লাজুক স্বভাবের মানুষদের নিয়ে যা বলেছেন প্রিয়নবী সা.
মানুষের স্বভাব বৈচিত্র্য আল্লাহ তায়ালার দান। নিজ হাতে সৃষ্ট মানুষকে তিনি বিভিন্ন স্বভাব দিয়েছেন। কেউ অনেক বেশি চঞ্চল। কেউ গম্ভীর। কেউ আবার মিশুক প্রকৃতির। কেউ আবার লাজুক। মুখ খুলে কিছু বলতে লজ্জার পান। সব ধরনের মানুষ মিলিয়েই পরিবেশ, সমাজ।
স্বভাব বৈচিত্র্যের বিষয়টি মানুষকে অন্যের থেকে আলাদা করে। বিশেষ মযার্দামণ্ডিত করে অথবা নিন্দিত করে। সব স্বভাবের মানুষকেই রাসূল সা. মূল্যায়ন করেছেন। লাজুক স্বভাবের মানুষকে তিনি ঈমান রক্ষায় অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত গণ্য করেছেন।
বিজ্ঞাপন
এক হাদিসে সালিম ইবনে আবদুল্লাহ্ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) দেখলেন, এক ব্যক্তি তার ভাইকে লাজুক স্বভাবের জন্য তিরস্কার করছে, তিনি তাকে লক্ষ্য করে বললেন,
دعه فإن الحياء من الإيمان
‘তাকে ছেড়ে দাও। মনে রেখো লজ্জা ঈমানের অংশ। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)
আরও পড়ুন
আরেক হাদিসে হজরত ইমরান ইবনে হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন,
الْحَيَاءُ لاَ يَأْتِي إِلاَّ بِخَيْرٍ
‘লজ্জাশীলতা (শুধু) কল্যাণ ছাড়া আর কিছুই নিয়ে আসে না।’ (বাইহাকী)।
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেছেন,
كان رسول الله صلى الله عليه وسلم أشدَّ حياءً مِن العذراء في خدرها وكان إذا كره شيئًا عرفه الصَّحابة في وجهه
রাসূলুল্লাহ্ (সা.) কুমারী মেয়ের চেয়েও লাজুক ছিলেন। যখন তিনি কোনো কিছু অপছন্দ করতেন তখন আমরা তাঁর চেহারা দেখেই বুঝতে পারতাম। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)
সহিহ আল বুখারীতে ইবনু মাসউদ (রাঃ) বর্ণিত হাদিসে বলা হয়েছে, নবী করীম (সা.) বলেছেন,
إنّ مِمَّا أذرّك الناس من كلام اللبؤة الأولى إذا لَمْ تَسْتَح فاضنغ ما شئت
‘আগের নবীগণ মানুষকে শিষ্টাচার শেখানোর যেসব কথা বলতেন, তার প্রথম কথাই ছিলো- যদি তোমার শরমই না থাকে তাহলে তুমি যা খুশী তাই করতে পার। (সহিহ বুখারি)
লজ্জার আরবি হায়া। নির্লজ্জতাই (ফাহশা) বেহায়াপনা। হায়ার সমার্থক শালীনতা, শিষ্টাচার, আত্মসংযম, আত্মসম্মান, অস্বস্তিবোধ, লজ্জাশীলতা, সংকোচ, দ্বিধা ইত্যাদি। পারিভাষিক অর্থে লজ্জাশীলতা হচ্ছে মানবীয় এমন চরিত্র, যা নিকৃষ্ট, কদর্য কথা ও কর্ম পরিহারে অনুপ্রাণিত ও উৎসাহিত করে এবং যথাযোগ্য হকদারকে অবহেলা ও উপেক্ষা করতে বাধা প্রদান করে।
অর্থাৎ লজ্জাশীলতা হলো আল্লাহর অপরিসীম দয়া, অনুগ্রহ ও ইহসানের প্রতি লক্ষ করা এবং নিজের ত্রুটি ও অক্ষমতা সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করা। এ উভয়বিধ চিন্তার ফলে মানসপটে যে ভাবের উদয় হয়, তাকেই বলা হয় লজ্জাশীলতা। (রিয়াজুস সালেহিন)