মেহমান যে বরকত নিয়ে আসে
রাসূল সা. ছিলেন সর্বাধিক দয়ালু, দানশীল ও অতিথিপরায়ণ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সবচেয়ে প্রিয়তমা স্ত্রী খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহার উক্তি আল্লাহর রাসূলের আতিথেয়তা সম্পর্কে যথেষ্ট। ওহী লাভের পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অস্থিরতায় তিনি সান্ত্বনা দেন এবং বলেন—
كلاّ واللهِ ما يُخزِيك الله اَبَدََ
বিজ্ঞাপন
আল্লাহর শপথ তিনি আপনাকে কখনই অপমান ও অপদস্থ করবেন না। কারণ হিসেবে তিনি আল্লাহর রাসূলের কয়েকটি বিশেষ গুণের কথা উল্লেখ করেন। তার মধ্যে অন্যতম গুণ হলো, অতিথিপরায়ণ স্বভাব।
কাবা শরীফ মক্কায় অবস্থিত থাকায় হাজার হাজার বছর থেকে কাবায় বিভিন্ন এলাকা ও জনপদ থেকে তীর্থযাত্রীরা ভিড় জমাতো। কুরাইশ পৌত্তলিকেরা বিদেশীদের জীবন সম্পদ লুণ্ঠনের উৎসব করত বিশেষ করে হজ মৌসুমে। যদিও জাতিগত ভাবে আরবরা অতিথিপরায়ণ কিন্তু অসৎদের মূল্যবোধ ছিল না।
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাল্যকাল থেকে অসহায় বিদেশী ও অতিথিদের সহায় সম্পদ লুণ্ঠনের দৃশ্য দেখে আসছিলেন। তাদের যুলুম নির্যাতন ও লন্ঠনের দৃশ্য দেখে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। তিনি তাদের স্রোতের বিপরীতে গিয়ে অসহায় মযলুম নির্যাতিত মানুষের পক্ষে দাঁড়ান, তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন। দেশ থেকে অশান্তি দূর করা, বিদেশী মেহমানদের জান-মাল রক্ষা করা, গরীব-দুঃখীকে সাহায্য করা, দুর্বলদেরকে যালিমদের হাত থেকে রক্ষা করা এবং আমরা বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে সম্প্রীতি স্থাপনের চেষ্টায় তিনি ছিলেন বদ্ধ পরিকর।
আরও পড়ুন
মেহমানদারির সম্পর্ক ঈমানের সাথে। এ কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দয়া ও অনুগ্রহের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল মেহমানদের মেহমানদারি করা। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন—
যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ও আখিরাত দিবসের প্রতি বিশ্বাস করে, সে যেন প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়, যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ও আখিরাত দিবসের প্রতি বিশ্বাস করে, সে যেন মেহমানের মেহমানদারি করে এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ও আখিরাত দিবসের প্রতি বিশ্বাস করে, সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪৭৫; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪৭)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, মেহমানের সামনে যতক্ষণ দস্তরখান বিছানো থাকে, তা না উঠানো পর্যন্ত ফিরিশতারা তোমাদের ওপর রহমত বর্ষণ করতে থাকে। (তাবরানী, মুজামুল আওসাত, হাদিস : ৪৭২৯)