অযোগ্য লোকের হাতে দায়িত্ব চলে যাওয়া নিয়ে যা বলেছেন মহানবী সা.
যোগ্যতার ভিত্তিতে মানুষের কর্মসংস্থান বা দায়িত্ব লাভ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যোগ্যতার ভিত্তিতে কোনো ব্যক্তিকে মূল্যায়ন না করলে সবাইকে ভুগতে হয়, কষ্ট করতে হয়। বর্তমানে যোগ্য ব্যক্তি তার যথাস্থান না পাওয়ার আক্ষেপ ও অভিযোগ অনেক বেশি দেখতে পাওয়া যায়। এ বিষয়টিকে পরিবেশ, পরিস্থিতির পারিপাশ্বির্কতা হিসেবে দেখা হলেও রাসূল সা. একে কিছুটা ভিন্ন চোখে দেখেছেন এবং বর্ণনা করেছেন। তাঁর বর্ণনা অনুয়াযী এটি কিয়ামতের আলামত।
কোনোভাবে অযোগ্য লোকের হাতে দায়িত্ব যাওয়াকে কিয়ামতের আলামত বলে অভিহিত করে রাসূল সা. বলেছেন, এমন পরিস্থিতি দেখা দিলে কিয়ামতের জন্য অপেক্ষা করো তোমরা।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে এক হাদিসে আবু হুরায়রা রা. বলেন, একদিন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু লোকের এক মজলিসে হাদিস বয়ান করছিলেন, এমন সময় এক বেদুঈন এসে তাঁকে জিজ্ঞাসা করল, ’কিয়ামত কখন হবে?’ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বয়ান করতেই থাকলেন।
বয়ান শেষ করে তিনি বললেন, কিয়ামত সম্পর্কে প্রশ্নকারী কোথায়? লোকটি বলল, এই যে আমি, হে আল্লাহর রাসূল!’ তিনি (রাসূল সা.) বললেন, যখন আমানত নষ্ট করা হবে, তখন কিয়ামতের অপেক্ষা কর। লোকটি বলল, ’আমানত কিভাবে নষ্ট হবে?’ তিনি বললেন, যখন কোন অযোগ্য লোকের হাতে নেতৃত্ব তুলে দেওয়া হবে, তখন কিয়ামতের অপেক্ষা কর। (বুখারি, হাদিস : ৬৪৯৬)
আরও পড়ুন
আরেক হাদিসে আবু হুরায়রা রা. থেকে বণির্ত হয়েছে, যখন উলঙ্গ কাঙ্গাল এবং মূক ও বধিরগণকে, অর্থাৎ- অযোগ্য লোকেদেরকে দেশের রাজা বা শাসক হতে দেখবে। সে পাঁচটি বিষয় কিয়ামতের (কিয়ামতের) আলামাতের অন্তর্গত, যা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না।
তারপর তিনি প্রমাণ হিসেবে কোরআনের এ আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন,
اِنَّ اللهَ عِنْدَه’ عِلْمُ السَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ
অর্থাৎ- আল্লাহ কিয়ামত সম্পর্কে ভালো জানেন কবে তা সংঘটিত হবে? কিভাবে হবে? বৃষ্টি তিনিই বর্ষিয়ে থাকেন। (সূরা লুকমান, আয়াত : ৩৪)। (বুখারি, হাদিস : ৫০, মুসলিম, হাদিস : ১০, ইবনু মাজাহ, হাদিস : ৬৪, ৪০৪৪)
কিয়ামত
পৃথিবীর ধ্বংসের দিন বা ক্ষণকে কিয়ামত বলা হয়। কিয়ামত সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে—
‘যখন শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে- একটি মাত্র ফুঁক; তখন জমিন ও পর্বতমালাকে উড়ানো হবে। মাত্র একটি আঘাতে সব চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে। ফলে সে দিন মহাপ্রলয় সংঘটিত হবে। আসমান বিদীর্ণ হয়ে যাবে। ফলে সেদিন তা হয়ে যাবে দুর্বল বিক্ষিপ্ত। ফেরেশতারা আসমানের বিভিন্ন প্রান্তে থাকবে। সেদিন তোমার রবের আরশকে আটজন ফেরেশতা তাদের ঊর্ধ্বে বহন করবে। সেদিন তোমাদেরকে উপস্থিত করা হবে। তোমাদের কোনো গোপনীয়তাই গোপন থাকবে না। (সূরা আল হাক্কাহ, আয়াত : ১৩-১৮)।
কেয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার আগে বেশ কিছু আলামত প্রকাশ পাবে। যার মাধ্যমে বোঝা যাবে যে, কেয়ামত নিকটবর্তী। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, তারা শুধু এই অপেক্ষাই করছে যে, কেয়ামত অকস্মাৎ তাদের কাছে এসে পড়ুক। বস্তুত কেয়ামতের লক্ষণসমূহ তো এসেই পড়েছে। সুতরাং কেয়ামত এসে পড়লে তারা উপদেশ গ্রহণ করবে কেমন করে?’ (সূরা মুহাম্মদ, আয়াত : ১৮)
কিয়ামতের আলামত নিয়ে হাদিসে বিস্তারিত আলোচনা করছেন রাসূল সা.। শুধু একটি বা নির্দিষ্ট কোনো আলামত প্রকাশের মাধ্যমে কিয়ামত সংঘটিত হবে না। বরং একাধিক আলামত প্রকাশের পর কিয়ামত সংঘটিত হবে। কিয়ামতের আলামত বিষয়ে অনেক আলোচনা রয়েছে।