পাপী বান্দা তওবা করলে আল্লাহ তায়ালা খুশি হন
নিজের পাপ ও অক্ষমতার কথা স্বীকার করে তওবা করলে আল্লাহ তায়ালা খুশি হন। বান্দা নিজের ভুলের জন্য অনুতপ্ত থাকবে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, তওবা করবে এটা আল্লাহ পছন্দ করেন। এক হাদিসে হজরত হারিস ইবনু সুওয়াইদ রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন—
আবদুল্লাহ রা. অসুস্থ ছিলেন। তার সেবা করার জন্য কোনো এক সময় আমি তার কাছে গেলাম। তখন তিনি আমাকে দুটি হাদিস বর্ণনা করলেন। একটি নিজের পক্ষ থেকে এবং অন্যটি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষ থেকে। তিনি বলেন—
বিজ্ঞাপন
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ কথা বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ তায়ালা তার মুমিন বান্দার তওবার কারণে ওই ব্যক্তির থেকেও বেশি আনন্দিত হন, যে খাবার, পানীয় ও সওয়ারীসহ ছায়াপানিহীন আশঙ্কাপূর্ণ বিজন মাঠে ঘুমিয়ে পড়ে। এরপর ঘুম থেকে সজাগ হয়ে দেখে যে, সওয়ারী কোথায় অদৃশ্য হয়ে গেছে। তারপর সে সেটি খুঁজতে খুঁজতে তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়ল এবং বললো, আমি আমার পূর্বের জায়গায় গিয়ে চিরনিদ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে মারা যাব। (এ কথা বলে) সে মৃত্যুর জন্য বাহুতে মাথা রাখল। কিছুক্ষণ পর জাগ্রত হয়ে সে দেখল, পানাহার সামগ্রী বহনকারী সওয়ারীটি তার কাছে। (সওয়ারী এবং পানাহার সামগ্ৰী পেয়ে) লোকটি যে পরিমাণ আনন্দিত হয়, মুমিন বান্দার তওবার কারণে আল্লাহ তার চেয়েও বেশি আনন্দিত হন। (সহিহ মুসলি, হাদিস : ২৭৪৪)
কাতাদাহ রহ. বলেন, মহান আল্লাহর বাণী, ‘তোমরা সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে আল্লাহর কাছে তওবা করো।’ (সূরা, আত-তাহরীম, আয়াত :৮)
আরও পড়ুন
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. দু’টি হাদিস বর্ণনা করেছেন। একটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আর অন্যটি তাঁর নিজ থেকে। তিনি বলেন—
ঈমানদার ব্যক্তি তার গুনাহগুলোকে এত বিরাট মনে করে, যেন সে একটা পর্বতের নীচে উপবিষ্ট আছে, আর সে আশঙ্কা করছে যে, সম্ভবত পর্বতটা তার উপর ধ্বসে পড়বে। আর পাপিষ্ঠ ব্যক্তি তার গুনাহগুলোকে মাছির মত মনে করে, যা তার নাকে বসে চলে যায়। এ কথাটি আবূ শিহাব নিজ নাকে হাত দিয়ে দেখিয়ে বলেন।
তারপর (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হাদিসটি বর্ণনা করে বলেন) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন— মনে কর কোন এক ব্যক্তি (সফরের) কোনো এক স্থানে অবতরণ করলো, সেখানে প্রাণেরও ভয় ছিল। তার সঙ্গে তার সফরের বাহন ছিল। যার উপর তার খাদ্য ও পানীয় ছিল, সে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লো এবং জেগে দেখলো তার বাহন চলে গেছে। তখন সে গরমে ও পিপাসায় কাতর হয়ে পড়লো।
আল্লাহ যা চাইলেন তা হলো। তখন সে বললো যে, আমি যে স্থানে ছিলাম সেখানেই ফিরে যাই। এরপর সে নিজ স্থানে ফিরে এসে আবার ঘুমিয়ে পড়লো। তারপর জেগে দেখলো যে, তার বাহনটি তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। তখন সে ব্যক্তি যতটা খুশি হলো, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দার তওবা করার কারণে এর চেয়েও অনেক অধিক খুশী হন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৩০৮)
এজন্য একজন মুসলিম যখন গুনাহ করে ফেলে, তখন তার প্রথম কাজ হলো— তওবা করা। তাওবা মানে গুনাহ থেকে প্রত্যাবর্তন করা। আল্লাহর কাছে ফিরে আসা। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা যদি পাপাচার করতে, এমনকি তোমাদের পাপ আকাশের সীমা পর্যন্ত পৌঁছে যেত, অতঃপর তোমরা তওবা করতে; তাহলে আল্লাহ অবশ্যই তোমাদের তওবা কবুল করবেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস, ৪২৪৮)
তওবা করার নিয়ম হলো- যেসব গুনাহ করেছেন তার ওপর অনুতপ্ত হওয়া আব্যশক এবং ভবিষ্যতে আর কখনো গুনাহ না করার করার দৃঢ় সংকল্প নিয়ে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। এর জন্য তওবার নিয়তে দুই রাকাত নামাজ পড়াও উত্তম।
এই নামাজ অন্যান্য নামাজের মতোই। শুধু নামাজ পড়ার শুরুতে তওবার নিয়ত করে নিতে হবে। যেমন, নিয়তের সময় এভাবে বলবেন যে, হে আল্লাহ ! আমি দুই রাকাত তওবার নামাজ পড়ছি, আপনি নামাজ কবুল করুন। এরপর নামাজের বাকি কাজগুলো অন্য নামাজের মতোই হবে। এতে আলাদা কোনো নিয়ম নেই। নামাজ শেষে আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত হৃদয়ে দোয়া করতে হবে, গুনাহ থেকে মাফ চাইতে হবে।