন পর্যন্ত তাদের বসতি ছিল। তাদের ক্ষেত-খামারগুলো ছিল অত্যন্ত সজীব ও শস্যশ্যামল। তাদের প্রায় সব ধরনের বাগ-বাগিচা ছিল। তারা ছিল সুঠামদেহী ও শক্তিশালী। 

আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রতি অনুগ্রহের দুয়ার খুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু অবাধ্যতার কারণে এসব নেয়ামতই তাদের কাল হয়ে দাঁড়ালো। তারা নিজেরা পথভ্রষ্ট হয়েছিল ও অন্যকে পথভ্রষ্ট করেছিল। তারা শক্তির নেশায় মত্ত হয়ে ‘আমাদের চেয়ে শক্তিশালী আর কে আছে’ বলে ঔদ্ধত্য প্রদর্শন  শুরু করেছিল। 

তারা আল্লাহর ইবাদত পরিত্যাগ করে নূহ আ.-এর আমলে ফেলে আসা মূর্তিপূজার শিরকের পুনরায় প্রচলন ঘটালো। নূহের প্লাবনের পরে এরাই সর্বপ্রথম মূর্তিপূজা শুরু করে। মাত্র কয়েক পুরুষ আগে ঘটে যাওয়া নূহের সর্বগ্রাসী প্লাবনের কথা তারা বেমালুম ভুলে গেল। ফলে আল্লাহ তায়ালা তাদের হেদায়াতের জন্য তাদেরই মধ্য থেকে হূদ আ.-কে নবী হিসাবে প্রেরণ করলেন। 

তিনি তাঁর সম্প্রদায়ের লোকদের তাওহীদের আহ্বান করেন এবং তাদেরকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করতে নিষেধ করেন। তিনি তাদের বলেন—

তোমরা যাদের পূজা করছো, তাদের তোমরা নিজেরাই বানিয়েছো। এমনকি তাদের নাম ও অস্তিত্বও তোমাদের বাজে কল্পনা ছাড়া কিছুই নয়। 

তিনি তাদেরকে আরও বলেন— আমি তোমাদেরকে যে উপদেশ দিচ্ছি, এর বিনিময়ে আমি তোমাদের কাছে কিছুই চাই না। এর প্রতিদান স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা আমাকে দান করবেন। তোমরা তোমাদের অতীতের পাপের জন্য মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকো এবং আগামীতে পাপ কাজ থেকে বিরত থাকো। এ দুটো গুণ (অতীতের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা এবং ভবিষ্যতে পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা।) যার মাঝে থাকবে আল্লাহ তায়ালা তাঁর জীবন-জীবিকার পথ সহজ করে দেবেন এবং তার কাজও সহজ হয়ে যাবে। আর সবসময় তিনি তাঁর হেফাজত করবেন।

জেনে রেখো— তোমরা যদি আমার উপদেশ মতো কাজ করো তবে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের ওপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, যে বৃষ্টি তোমাদের জন্য অনেক ‍উপকারী হবে। আর তোমাদের শক্তিকে আল্লাহ বহুগুণ বৃদ্ধি করে দেবেন।

হজরত হুদ আ.-এর উপদেশ শুনে তাঁর সম্প্রদায়ের লোকেরা বললো— 

হে হুদ! তুমি যেদিকে আমাদের আহ্বান করছো তার তো কোনো দলিল আমাদের সামনে পেশ করছো না। আমরা শুধু তোমার কথায় আমাদের উপাস্যগুলোকে পরিত্যাগ করতে পারি না। আমরা তোমাকে সত্যবাদী হিসেবে মানবো না এবং তোমার কথায় ঈমান আনবো না।

হজরত হুদ আ.-এর সম্প্রদায় তাঁর আহ্বানে সাড়া দিল না। নিজেদের পাপাচারে লিপ্ত থাকলো। ফলে আল্লাহ তায়ালা হুদ আ. ও মুমিনদের ছাড়া তাঁর সম্প্রদায়ের অন্যদের শাস্তির মাধ্যমে ধ্বংস করে দিলেন।