নবীর নামের সঙ্গে মিলিয়ে শিশুর নাম রাখার বিধান
শিশুর জন্মের পর তার সুন্দর নাম রাখা ও আকিকা করা অভিভাবকের দায়িত্ব। মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মুসলিমদের মতো বাংলাদেশের মুসলিমদের মাঝেও ইসলামী সংস্কৃতি ও মুসলিম ঐতিহ্যের সাথে মিল রেখে শিশুর নাম নির্বাচন করার আগ্রহ দেখা যায়।
শিশু নাম রাখার জন্য এ বিষয়ে অভিজ্ঞ কোনো আলেম বা ধর্মীয় জ্ঞান আছে এমন ব্যক্তির পরামর্শ নেওয়া জরুরি। অনেকে না বুঝে এমন অনেক নাম রাখেন যার সুন্দর কোনো অর্থ থাকে না। সুন্দর ও অর্থবোধক নাম রাখা সবার জন্য জরুরি। কারণ, নামের প্রভাব ব্যক্তির স্বভাব চরিত্রের উপর ইতিবাচক অথবা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে বলে বর্ণিত আছে। তাই ভালো নাম রাখার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।
বিজ্ঞাপন
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কারো ভাল নাম শুনে আশাবাদী হতেন। হুদাইবিয়ার সন্ধিকালে মুসলিম ও কাফের দুইপক্ষের মধ্যে টানাপোড়নের এক পর্যায়ে আলোচনার জন্য কাফেরদের প্রতিনিধি হয়ে সুহাইল ইবনে আমর নামে এক ব্যক্তি এগিয়ে এল তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুহাইল নামে আশাবাদী হয়ে বলেন : সুহাইল তোমাদের জন্য সহজ করে দিতে এসেছেন।
সুহাইল শব্দটি সাহলুন (সহজ) শব্দের ক্ষুদ্রতা নির্দেশক রূপ। যার অর্থ হচ্ছে- অতিশয় সহজকারী। বিভিন্ন কবিলার ভাল অর্থবোধক নামে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশাবাদী হওয়ার নজির আছে।
তিনি বলেছেন: গিফার (ক্ষমা করা) কবিলা তথা গোত্রের লোকদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করে দিন। আসলাম (আত্মসমর্পণকারী/শান্তিময়) কবিলা বা গোত্রের লোকদেরকে আল্লাহ শান্তি দিন।
নবজাতকের নাম কখন রাখবেন। এ বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তিনটি বর্ণনা রয়েছে। শিশুর জন্মের পরপরই তার নাম রাখা। শিশুর জন্মের তৃতীয় দিন তার নাম রাখা। শিশুর জন্মের সপ্তম দিন তার নাম রাখা। এর থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, ইসলাম এ বিষয়ে মুসলিমদেরকে অবকাশ দিয়েছে। যে কোনোটির উপর আমল করা যেতে পারে।
আরও পড়ুন
আল্লাহর নিকট সবচেয়ে উত্তম নাম হচ্ছে আব্দুল্লাহ ও আব্দুর রহমান। সহিহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন -
إِنَّ أَحَبَّ أَسْمَائِكُمْ إِلَى اللَّهِ عَبْدُ اللَّهِ وَعَبْدُ الرَّحْمَنِ
তোমাদের নামসমূহের মধ্যে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় হচ্ছে- আব্দুল্লাহ (আল্লাহর বান্দা) ও আব্দুর রহমান (রহমানের বান্দা)।
এ নাম দুট আল্লাহর প্রিয় হওয়ার কারণ হল- এ নামে আল্লাহর দাসত্বের স্বীকৃতি রয়েছে। তাছাড়া আল্লাহর সবচেয়ে সুন্দর দুটি নাম এ নামের সাথে সম্বন্ধিত আছে। একই কারণে আল্লাহর অন্যান্য নামের সাথে আরবী ‘আব্দ’ (বান্দা বা দাস) শব্দটিকে সমন্ধিত করে নাম রাখাও উত্তম।
এছাড়াও যে কোনো নবীর নামে নাম রাখা ভাল। যেহেতু তাঁরা আল্লাহর মনোনীত বান্দা। হাদিসে এসেছে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
তোমরা আমার নামে নাম রাখ। আমার কুনিয়াতে (উপনামে) কুনিয়ত রেখো না। (বুখারি, আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৮৩৭)
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কুনিয়ত ছিল- আবুল কাসেম। নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিজের সন্তানের নাম রেখেছিলেন ইব্রাহিম। কোরআনে কারীমে ২৫ জন নবী-রাসূলের নাম বর্ণিত আছে মর্মে আলেমগণ উল্লেখ করেছেন। এর থেকে পছন্দমত যে কোনো নাম নবজাতকের জন্য নির্বাচন করা যেতে পারে।