নামাজের ভেতর কেরাত পড়া বা কোরআন তেলাওয়াত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ আমল। নামাজে কোরআন তেলাওয়াতের ফজিলত সম্পর্কে হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন—

‘তোমাদের কেউ কি পছন্দ করে যে, সে তার পরিবারের কাছে ফিরে এসে দেখবে- তার তিনটি বড় আকারের নাদুস-নুদুস গর্ভবর্তী (অতি মূল্যবান মরুভূমির জাহাজখ্যাত) উষ্ট্রী আছে? আমরা বলি- ‘হ্যাঁ’ আমরা দেখতে চাই।’ প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তাহলে তোমাদের কেউ যদি নামাজে তিনটি (কুরআনের) আয়াত পাঠ করে; তবে তা হবে তার জন্য তিনটি বড় আকারের নাদুস-নুদুস গর্ভবর্তী উষ্ট্রীর চেয়েও উত্তম।’ (মুসলিম)

নামাজে কোরআন তেলাওয়াতের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে অবশ্যই যেন তা বিশুদ্ধ তেলাওয়াত হয়। কারণ,  নামাজ ভঙ্গের ১৯টি কারণের মধ্যে নামাজে সূরা-কেরাত অশুদ্ধভাবে পড়াও একটি।

নামাজে সূরা বা কেরাত পাঠের সময় ধারাবাহিকতা রক্ষা করা জরুরি নয়। কেউ নামাজে সূরা পড়ার সময় ধারাবাহিকতা নষ্ট হলে সাহু সেজদার দরকার নেই। এমনিতেই নামাজ হয়ে যাবে। অর্থাৎ আগে সূরা কুরাইশ পড়ে এরপর সূরা ফীল পড়লে নামাজ হবে। সাহু সিজদা লাগবে না।

ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, নামাজে সুরার তারতিব বা ধারাবাহিকতা রক্ষা করা মোস্তাহাব। ফরজ নামাজে ইচ্ছাকৃত তারতিব ভঙ্গ করা অনুত্তম। তবে কেউ করলে নামাজ হয়ে যাবে। আর ভুলবশত হলে কোনো সমস্যা নেই; মাকরুহও হবে না, সাহু সেজদাও ওয়াজিব হবে না। 

নামাজে সুরা মেলানোর ক্ষেত্রে মৌলিক কয়েকটি কথা স্মরণ রাখলে আর কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না। 

১. যেন কমপক্ষে তিন আয়াত পরিমাণ তেলাওয়াত করা হয়। তিন আয়াতের সীমা হলো- কমপক্ষে ৩০ হরফ।

২. এক সুরা পড়ার পর মাঝখানে এক সুরা বাদ দিয়ে পরের সুরা পড়া মাকরুহ। তবে দুই সুরা বাদ দিয়ে পড়লে কোনো সমস্যা নেই।

৩. প্রথম রাকাতে যে সুরা পড়বে, পরের রাকাতে পরের কোনো সুরা পড়বে, আগের কোনো সুরা পড়া মাকরুহ। এতে কোরআনের তারতিব পাল্টে যায়। তবে ভুলে এমনটি করলে সমস্যা নেই।

৪. বড় সুরা মাঝখান থেকে কিছু অংশ পড়া, আর পরের রাকাতে আরেক সুরার মাঝখান থেকে পড়াও অনুত্তম।

৫. প্রথম রাকাআতে বড় সুরা পড়লে তার পরের রাকাআতে তুলনামূলক ছোট সুরা পড়া উত্তম। 

এগুলোই মূলত নিয়ম। তবে এসবের ব্যত্যয় ঘটলেও নামাজ শুদ্ধ হবে। কেননা, কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, فَاقْرَءُوا مَا تَيَسَّرَ مِنَ الْقُرْآنِ ‘তোমার কোরআনের যেখান থেকে সুবিধা হয় পড়ো।’ (সুরা মুজাম্মিল: ২০)

মূলকথা হচ্ছে ইচ্ছাকৃতভাবে উপরোক্ত ভুলগুলো করা মাকরুহ। অনিচ্ছাকৃতভাবে হলে সমস্যা নেই। আর এমন ভুলের কারণে সাহু সেজদাও ওয়াজিব হবে না। 

(খুলাসাতুল ফতোয়া: ১/৯৭;ফাতহুল কাদির: ১/২৯৯)