প্রতীকী ছবি

রাসূল সা. মসজিদকে পৃথিবীর সর্বোত্তম স্থান বলেছেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আবু উমামা বাহেলী (রা.) বলেন, ইয়াহুদীদের একজন আলেম নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করল, পৃথিবীর মধ্যে উত্তম স্থান কোনটি? নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীরব থাকলেন এবং বললেন, তুমি নীরব থাক যতক্ষণ জিবরীল (আ.) না আসেন। 

অতঃপর সে নীরব থাকল এবং জিবরীল (আঃ) আসলেন। তখন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন। জিবরীল (আ,) উত্তরে বললেন, জিজ্ঞেসকারী অপেক্ষা জিজ্ঞাসিত ব্যক্তি অধিক জ্ঞাত নন। কিন্তু আমি আমার প্রভুকে জিজ্ঞেস করব। 

অতঃপর জিবরীল (আ.) বললেন, হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি আল্লাহর এত নিকটে হয়েছিলাম, যত নিকটে ইতিপূর্বে হইনি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, কিভাবে এবং কত নিকটে হয়েছিলেন? তিনি বললেন, তখন আমার মধ্যে ও তাঁর মধ্যে মাত্র সত্তর হাজার নূরের পর্দা ছিল। আল্লাহ্ তায়ালা বলেছেন, পৃথিবীর নিকৃষ্টতর স্থান বাজারসমূহ এবং উৎকৃষ্টতর স্থান মসজিদ সমূহ’। (ইবনু হিববান, ১৫৯৯; মিশকাত,৭৪১)

মসজিদে মানুষ নিয়মিত ইবাদতের জন্য আসবেন এটাই স্বাভাবিক। তবে বর্তমানে দেখা যায় আমাদের দেশের প্রায় মসজিদই নামাজের সময় ছাড়া অন্য সময় তালা মেরে রাখা হয়। এ ব্যাপারে কোনো কোনো মসজিদ কর্তৃপক্ষ বলেন, সব সময় মসজিদ খোলা রাখলে মসজিদ ময়লা হয়ে যায় এবং মসজিদের আসবাবপত্র চুরি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। 

অনেকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অফিস টাইমের ফাঁকে নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত বা অন্যান্য ধর্মীয় বইপত্র পড়তে চান। কিন্তু মসজিদ তালাবদ্ধ থাকায় উপযুক্ত স্থান না পেয়ে এসব করতে পারেন না। তাই মসজিদ এভাবে বন্ধ রাখার বিষয়ে ইসলামের বিধান জানতে চান অনেকে।

এ বিষয়ে ইসলামী আইন ও ফেকাহশাস্ত্রবিদদের মতামত হলো— মসজিদ মুসলমানদের ইবাদতের স্থান ও দ্বীন শিক্ষার অন্যতম জায়গা। মসজিদ শুধু নামাজের জন্য নয়; বরং যিকির-আযকার, কোরআন তিলাওয়াত ও দ্বীনী তালীমের জন্যও বটে। হজরত আনাস ইবনে মালেক রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেন-

إِنّمَا هِيَ لِذِكْرِ اللهِ عَزّ وَجَلّ، وَالصّلَاةِ وَقِرَاءَةِ الْقُرْآنِ

অর্থাৎ মসজিদ হলো নামাজ, জিকির ও কোরআন  পড়ার জন্য। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৮৫)

তাই নিয়ম হল, ফরজ নামাজের সময় ছাড়াও মসজিদকে প্রয়োজন অনুযায়ী ইবাদত, তালীম ও যিজি কিরের জন্য উন্মুক্ত রাখা। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মসজিদ বন্ধ রাখা ঠিক নয়। 

ইবনুল হুমাম (রাহ.) বিনা প্রয়োজনে মসজিদ বন্ধ রাখাকে- মানুষকে মসজিদ থেকে বাধা প্রদান করার অন্তর্ভুক্ত করেছেন এবং নিম্নোক্ত আয়াত দ্বারা দলীল পেশ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-

وَ مَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ مَّنَعَ مَسٰجِدَ اللهِ اَنْ یُّذْكَرَ فِیْهَا اسْمُهٗ وَ سَعٰی فِیْ خَرَابِهَا 

তার থেকে বড় জালেম আর কে, যে আল্লাহর মসজিদসমূহে তাঁর নাম নিতে বাধা প্রদান করে এবং সেগুলো ধ্বংস সাধনে প্রয়াসী হয়। (সূরা বাকারা, আয়াত: ১১৪)


অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, সব সময় মসজিদ খোলা রাখলে মসজিদের মালামাল হেফাযতের বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। এ বিষয়টি বিবেচনা করে কোনো কোনো ফকীহ প্রয়োজনের কারণে নামাজের সময় ছাড়া অন্য সময় মসজিদ বন্ধ রাখাকে জায়েজ বলেছেন। তাই এ ধরনের প্রয়োজনে অন্যান্য সময় মসজিদ বন্ধ রাখার অবকাশ আছে।

কিন্তু সেক্ষেত্রেও নামাজের পরপরই বন্ধ করবে না; বরং জামাত শেষ হয়ে যাওয়ার পরও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সময় খোলা রাখবে। যেন পরে আসা ব্যক্তিরা ফরজ আদায় করতে পারে। এবং জামাতের পরে যারা একটু সময় নিয়ে নফল ইবাদত করতে চায় তাদের জন্যও যেন সুযোগ থাকে।

আর যেখানে নামাজের নির্ধারিত সময় ছাড়া অন্য সময়েও ইবাদত ও দ্বীনী তালীমের উদ্দেশ্যে মুসল্লীদের মসজিদে ব্যাপক আসা-যাওয়া থাকে ওইসব মসজিদ খোলা রাখার ব্যবস্থা করা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। এজন্য প্রয়োজনে মালামাল হেফাজত করা ও মসজিদ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য অতিরিক্ত খাদেম নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। আর কোনো ক্ষেত্রে পুরো মসজিদ খোলা রাখা সম্ভব না হলে অন্তত মসজিদের কোনো অংশ অথবা বারান্দা (বাতি ও পাখাসহ) খোলা রাখার ব্যবস্থা করা আবশ্যক।

(ফাতহুল কাদীর ১/৩৬৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১০৯; আলবাহরুর রায়েক ২/৩৩)