আল্লাহ তায়ালা মানুষকে গুনাহ প্রবণ অন্তর দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি বান্দাকে পরীক্ষা করতে চেয়েছেন, নফস ও শয়তানের ধোঁকায় পড়ে মানুষ গুনাহের দিকে ধাবিত হয় নাকি প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে নিজেকে পবিত্র করে আল্লাহর বিধান পালনে আগ্রহ হয় তা পরখ করতে।

মানুষের পাপ প্রবণ স্বভাবের কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। এক হাদিসে রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জাহান্নামকে ঘিরে রাখা হয়েছে আকর্ষণীয় কাজকর্ম দিয়ে আর জান্নাতকে ঘিরে রাখা হয়েছে নিরস কাজকর্ম দিয়ে। (বুখারি, হাদিস,৭/২৪৫৫) 

তাই প্রত্যেকের উচিত প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে বেঁচে থাকা এবং কাঙ্খিত জান্নাত লাভের চেষ্টা করা। দুনিয়ায় চলার পথে কখনো নফস ও শয়তানের ধোঁকায় গুনাহ করে ফেলা স্বাভাবিক। তবে গুনাহের পর বারবার  একই পাপ করা অথবা তওবা না করা নিন্দনীয়। 

গুনাহের পর অনুতপ্ত হয়ে তওবা করা ও আল্লাহর দরবারে ফিরে যাওয়া একজন মুমিনের অন্যতম গুণ। আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে ক্ষমা করতে ভালোবাসেন।

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর কাছে তওবা (প্রত্যাবর্তন) কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। -(সূরা নূর, আয়াত : ৩১)

আরও বর্ণিত হয়েছে, ‘ তোমরা নিজেদের প্রতিপালকের নিকট (পাপের জন্য) ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তার কাছে তওবা (প্রত্যাবর্তন) কর। -(সূরা হূদ, আয়াত : ৩)

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন– ‘সেই মহান সত্তার কসম যার হাতে আমার জীবন! যদি তোমরা পাপ না কর, আল্লাহ তোমাদের নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে (তোমাদের পরিবর্তে) এমন এক জাতি আনয়ন করবেন, যারা পাপ করবে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনাও করবে।  আর আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন। -(মুসলিম, হাদিস : ২৭৪৮)

গুনাহের পর তওবা করে কোনো বান্দা রবের কাছে ফিরলে আল্লাহ তায়ালা গুনাহ নেকিতে পরিবর্তন করে দেন। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে  ‘যে তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের গুনাহসমূহ নেকি দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন।’ -(সুরা, ফুরকান, আয়াত : ৭০)

কেউ গুনাহের পর তার অপরাধ বুঝতে পারলে তার প্রতি সহনশীল হওয়া উচিত। এবং সে যেন তওবার ওপর অটল থাকতে পারে এ বিষয়ে তার সহযোগী হওয়া উচিত। কখনো খোঁটা দিয়ে তাকে তার পূর্বের গুনাহের জন্য লজ্জিত করা উচিত নয়। এটা কোনো মুমিনের গুণও নয়।

রাসূল সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি গুনাহ থেকে তওবা করে, সে নির্দোষ ব্যক্তির ন্যায়।’ (ইবনু মাজাহ, হাদিস :৪২৫০; মিশকাত হা/২৩৬৩)। 

রাসূল সা. আরেক হাদিসে বলেন, ‘কিয়ামতের দিন আল্লাহ তিন শ্রেণীর লোকের সাথে কথা বলবেন না, তাদের প্রতি করুণার দৃষ্টি দিবেন না, তাদের পরিশুদ্ধও করবেন না; বরং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। তারা হলো—

১. টাখনুর নীচে কাপড় পরিধানকারী। ২. খোটা দানকারী এবং ৩. মিথ্যা শপথের মাধ্যমে মাল বিক্রয়কারী।’ (মুসলিম, হাদিস :১০৬; মিশকাত, হাদিস : ২৭৯৫)।

আর কারো পেছনের বা গোপন গুনাহ খোঁজা ঠিক নয়। এটি দোষণীয় বিষয়। মহানবী সা. মানুষের দোষ-ত্রুটি খুঁজতে নিষেধ করেছেন এবং এর মন্দ পরিণতি বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘তোমরা দোষ-ত্রুটি তালাশ করবে না। কারণ যারা তাদের দোষ-ত্রুটি খুঁজে বেড়াবে আল্লাহও তাদের দোষ-ত্রুটি খুঁজবেন। আর আল্লাহ কারো দোষ-ত্রুটি তালাশ করলে তাকে তার ঘরের মধ্যেই অপদস্থ করে ছাড়বেন। (তিরমিজি, হাদিস : ২০৩২)

অন্য হাদিসে নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের গোপনীয় বিষয় গোপন রাখবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার গোপনীয় বিষয় গোপন রাখবেন। আর যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের গোপনীয় বিষয় ফাঁস করে দেবে, আল্লাহ তার গোপনীয় বিষয় ফাঁস করে দেবেন। এমনকি এই কারণে তাকে তার ঘরে পর্যন্ত অপদস্থ করবেন। (ইবনু মাজাহ : ২৫৪৬)