প্রতীকী ছবি

জান্নাত শব্দের আভিধানিক অর্থ বাগান। আখিরাতে নেককার মুমিনগণের জন্য যে মহা-নিয়ামতপূর্ণ আবাসস্থল আল্লাহ তৈরি করে রেখেছেন তাকে ইসলামী পরিভাষায় জান্নাত বলা হয়। জান্নাতের বিভিন্ন স্তর, পর্যায় ও নাম রয়েছে। ফার্সী ভাষায় জান্নাতকে বেহেশত বলা হয়, যা বাংলা ভাষায় বহুল-ব্যবহৃত।

সপ্তম আসমানের উপরে জান্নাত অবস্থিত, আর আল্লাহর আরশ হচ্ছে তার ছাদ; আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসুল স. বলেছেন, তোমরা আল্লাহর কাছে চাইলে ফেরদাউস চাইবে; কেননা এটাই হলো সবচেয়ে উত্তম ও সর্বোচ্চ জান্নাত। আমার মনে হয়, রাসূলুল্লাহ সা. আরও বলেছেন, এর উপরে রয়েছে আরশে রহমান; আর সেখান থেকে জান্নাতের নহরসমূহ প্রবাহিত হচ্ছে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৭৯০)

জাহান্নাম শব্দের মূল অর্থ গভীরগর্ত কূপ। মহান আল্লাহ আখিরাতে অবিশ্বাসী ও পাপীদের শাস্তির জন্য যে অগ্নিময় আবাস তৈরি করেছেন তাকে কোরআন-হাদিসে জাহান্নাম বলা হয়েছে।

জাহান্নামকে কোরআন ও হাদিসে অনেক সময় ‘নার’ বা অগ্নি (নরক) বলা হয়েছে। 

আলেমদের সবাই একমত যে জান্নাত সাত আসমানের উপরে অবস্থিত। কিন্তু জাহান্নাম কোথায় অবস্থিত এ ব্যাপারে অনেক মতভেদ আছে। কারো কারো আসমানেই এক প্রান্তে জান্নাত অপর প্রান্তে জাহান্নাম। আবার কারো মতে আসমানের নিচের নিচে জাহান্নাম।

সূরা তওবার ৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে : সমুদ্রের কসম, যাকে অগ্নিতে পরিণত করা হবে। অন্য এক আয়াতে বলা হয়েছে, অর্থাৎ চতুর্দিকের সমুদ্র অগ্নি হয়ে হাশরের ময়দানে একত্রিত মানুষকে ঘিরে রাখবে। অনেকে আয়াতের এ অর্থ করেছেন।

হজরত আলী রা.-কে জনৈক ইহুদি প্রশ্ন করেছিল, জাহান্নাম কোথায়? তিনি বললেন : সমুদ্রই জাহান্নাম। 

সূরা তওবার উদ্ধৃত আয়াত থেকে কোনো কোনো তাফসিরবিদ তার ব্যাখ্যা করেছেন যে, জাহান্নাম সমুদ্রের নিম্ন পৃথিবীর অতল গভীরে অবস্থিত। বর্তমানে তার ওপর কোনো ভারী ও শক্ত আচ্ছাদন রেখে দেয়া হয়েছে। কেয়ামতের দিন ওই আচ্ছাদন বিদীর্ণ হয়ে যাবে এবং জাহান্নামের অগ্নি বিস্তৃত হয়ে সমুদ্রকে অগ্নিতে রূপান্তরিত করে দেবে।

জাহান্নামের অবস্থান সম্পর্কে হাদিসের একটি ভাষ্য রয়েছে, তাতে চার দেয়ালের কথা আছে। তিরমিজি শরিফে আবু সাঈদ বর্ণিত হাদিসে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, চার ফসিল অর্থাৎ চার প্রাচীর জাহান্নামকে বেষ্টন করে রাখবে। প্রতিটি প্রাচীরের পুরুত্ব এত ব্যাপক ও বিশাল যে, তা অতিক্রম করতে চল্লিশ বছর সময় লাগবে।

অর্থাৎ জাহান্নামের চারটি প্রাচীর আছে এবং প্রত্যেক প্রাচীরের দূরত্ব একটি হতে অপরটি চল্লিশ বছরের ব্যবধান। জাহান্নাম চার প্রাচীর দ্বারা ঘেরা। 

কোরআনের বহু আয়াতে সপ্ত আকাশের কথা বলা হয়েছে, ‘এবং প্রত্যেক আকাশ স্তরে স্তরে সাজানো’। তবে সপ্ত পৃথিবীর কথা স্পষ্ট করে বলা না হলেও একটি আয়াতে তার ইঙ্গিত প্রদান করা হয়েছে। 

সূরা তালাকে আল্লাহ বলেন : আল্লাহ সপ্ত আকাশ সৃষ্টি করেছেন এবং পৃথিবীও সেই পরিমাপে। (সূরা তালাক, আয়াত : ১২) 

আলেমদের মতে, জান্নাত ও জাহান্নাম যেখানেই অবস্থিত থাক, তা জানা খুব জরুরি নয়। তবে এর প্রতি মুমিনের ঈমান রাখতে হবে এবং সুন্দর আবাস্থলের জন্য আমল করতে হবে।