ইসলামের প্রথম যুগে মক্কায় মুসলমানদের ওপর কুরাইশ-কাফেরদের নির্যাতন বেড়ে যাওয়া এবং মক্কায় অবস্থানের মতো কোনো পরিস্থিতি না থাকার প্রেক্ষিতে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে মদিনায় হিজরত করেন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

আনুষ্ঠানিকভাবে মদিনায় হিজরতের অনুমতির অনেক আগেই আল্লাহ তায়ালা রাসূল সা.-কে স্বপ্নের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, তাকে হিজরত করতে হতে পারে। স্বপ্নে তাকে খেজুর গাছের সারি ঘেরা একটি জায়গা দেখানো হয়েছিল। পরে তিনি নিশ্চিত হন যে, সেই জনপদ হচ্ছে ইয়াসবির (মদিনা)।

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের ওপর মক্কার কাফেরদের নির্যাতন বেড়ে গেলে মদিনাবাসী সাহাবিরা নবীজিকে তাদের ভূমিতে হিজরতের আহ্বান জানালেন। আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে প্রিয় মাতৃভূমি ছেড়ে মদিনায় হিজরত করলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

রাসূল সা. মদিনায় জীবনের যে ১০ বছর কাটিয়েছেন তাকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা যেতে পারে—

১. প্রথম হিজরির ১২ই রবিউল আউয়াল মোতাবেক ৬২২ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে সেপ্টেম্বর সোমবার থেকে ৬ষ্ঠ হিজরীর জিলকদ মাসে অনুষ্ঠিত হোদায়বিয়ার সন্ধি পর্যন্ত প্রায় ছয় বছর। এই সময় কাফের ও মুনাফিকদের মাধ্যমে ভিতরে ও বাইরের চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র ও সশস্ত্র হামলা সংঘটিত হয়। ইসলামকে সমূলে উৎপাটিত করার জন্য এ সময়ের মধ্যে সর্বমোট ৫০টি ছোট-বড় যুদ্ধ ও অভিযান পরিচালিত হয়।

২. মক্কার মুশরিকদের সঙ্গে সন্ধি চলাকালীন সময়। যার মেয়াদকাল ৬ষ্ঠ হিজরির জিলকদ থেকে ৮ম হিজরির রমজান মাসে মক্কা বিজয় পর্যন্ত প্রায় দু’বছর। এই সময়ে প্রধানত ইহুদি ও তাদের মিত্রদের সাথে বড়-ছোট ২২টি যুদ্ধ সংঘটিত হয়।

৩. ৮ম হিজরিতে মক্কা বিজয়ের পর থেকে ১১ হিজরিতে রাসূল সা.-এর মৃত্যু পর্যন্ত প্রায় তিন বছর। এই সময়ে দলে দলে লোকেরা ইসলাম গ্রহণ করতে থাকে। চারদিক থেকে গোত্র নেতারা প্রতিনিধিদল নিয়ে মদীনায় এসে ইসলাম গ্রহণ করেন। 

রাসূল সা. বিদেশী রাজন্যবর্গের কাছে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে দূত মারফত পত্র প্রেরণ করেন। এ সময় হোবল, লাত, মানাত, ‘উযযা, সুওয়া‘ প্রভৃতি প্রসিদ্ধ মূর্তিগুলি ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এই সময়ে হোনায়েন যুদ্ধ এবং রোম সম্রাট হেরাক্লিয়াসের বিরুদ্ধে তাবূক যুদ্ধে গমন ও সর্বশেষ সারিইয়া উসামা প্রেরণসহ মোট ১৮টি মিলে মাদানী জীবনের ১০ বছরে ছোট-বড় প্রায় ৯০টি যুদ্ধ ও অভিযানস পরিচালিত হয়। 

অবশেষে সব বাধা অতিক্রম করে ইসলাম রাষ্ট্রীয় রূপ পরিগ্রহ করে এবং তৎকালীন বিশ্বের পরাশক্তি সমূহকে চ্যালেঞ্জ করে টিকে থাকার মত শক্তিশালী অবস্থানে উপনীত হয়।