প্রতীকী ছবি

অজুর মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করা হয়। আল্লাহর সন্তুষ্টিও লাভ হয়। নামাজ আদায়ের জন্যও অজু করতে হয়। অজু না থাকলে নামাজ হয় না। তাই নামাজের জন্য অজু আবশ্যক। অজুতে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা জরুরি বিষয়। কোরআন ও সুন্নাহে বর্ণিত ধারাবাহিকতার বিপরীত অজু করা মাকরুহ। 

আলেমদের মতে, অজুতে ধারাবাহিকতার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ্‌ যে ধারাবাহিকতার সাথে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধোয়ার কথা উল্লেখ করেছেন সেভাবে অজু করা। আল্লাহ প্রথমে মুখমণ্ডল ধোয়ার কথা উল্লেখ করেছেন, তারপর দু’হাত, তারপর মাথা মাসেহ করা এবং শেষে পা ধৌত করা। 

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা নামাজে দণ্ডায়মান হবে, তখন (তার পূর্বে বে-অজু থাকলে অজু করার জন্য) তোমাদের মুখমণ্ডল ও হস্তদ্বয় কনুই সমেত ধৌত কর এবং মাথা মাসাহ কর ও পদযুগল টাখনু সমেত ধৌত কর।’ (মায়েদাহ, ৫/৬)

অজুতে ধারাবাহিকতা রক্ষা করে এক অঙ্গ শুকিয়ে যাওয়ার আগেই অন্য অঙ্গ ধোয়া উচিত। তবে যদি কোনো কারণে এক অঙ্গ শুকিয়ে যাওয়ার পর অন্য অঙ্গ ধোয়া হয়। তাহলে এর মাধ্যমেও অজু হয়ে যাবে। 

আলেমদের মতে, অজুর সময় কোনো কারণে বিলম্ব হলে ও এজন্য ধুয়ে ফেলা অঙ্গ শুকিয়ে যাওয়ার পর আবার নতুন করে অজু শুরু না করে পরবর্তী অঙ্গগুলো ধুয়ে নিলে অজু হয়ে যাবে। তবে অজুর ক্ষেত্রে সুন্নত হলো এক অঙ্গ শুকানোর আগেই অন্য অঙ্গ ধৌত করা। তাই বিনা কারণে এমনটি করা যাবে না। (বাদায়েউস সানায়ে : ১/১১২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৮)

অজু ভাঙার কারণ কয়টি ও কী কী তা জেনে রাখা অত্যন্ত জরুরি। এখানে তা সংক্ষেপে ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করা হলো। মৌলিকভাবে অজু ভঙ্গের কারণ ৭টি। যথাক্রমে—

এক. পায়খানা ও পেশাবের রাস্তা দিয়ে কোনো কিছু বের হওয়া

যেমন বায়ু, পেশাব-পায়খানা, পোকা ইত্যাদি। (হেদায়া, হাদিস : ১/৭)

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের কেউ প্রসাব-পায়খানা সেরে আসলে (নামাজ পড়তে পবিত্রতা অর্জন করে নাও)।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ০৬ )

আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, নিশ্চয় রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘শরীর থেকে যা কিছু বের হয়, তার কারণে অজু ভেঙে যায়...।’ (সুনানে কুবরা লিলবায়হাকি, হাদিস : ৫৬৮)

দুই. রক্ত, পূঁজ, বা পানি বের হয়ে গড়িয়ে পড়া। (হেদায়া : ১/১০)

আবদুল্লাহ বিন উমর (রা.)-এর যখন নাক দিয়ে রক্ত ঝড়তো, তখন তিনি ফিরে গিয়ে অজু করে নিতেন। (মুয়াত্তা মালিক, হাদিস : ১১০)

তিন. মুখ ভরে বমি করা

আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তির বমি হয়, অথবা নাক দিয়ে রক্ত ঝরে, বা মজি (সহবারের আগে বের হওয়া সাদা পানি) বের হয়, তাহলে ফিরে গিয়ে অজু করে নেবে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১২২১)

চার. থুথুর সঙ্গে রক্তের ভাগ সমান বা বেশি হওয়া

হাসান বসরি রহ. বলেন, যে ব্যক্তি তার থুথুতে রক্ত দেখে তাহলে থুথুতে রক্ত প্রবল না হলে তার ওপর অজু করা আবশ্যক হয় না। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস : ১৩৩০)

পাঁচ. চিৎ বা কাত হয়ে হেলান দিয়ে ঘুম যাওয়া

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সা.) বলেন, ‘সিজদা অবস্থায় ঘুমালে অজু ভঙ্গ হয় না, তবে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লে ভেঙ্গে যাবে, কেননা চিৎ বা কাৎ হয়ে শুয়ে পড়লে শরীর ঢিলে হয়ে যায়।’ [ফলে বাতকর্ম হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে] (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৩১৫; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২০২)

ছয়. পাগল, মাতাল বা অচেতন হলে

হাম্মাদ (রহ.) বলেন, যখন পাগল ব্যক্তি সুস্থ্ হয়, তখন নামাজের জন্য তার অজু করতে হবে। (মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস : ৪৯৩)

সাত. নামাজে উচ্চস্বরে হাসি দিলে

ইমরান বিন হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নামাজে উচ্চস্বরে হাসে, সে ব্যক্তি অজু ও নামাজ পুনরায় আদায় করবে। হাসান বিন কুতাইবা (রহ.) বলেন, যখন কোনো ব্যক্তি উচ্চস্বরে হাসি দেয়, সে ব্যক্তি অজু ও নামাজ পুনরায় আদায় করবে।’ (সুনানে দারা কুতনি, হাদিস : ৬১২)